
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে আজ শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় নাট্যশিল্পী এরশাদ হাসানের একক অভিনীত ‘ভাসানে উজান’ নাটকের উদ্বোধনী প্রদর্শনী হতে যাচ্ছে। প্রদর্শনী উপলক্ষে দীর্ঘদিন পর শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চে হাজির হচ্ছেন একক নাটকের পথিকৃৎ, মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার। বিবেকানন্দ থিয়েটার প্রযোজিত ‘ভাসানে উজান’ নাটকের মঞ্চায়ন উদ্বোধনী আয়োজনে তিনিই মধ্যমণি। ‘ভাসানে উজান’ নাটকের মঞ্চায়ন উদ্বোধন করবেন কিংবদন্তী এই নাট্য ব্যক্তিত্ব।
দেশের তারুণ্যনির্ভর সক্রিয় নাট্যসংগঠন বিবেকানন্দ থিয়েটারের ২৫তম প্রযোজনা ‘ভাসানে উজান’। দস্তয়ভস্কির ছোটগল্প ‘দ্য জেন্টেল স্পিরিট’ অবলম্বনে নাট্যকার অপূর্ব কুমার কুণ্ডুর নাট্যরূপে নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন শুভাশীষ দত্ত তন্ময়। নাট্যশিল্পী মো. এরশাদ হাসানের একক অভিনীত নাটকটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী আজ ।
‘ভাসানে উজান’ নাটকটির নির্মাণ নেপথ্যে মঞ্চ ও আলোয় পলাশ হেনড্রী সেন, সংগীতে হামিদুর রহমান পাপ্পু, পোশাকে এনাম তারা সাকি, দ্রব্য সামগ্রী ফজলে রাব্বি সুকর্ণ, কোরিওগ্রাফিতে রবিন বসাক এবং রূপসজ্জায় শুভাশীষ দত্ত তন্ময়। নাটকটির নির্মাণ নেপথ্যে মঞ্চ ও আলোয় পলাশ হেন্ড্রি সেন চেষ্টা করেছেন দেখার মাঝে অদেখা আবার অদেখার মাঝে দেখাকে দৃশ্যমান করে তুলতে। এক্ষেত্রে বিন্দু পরিমাণ উপকরণে সিন্ধুসম দৃশ্যকল্প ফুটিয়ে তোলায় তার আন্তরিক প্রচেষ্টা। সংগীতে হামিদুর রহমান পাপ্পু সুরের মূর্ছনায় মনের গহীনে আলো ফেলেছেন।
পোশাকে এনাম তারা সাকি আশরাফ বোয়ারীর এন্টিক এবং আধুনিক সত্তার রসায়ন নয়ানাভিরাম করে ফুটিয়ে তুলবে নাটকটিকে। কোরিওগ্রাফিতে রবিন বসাক থিয়েটার এবং যাত্রার অভিনয় আঙিকের ফিউশানের উপর জোর দিয়েছেন। রূপসজ্জায় নাটকের নির্দেশক শুভাশীষ দত্ত তন্ময় চেষ্টা করেছেন আশরাফ বোয়ারী মানুষটির মনের চেহারাটাকে রং তুলি দিয়ে আঁকতে।
‘ভাসানে উজান’ নাটকের দেখা যায় বর্তমানে চা বাগানের একজন বন্ধকের কারবারি আশরাফ বোয়ারী। অসংখ্য কাস্টমারের ভীড়ে একজন কাস্টমার সাবরিনা। বন্ধকের জিনিস আনা নেওয়ার মাঝে নিজের কণ্ঠকময় জীবন থেকে পরিত্রাণ পাওয়া, নেশাখোর ও নারী লোলুপ খন্দকার জব্বারের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া, দরিদ্র রূপ ব্যাধী থেকে একটু স্বচ্ছল জীবনের আশায় সাবরিনা সুরক্ষা চায় বন্দকের কারবারি আশরাফ বোয়ারীর কাছে। আশরাফ বোয়ারী নানান সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র সাবরিনাকে সুরক্ষা দিতে সমস্ত প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে সামাজিক স্বীকৃতি নিয়ে বিয়ে করে সাবরিনাকে এবং সাবরিনা ব্যক্তি জীবনে পায় সুরক্ষা। কিন্তু খরা কেটে বানের ডাক আসলে নদী উপচিয়ে যেমন দুকূল প্লাবিত হয়ে খাল-বিল-হাওড় সব তলিয়ে দেয় তেমনি উত্তলা হয় সাবরিনা। ফলে ভুল বোঝাবুঝি হয় আশরাফ- সাবরিনা দম্পত্তির মাঝে। অতীত ভুলে যাওয়ার মোহ, অহমিকার ক্রোধ আর আত্মগ্লানির অনুশোচনায় এক সময় আত্মহত্যা করে বসে সাবরিনা। ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকা মৃত স্ত্রী সাবরিনার পাশে বসে গভীর রাতে বিপন্ন- নি:স্ব-অসহায় স্বামী আশরাফ বোয়ারী আপন মনে কথায় কথায় হিসাব-বেহিসাবীর কথার নকশা বুনন করে চলে। সে শেষ পর্যন্ত উত্তর মেলাতে পারে না যে, একজন মানুষ সত্যিকারে ভালো হয়ে শেষ পর্যন্ত কি ভালো থাকতে পারে! এই অমীমাংসিত উত্তর খোঁজার মধ্যে দিয়ে শেষ হয় নাটক ভাসানে উজান।হৃদয়ের রক্তক্ষরণের নাটক ‘ভাসানে উজান’।
নাট্যরূপকার অপূর্ব কুমার কুন্ডু বলেন, লিওতলস্তয়, চেখভ থেকে গোর্কী প্রায় সকলেই চেষ্টা করেছেন মানব মনের অন্তর্জগতকে সর্ব সম্মুখে তুলে ধরতে তাদের সৃজিত আপন সাহিত্য কর্মে। দস্তায়ভস্কি এক্ষেত্রে আরও তীক্ষ্ণ ও ধারালো। সমষ্টির নিষ্পেষণ, পরিত্যাক্তকে কতটা একাকিত্বে পৌঁছে দেয় যা প্রায় অর্ধমৃতের মতো যন্ত্রণার-কষ্টের এবং সান্ত্বনাহীনতার তা দৃশ্যমান যেমন দস্তয়ভস্কির ছোট গল্পে তেমনই ‘ভাসানে উজান’ নাট্যরূপে। আশা করি, নিজের মাঝে পথ হারিয়ে পথ খুঁজে ফেরার নাটক ভাসানে উজান দর্শক -শ্রোতাকে নতুন ভাবনায় ভাবাবে।
ভাসানে উজান নাটকের নির্দেশক শুভাশীষ দত্ত তন্ময় বলেন, নাট্যকার অপূর্ব কুমার কুন্ডু’র রচনায় বিশ্বজনীনতা ইতোমধ্যে প্রকাশিত। এবারে দস্তয়ভস্কির ছোট গল্পের নাট্যরূপ এক নতুনত্ব। ভালো মানুষ হয়ে শেষ পর্যন্ত ভালো থাকা যায় কিনা এ প্রশ্ন এক নতুন বাস্তবতা। সেই বাস্তবতাকে মঞ্চমায়ায় ফুটিয়ে তুলতে আমরা উদ্বোধনী মঞ্চায়নের দ্বারপ্রান্তে। ‘ভাসানে উজান’ নাটকের জন্য সবার সহযোগিতা এবং শুভ কামনা আশা করছি।
নাটকের অভিনেতা মো. এরশাদ হাসান বলেন-একজন নাটকের মানুষ, একজন বন্ধকের কারবারি, একজন প্রেমিক মানুষ,একজন ন্যায়বান মানুষের জীবনে নেমে আসা নিয়তির মতো সম্পর্কের নির্মম আঘাত প্রভৃতি মিলেমিশে এক কন্টকৃত পথে পথ চলার মানুষ আশরাফ বোয়ারী। লেয়ারে লেয়ারে তার যে জীবন বাস্তবতা এবং বহুমাত্রিক জীবন বোধের উপলব্ধি তা মঞ্চ মায়ায় ফুটিয়ে তোলা সত্যিকার অর্থেই যে কোন অভিনেতার জন্যে দূরহ ও কঠিন। আমার তিন যুগের অভিনয় জীবনে ভাসানে উজান নাটকের আশরাফ বোয়ারী চরিত্রে রূপদান আমার অভিনয় জীবনে সেরা চ্যালেন্জিং। নাট্যকার অপূর্ব দা'র সংলাপের মাধকতা আর নির্দেশক শুভাশীষ দত্ত তন্ময় দা'র সূক্ষ্মাতি সূক্ষ দিকনির্দেশনা আর আমার অভিনয় জীবন অভিজ্ঞতা নিয়ে আপ্রান চেষ্টা করছি আশরাফ বোয়ারী চরিত্রটিকে মঞ্চের ক্যানভাসে জীবন্তভাবে পোট্রেট করতে।চরিত্রের আত্ম-জিজ্ঞাসায় আমরাও দর্শক শ্রোতা একসাথে মঞ্চ মায়ায় উত্তর খুঁজে চলবো,সত্যিই কি ভালো হয়ে ভালো থাকা যায়!
মন্তব্য করুন