গ্যাস-বিদ্যুতের দাম সমন্বয়ের ক্ষমতা সরকারের হাতে

প্রকাশিত: ২৯-০১-২০২৩ ১৯:১৩

আপডেট: ২৯-০১-২০২৩ ২২:২১

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশেষ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম সরাসরি বাড়ানো বা কমানোর ক্ষমতা সরকারের হাতে রেখে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন সংশোধন বিল-২০২৩ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। আজ (রোববার) বিকেলে স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে স্থায়ী কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। 

বিলটির ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, প্রাইভেট পাওয়ার প্ল্যান্ট ও কুইক রেন্টাল থাকলে দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ঘাটতি কমবে না। জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী জানান, ২০০৯ সালে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য শুরু হলেও এখন তা আর নেই। এদিন, বিলটির ওপর আনা সংশোধন প্রস্তাব নাকচ হয়ে যাওয়ায় সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেন সিলেট-২ আসনের সদস্য মোকাব্বির খান। পরে কণ্ঠভোটে বিলটি সর্বসম্মতভাবে পাস হয়।

সরকারকে প্রজ্ঞাপন জারি করে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও তেলের দাম বাড়ানো বা কমানোর ক্ষমতা দিয়ে পাস হয়েছে ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) আইন, ২০২৩’ বিল। বর্তমান প্রক্রিয়ায় ট্যারিফ কমিশনের মাধ্যমে গণশুনানি করে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ট্যারিফ সমন্বয় (মূল্যবৃদ্ধি) এবং প্রচলিত আইনে বর্ণিত প্রক্রিয়ায় মূল্য নির্ধারণে সময় বেশি লাগে বলে দ্রততম সময়ে ট্যারিফ সমন্বয়ের লক্ষ্যে সরকারের ক্ষমতা সংরক্ষণের জন্য আইনটি সংশোধন করা হয়েছে।

এদিকে বিলটিকে জনস্বার্থবিরোধী উল্লেখ করে বিলটি পাসের প্রতিবাদে গণফোরামের মোকাব্বির খান  সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেন। মোকাব্বির খান বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতিবাজ ও মুনাফাখোরদের সুরক্ষা দিতে ও আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়ানের জন্য জনস্বার্থবিরোধী এ বিলটি পাস করানো হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন। একই সঙ্গে এর প্রতিবাদে নিজের উত্থাপিত সংশোধনীগুলো প্রত্যাহার করে নেন তিনি।

মোকাব্বির খান বলেন, চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনি। বঙ্গবন্ধু প্রায়ই সে কথা বলতেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের সুরক্ষা দিতে একবার ইনমেনিটি দেওয়া হয়েছিল। আজ দুর্নীতিবাজ ও মুনাফাখোরদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য ইনডেমনিটিসহ বিলটি আনা হয়েছে। এর ফলে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানির দাম আরও বাড়বে।

এর আগে জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব তুলে মুকাব্বির খান বলেন, বিদ্যুতের কালো আইন তুলে দিয়ে দেখেন দুর্নীতিবাজরা কোথায় পালায়? বিদ্যুতের কালো আইন হলো ওদের কর্মকাণ্ডকে দেওয়া ইনডেমনিটি। আশা করি, তিনি এটা প্রত্যাহার করে নেবেন।

বিলে বিদ্যমান আইনের ৩৪ ধারার (ক) উপ-ধারা (৩) এর সংশোধনীতে বলা হয়েছে, তবে শর্ত থাকে যে, কমিশন কর্তৃক প্রবিধানমালা প্রণয়ন না করা পর্যন্ত সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, ট্যারিফ নির্ধারণ, পুনর্র্নিধারণ বা সমন্বয় করতে পারবে।

এছাড়া বিলের (৩৪) ক ধারা সংশোধন করে ‘ট্যারিফ নির্ধারণ, পুনর্র্নিধারণ বা সমন্বয়ে সরকারের ক্ষমতা: সংশোজন করে বলা হয়েছে, এ আইনের অন্যান্য বিধানে যা কিছুই থাকুক না কেন, বিশেষ ক্ষেত্রে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, ভর্তুকি সমন্বয়ের লক্ষ্যে, জনস্বার্থে, কৃষি, শিল্প, সার, ব্যবসা-বাণিজ্য ও গৃহস্থালি কাজের চাহিদা অনুযায়ী এনার্জির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করিবার লক্ষ্যে উহাদের উৎপাদন বৃদ্ধি, সঞ্চালন, পরিবহন ও বিপণনের নিমিত্ত দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার্থে বিদ্যুৎ উৎপাদন, এনার্জি সঞ্চালন, মজুতকরণ, বিপণন, সরবরাহ, বিতরণ এবং ভোক্তা পর্যায়ে ট্যারিফ নির্ধারণ, পুনর্র্নিধারণ বা সমন্বয় করিতে পারবে।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতি বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও তেলের ট্যারিফ সমন্বয় করা প্রয়োজন। অর্থনীতির গতিকে চলমান রাখিবার স্বার্থে নিয়মিত ও দ্রুততম সময়ে ট্যারিফ সমন্বয়ের লক্ষ্যে বিইআরসির পাশাপাশি সরকারের ক্ষমতা সংরক্ষণের জন্য আইনটি সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। বিষয়টি জরুরি বিবেচনায়, বর্ণিত বিষয়ে আশু ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান রয়েছে।

GM/sharif