রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫

‘ভাসানে উজান’ ক্যারিয়ারে মাইল ফলক: এরশাদ হাসান

বৈশাখী ডেস্ক
প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৪৪ পিএম
আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ১০:১২ পিএম

বিবেকানন্দ থিয়েটারের ২৫তম প্রযোজনা নাটক ‘ভাসানে উজান’ সম্প্রতি মঞ্চে এসেছে। দস্তয়ভস্কির বিখ্যাত ছোটগল্প দ্য জেন্টেল স্পিরিট অবলম্বনে অপূর্ব কুমার কুণ্ডুর নাট্যরূপে নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন শুভাশীষ দত্ত তন্ময় নাটকে একক নাটকে অভিনয় করেছেন মঞ্চের তরুণ অভিনেতা মো. এরশাদ হাসান। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে গত শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ‘ভাসানে উজান’ নাটকটির উদ্বোধনী এবং এর পরদিন নাটকের দ্বিতীয় মঞ্চায়ন হয়। নাটকটি মঞ্চায়নের পর প্রশংসায় ভাসছেন এর অভিনেতা এরশাদ হাসান। নাটকে একক অভিনয় জীবনের অন্যতম মাইলফল বলছেন অভিনেতা এরশাদ।

‘ভাসানে উজান’- দস্তয়েভস্কির ছোটগল্প দ্য জেন্টল স্পিরিট থেকে এই রূপান্তরের যাত্রায় আপনাকে সবচেয়ে বেশি টেনেছে কোন মানবিক বা মনস্তাত্ত্বিক সংকট? কোন মুহূর্তে আপনি অনুভব করলেন-এ গল্পটি একক অভিনয়ে বলতে হবে? এ প্রসঙ্গে অভিনেতা এরশাদ বলেন ‘দস্তয়েভস্কির গল্পে মানুষের আত্মার যে নিঃশব্দ ক্ষরণ- সেটাই প্রথমে আমাকে আকৃষ্ট করে। আমরা বাইরে শক্ত, ভেতরে ভাঙা; বাইরে হাসি, ভেতরে গভীর অন্ধকার। এই দ্বৈততা আমাকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে। গল্পটি পড়তে পড়তে একসময় বুঝলাম- এ চরিত্রের ভিতরকার কণ্ঠটা একা দাঁড়িয়েই বলা যায়। কারণ তার যন্ত্রণা, তার অপরাধবোধ, তার মানবিক দ্বন্দ্ব- সবকিছুই ভিতর থেকে বাইরে আসে। সেই ভেতরের যাত্রা একক অভিনয়ের মঞ্চেই প্রকৃতরূপে প্রকাশ পাবে -এই উপলব্ধি থেকেই ‘ভাসানে উজান’-এর সূচনা।

একজন পুরুষ অভিনেতা হিসেবে একক নাটকের মঞ্চে দাঁড়ানো বাংলাদেশের নাট্যধারায় তুলনামূলকভাবে নতুন ঘটনা। কোন চ্যালেঞ্জগুলো আপনাকে নাড়া দিয়েছে? আর কোন শক্তি আপনাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে? এ প্রসঙ্গে অভিনেতা এরশাদ হাসান বলেন- সত্যি বলতে, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল একা মঞ্চ দখল করা নয়- বরং একা মঞ্চ ধরে রাখা। দর্শকের দৃষ্টি, নিঃশ্বাস, প্রতিক্রিয়া- সবই শুধু আমার দিকে। ভুল করার সুযোগ নেই, ক্লান্ত হওয়ার সময় নেই, চরিত্র থেকে চরিত্রে পাল্টানোর জন্য সময় নেই। তবে আমার শক্তি ছিল দুটি- প্রথমত অপূর্ব কুমার কুণ্ডুর নাট্যরূপে গল্পের গভীর মানবিকতা ও সংলাপের মাধকতা, দ্বিতীয়ত নির্দেশক শুভাশীষ দত্ত তন্ময়ের নির্ভুল মঞ্চদৃষ্টি। তাঁদের দুজনই আমাকে সাহস দিয়েছেন ‘আপনি পারবেন’। সেই বিশ্বাসেই এগিয়ে গেছি।

‘ভাসানে উজান’- নাটকে একাই চরিত্র, স্মৃতি, নীরবতা, বেদনা ও সময়কে ধারণ করেছেন। এ বহুবর্ণ আবেগের ওঠানামা বজায় রাখতে প্রস্তুতি প্রস্ততি নিয়ে এরশাদ হাসান বলেন প্রস্তুতি ছিল তিন স্তরে। প্রথম- মানসিক প্রস্তুতি, যেখানে নিজেকে শূন্য করতে হয়েছে। চরিত্রের অপরাধবোধ, লজ্জা, ভালোবাসা সব প্রথমে নিজের মধ্যে টেনে এনেছি। দ্বিতীয়- দেহভঙ্গি ও তাল-ছন্দ, কারণ একক নাটকে দেহই ভাষা। সামান্য দৃষ্টিবদল, সামান্য নীরবতাও এখানে অর্থ বহন করে। তৃতীয়- নীরবতার রিহার্সেল, যা সবচেয়ে কঠিন। নীরবতা ধরে রেখে দর্শকের মনোযোগ ধরে রাখা- এটাই একক অভিনয়ের মূল পরীক্ষা। নাটকটিতে শব্দ, নীরবতা, আলোকবিন্যাস ও দেহভঙ্গি যেন আলাদা ভাষার মতো কাজ করে। এই নাট্যভাষা কীভাবে তৈরি হলো?

এরশাদ হাসানের মতে এটা তৈরি হয়েছে দীর্ঘ আলাপ, রিহার্সাল ও অনবরত সংশোধনের মাধ্যমে। নির্দেশক তন্ময় সবসময় বলতেন “ডায়ালগ বলার আগেই আপনার চোখ যেন কথা বলে।” আমরা শব্দকে কমিয়েছি, আলোকে করেছি অর্থপূর্ণ, নীরবতাকে দিয়েছি নাটকীয় ঘনত্ব। সব মিলিয়ে ‘ভাসানে উজান’-এর ভাষা দাঁড়িয়েছে শব্দ ও নীরবতার মধ্যবর্তী অঞ্চলে, যেখানে দর্শকও হয়ে ওঠে গল্পের অংশ।

একক অভিনয়ে দর্শকের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করা কঠিন। ‘ভাসানে উজান’-এ কীভাবে দর্শককে নিজের অংশ করে তুলেছেন? এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন ‘আমি দর্শককে চরিত্রের সামনে বসা এক ধরনের ‘নিঃশব্দ বিচারক’ হিসেবে কল্পনা করেছি। আমি যখন চরিত্র হিসেবে নিজের ভুল স্বীকার করি, বেদনার কথা বলি, তখন মনে হয়- আমি দর্শককে নয়, যেন নিজের অন্তরকে বলছি। আর সেই অন্তরের কথাই দর্শক শুনছে। এই অন্তরঙ্গতাই দর্শকের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছে। তাদের নীরবতা- আমার অভিনয়েরই এক অংশ হয়ে উঠেছে।

দলীয় নাট্যচর্চা থেকে হঠাৎ একা মঞ্চে দাঁড়ানো- এই একাকীত্ব কি আপনাকে নতুন কিছু শিখিয়েছে? এরশাদ হাসান বলেন- ‘অবশ্যই। একক অভিনয় আমাকে শিখিয়েছে- একজন অভিনেতার সবচেয়ে বড় সঙ্গী সে নিজেই। এখানে অন্য কারো ওপর ভরসা নেই। সংলাপ ভুলে গেলে কেউ উদ্ধার করবে না, মঞ্চে ছন্দ হারালে কেউ ঢেকে দেবে না। নিজের ভেতরের শক্তি, একাগ্রতা আর বিশ্বাস -এই তিনটি আমাকে নতুনভাবে আবিষ্কার করিয়েছে। একা মঞ্চ সত্যি বলতে নিজের সঙ্গে এক গোপন সংলাপ।

পরিশেষে ‘ভাসানে উজান’ আপনার জন্য কোন নতুন দিগন্ত খুলেছে? ভবিষ্যতে একক নাটক কি বাংলাদেশের থিয়েটারচর্চায় নতুন ভাষা তৈরি করতে পারে? এ বিষয়ে এরশাদ হাসান: ‘ভাসানে উজান’ আমাকে ভেতর থেকে নবজন্ম দিয়েছে। মঞ্চে একা দাঁড়ানো আমাকে আরো পরিণত করেছে, গভীর করেছে, সাহসী করেছে। আমি বিশ্বাস করি -এটি শুধু আমার অভিনয়জীবন নয়, বাংলাদেশের সমকালীন থিয়েটারেও এক নতুন দৃষ্টান্ত। একক নাটক অবশ্যই নতুন ভাষা তৈরি করবে, কারণ এতে একদিকে শিল্পীর স্বাধীনতা, অন্যদিকে দর্শকের সংহত মনোযোগ-দুটিই সর্বোচ্চ মাত্রায় উপস্থিত থাকে। আমাদের দেশে এরচেয়ে শক্তিশালী মানবিক ও অন্তর্মুখী নাট্যরূপ খুব বেশি নেই। তাই মনে করি -ভবিষ্যতে একক নাটক আরো বড় জায়গা দখল করবে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
নায়িকা ময়ূরীর জন্মদিনে মেয়ের আবেগঘন পোস্ট ভাইরাল
নায়িকা ময়ূরীর জন্মদিনে মেয়ের আবেগঘন পোস্ট ভাইরাল
হাসপাতালে ভর্তি জনপ্রিয় গায়ক নচিকেতা
হাসপাতালে ভর্তি জনপ্রিয় গায়ক নচিকেতা
চিড়িয়াখানা বন্ধের দাবি আরশ খানের
চিড়িয়াখানা বন্ধের দাবি আরশ খানের
জাঙ্কুক-উইন্টার ডেটিং গুঞ্জন!
জাঙ্কুক-উইন্টার ডেটিং গুঞ্জন!