
বাংলাদেশের পাটপণ্য রপ্তানিতে অ্যান্টি-ডাম্পিং বা প্রতিকারমূলক শুল্ক বসাতে তদন্ত করছে ভারত। আমদানির ওপর কাউন্টারভেলিং ডিউটি বা প্রতিকারমূলক শুল্ক বসাতে তদন্ত করছে। অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে পাঠানো প্রশ্নমালার আনুষ্ঠানিক উত্তর পাঠানোর সময়সীমা ২১ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য বিভাগ।
শুল্কারোপের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য সুপারিশ করেছে ভারতীয় জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন (আইজেএমএ)। সংগঠনটি দাবি করছে, পাটপণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ সরকারের দেয়া ভর্তুকি ভারতের ব্যবসায়ীদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পাটপণ্যের ওপর কাউন্টারভেলিং শুল্ক আরোপের তদন্ত শুরু করা হলেও ২০১৮ সালে বাংলাদেশি একই পণ্যের ওপর অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে ভারত সরকার। ২০১৭ সালে পাঁচ বছরের জন্য এ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। ২০২৩ সালে সেটি আরও পাঁচ বছরের জন্য বাড়ানো হয়। তখন বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পাটপণ্যে ভিন্ন ভিন্ন হারে অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপ করা হয়।
গত মার্চে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য সচিব পর্যায়ে বৈঠকে শুল্ক তুলে দেয়ার জন্য অনুরোধ করে বাংলাদেশ। এর আগেও একাধিক বৈঠকে এ প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হয়। তবে ভারতের কাছ থেকে কখনোই এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি।
এদিকে ভারতীয় শিল্প মালিকদের অনুরোধে ডিজিটিআর বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিকৃত পাটপণ্যের ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্কারোপের মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বৃদ্ধির জন্য সানসেট রিভিউ শুরু করেছে। রিভিউয়ের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা ভারতের নির্ধারিত প্রশ্নের জবাব পাঠিয়েছে।
ভারতের বাণিজ্য বিভাগের উপপরিচালক মনোজ কুমার গত বুধবার এ সংক্রান্ত এক নোটিশে সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়টি জানান। বাংলাদেশের পাশাপাশি একই তদন্ত নেপালের বিরুদ্ধেও হচ্ছে।
নোটিশে বলা হয়, গত ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ ও নেপালকে ১৪ নভেম্বরের মধ্যে অভিযোগ বিষয়ে প্রশ্নমালার উত্তর পাঠাতে বলা হয়েছিল। তবে দেশগুলোর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সেই সময়সীমা ২১ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। নতুন করে আর সময় বাড়ানো হবে না বলে জানানো হয় নোটিশে।
ভারতীয় এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্কারোপের পরও ভারতে বাংলাদেশের পাটপণ্য রপ্তানি বাড়ছে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ‘বাংলাদেশের পাটপণ্য রপ্তানিতে অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক বহাল থাকবে কি না বিষয়টি ভারত সরকার বিবেচনা করছে। তবে সে সময় (২০১৭ সালে) যদি ভারত সরকার বাংলাদেশের পাটপণ্য রপ্তানির ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্কারোপ না করত তাহলে দেশটির পাটশিল্প এতদিনে ধ্বংস হয়ে যেত।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ গত ২১ আগস্ট ই–মেইল পাঠিয়ে ভারত ২ সেপ্টেম্বর পরামর্শ সভায় বসার আহ্বান জানিয়েছিল। ২৯ আগস্ট ভারতকে এক ই–মেইল বার্তায় বাংলাদেশ জানিয়েছিল পরামর্শ সভার প্রস্তুতির জন্য ৬০ দিন সময় দরকার। ভারত তার জবাব দেয়নি। পরবর্তীতে অভিযোগ তদন্তে ভারতের প্রশ্নমালা পূরণ করতে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন একটি ডেস্ক চালু করে।
জানা গেছে, বাংলাদেশের অভিযুক্ত রপ্তানিকারকের দেয়া ওই জবাবের পর ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দুই সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে আসে। তারা যে ২৬টি প্রতিষ্ঠান তথ্য দিয়েছিল তাদের মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে। দু’টি পাটকলও পরিদর্শন করা হয়।
ওই সফরের সময় তারা বাংলাদেশ জুট গুডস অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয়ে দেশের বিভিন্ন রপ্তানিকারকদের সঙ্গে বৈঠকও করেন। তখন পর্যবেক্ষক হিসেবে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। পরিদর্শন শেষে এ সংক্রান্ত অভিযোগে শুনানি অনুষ্ঠিত হয় দিল্লিতে। তখনই বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায় যে বাংলাদেশের ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক বসানো হচ্ছে।
ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাটপণ্যে ভর্তুকি দেওয়াবিষয়ক ১২টি অভিযোগ তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলগুলো (ইপিজেড) ও অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় (ইজেড) পাটপণ্যের ওপর নানা ধরনের ভর্তুকি দেওয়া হয়। যে কারণে ভারতের ব্যবসায়ীরা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।
তদন্তের নোটিশে বলা হয়, বাংলাদেশের ইপিজেডে অবস্থিত কারখানাগুলো লভ্যাংশ কর থেকে অব্যাহতি পায় এবং বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে বিদ্যুৎ পায়। আর ইজেডের কারখানাগুলো ১০ বছরের কর অবকাশ ও কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক অব্যাহতি পায়। এ ছাড়া নগদ সহায়তা, মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক ও ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়।
মন্তব্য করুন