কাজী ফরিদ: দেড়শ’ কোটি টাকার নির্বাচনী প্রশিক্ষণে কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ব্যক্তিগত আয় রাতারাতি বেড়েছে। ব্যয়ে আছে অনিয়ম, অস্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার অভাব। তার ওপর প্রশিক্ষণের মান ও ফলও প্রশ্নবিদ্ধ, কারণ ভোটের ফল প্রকাশে অস্বাভাবিক দীর্ঘসূত্রতা। নির্বাচনী প্রশিক্ষণের অস্বাভাবিক ব্যয় বৃদ্ধি, অনিয়ম, দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতা নিয়ে বৈশাখীর নয় মাসব্যাপী অনুসন্ধানকালে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা কেউ তথ্য দেয়া তো দূরের কথা অসঙ্গতিগুলোর জবাবও এড়িয়ে যান। কারা গোপনে নথি ও তথ্য দিয়েছে বারবার জানতে চান। অনুসন্ধানকালে কেউ কেউ প্রতিবেদককে হুমকি ও প্রলোভন দেখিয়ে থামানোর চেষ্টা করেছেন। ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের আজ সপ্তম ও শেষ পর্ব।
নির্বাচনী প্রশিক্ষণের নামে আসলে কী হয়েছে তা ধারাবহিক প্রতিবেদনের প্রথম পর্বে প্রচারিত গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা একজন কর্মকর্তার কথা বলে দিয়েছে।
জনগণের বিপুল টাকা নিজেদের পকেটে ভরেও কী প্রশিক্ষণ ঠিক মতো হয়েছে? এই নির্বাচনী প্রশিক্ষণের দৃশ্য গেল ফেব্রুয়ারির। নয় মাসব্যাপী অনুসন্ধানের সময় ফেব্রুয়ারিতে উপজেলা নির্বাচনের প্রশিক্ষণ হয় ঢাকায়। এক সকালে কমিশনের সর্বোচ্চ কর্তাদের উপস্থিতিতে একটি প্রশিক্ষণের ঘণ্টাব্যাপী উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এটা। তারপর ক্লাস শুরু হবার কথা ছিল। ক্লাসের বদলে চলে প্রশিক্ষণার্থীদের আড্ডা। দুপুর পর্যন্ত কোন ক্লাস শুরু হতে দেখা যায়নি। একজন প্রশিক্ষণার্থী রেকর্ড না করার শর্তে বলেন, দুপুরের খাবার আর দিনের সম্মানীর টাকা নিয়ে চলে যাবেন। আরেকজন প্রশিক্ষণার্থী পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ক্যামেরায় সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেন এই প্রশিক্ষণ তার জন্য নতুন কিছু নয়।
অনুসন্ধানকালে মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনী কার্যালয়ের তথ্য সহায়তা মেলেনি। সাক্ষাৎকার দিয়ে বিপদে পরার ভয়ে এড়ান। ঢাকায় তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চেয়েও পাওয়া যায়নি নির্বাচন কমিশন থেকে। নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে যাবার পরামর্শ দেয়, সেখানে সহযোগিতা করেনি।
অসহযোগিতার পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আলমগীর এই প্রতিবেদককে প্রতিবেদনগুলো করা থেকে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করেন।
কোন কোন কর্মকর্তা হুমকি ও প্রলোভনে অনুসন্ধান থামানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেন।
নির্বাচনে ট্যাব ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল ঢাকায় ও পনের উপজেলার সকল পর্যায়ের নির্বাচনী কর্মকর্তাদের। মাত্র দুটি উপজেলা ট্যাব ব্যবহারে দ্রুত ফল পাঠাতে সক্ষম হয়, বাকী তের উপজেলা হয় ব্যর্থ।
অন্যদিকে গত ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রভিত্তিক ফল প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে গত মাসে, অর্থাৎ সাত মাস লেগেছে যা ভোটের একদিনের মধ্যেই হবার কথা। সংসদ নির্বাচনে ২১২টি ভোট কেন্দ্রে অবিশ্বাস্য শতভাগ ভোট আরেক কেলেংকারি। এটাকে মাঠ পর্যায়ের প্রশিক্ষিত নির্বাচনী কর্মকর্তাদের অসতর্কতা ও অব্যবস্থাপনা হিসবে বিবেচনা করছেন নির্বাচন কমিশন, যদিও এতে কমিশন ও সরকার বেজায় বিব্রত।
আপডেট এবং সর্বশেষ খবর পেতে সাবস্ক্রাইব করুন ।।
0 মন্তব্য
আপনার মতামত প্রকাশ করুন