ফাহিম মোনায়েম: পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনায়। আগের পরিকল্পনার মূল লক্ষ্যই ছিল নতুন কেন্দ্র নির্মাণ ও বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানো। কিন্তু চাহিদা সমানতালে না বাড়ায় উৎপাদনের সক্ষমতা পুরোপুরি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আবার বাড়তি সক্ষমতা ধরে রাখতে বাড়তি ব্যয়ও করতে হচ্ছে সরকারকে। এসব আমলে নিয়েই মহাপরিকল্পনা সংশোধনের কাজ করছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী বিভাগ। এক্ষেত্রে বাস্তবতা বিবেচনায় রাখা ও মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ২০০৮ সালে, সংসদ নির্বাচনের সময় ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো আওয়ামী লীগ, তা বাস্তবায়নে ২০১০ সালে উদ্যোগ নেয়া হয়। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় অনেকগুলো বিদ্যুত কেন্দ্র। তবে উৎপাদিত বিদ্যুৎ গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার উদ্যোগ ছিলো না সমান তালে। ফলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিদ্যুত উৎপাদনের সক্ষমতা তৈরি হলেও, তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ২০১০ সালে বিদ্যুত উৎপাদনের প্রথম মহাপরিকল্পনা তৈরির পর দুই দফা সংশোধন শেষে ২০১৬ সালে তা চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু চাহিদা আর উৎপাদনের মধ্যে ভারসাম্য নিশ্চিত করা যায়নি। ২০২১ সালে দৈনিক সর্বনিু চাহিদা নির্ধারণ করা হয় সাড়ে ১৫ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু এবছরে দৈনিক সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিলো ১৩ হাজার ৭৯২ মেগাওয়াট। অথচ, ক্যাপটিভ বাদ দিলেও অন্যান্য বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি। সে হিসেবে অলস পড়ে থাকছে সক্ষমতার প্রায় ৪০ শতাংশ। এই সক্ষমতা বজায় রাখতে সরকারকে বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। করোনা অতিমারির কারণে দীর্ঘদিন অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ও বিনিয়োগ থমকে থাকায় বিদ্যুতের চাহিদা বাড়েনি প্রত্যাশা অনুযায়ী। কিন্তু ঠিকই এগিয়েছে নতুন কেন্দ্র নির্মাণের কাজ। ফলে বিদ্যুত উৎপাদনের সক্ষমতা আরও বাড়ছে। এই অবস্থায় মহাপরিকল্পনা সংশোধনের কাজ শুরু হয়েছে। সক্ষমতা বিবেচনায় রেখে বিদ্যুৎ ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে ভারসাম্য বজায় রাখার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী বিভাগ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহাপরিকল্পনা সংশোধনের ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ের পরামর্শ ও অভিজ্ঞতা যেন কাজে লাগানো হয়। বাস্তবসম্মত চাহিদা নির্ধারণের পরামর্শও দিলেন তারা। গত ১২ বছরে বিদ্যুত উৎপাদনে সরকার দারুণ সাফল্য অর্জন করলেও সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থা নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে। নতুন মহাপরিকল্পনায় সেই সংকট যেন দূর হয়, এই প্রত্যাশা বিশেষজ্ঞদের।
/admiin