
আজ ৩ ডিসেম্বর। ৩৪তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষা, মর্যাদা সমুন্নতকরণ এবং এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ১৯৯২ সাল থেকে প্রতি বছর এইদিনে প্রতিবন্ধী দিবস পালন করা হয়।
এ বছর প্রতিবন্ধী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘প্রতিবন্ধিতা অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ি, সামাজিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করি।’
জাতিসংঘের প্রতিবন্ধীদের অধিকার বিষয়ক কনভেনশন (২০০৬) অনুযায়ী, প্রতিবন্ধিতা একটি দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক, মানসিক বা ইন্দ্রিয়গত সমস্যা যা অন্য ব্যক্তিদের সাথে সমানভাবে তাদের কার্যকর অংশগ্রহণ ও মিথস্ক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতিবন্ধিতার তিনটি ধরণ— শরীরের কার্যকারিতা ও গঠনগত প্রতিবন্ধকতা, কার্যকলাপের সীমাবদ্ধতা এবং অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বাধা।
বিশ্বে প্রায় ১৩০ কোটি জনসংখ্যা প্রতিবন্ধিতার শিকার, যা মোট জনসংখ্যার ১৬ শতাংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী (২০২৩), বাংলাদেশে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা প্রায় ৩৪ লাখ, যা মোট জনসংখ্যার ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। বাংলাদেশের প্রতিবন্ধীরা শিক্ষা, চিকিৎসা ও চাকরি ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যের শিকার হয় বলে অভিযোগ আছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবন্ধীদের মধ্যে পুরুষদের তুলনায় নারীদের সংখ্যা বেশি। আর সবচেয়ে বেশি আছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, এরপর রয়েছে বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী এবং বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষের মধ্যে প্রতিবন্ধিতা বেশি। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধী আছে চট্টগ্রাম বিভাগে এবং সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে। প্রতিবন্ধীদের মধ্যে ২৭ দশমিক ২১ শতাংশ কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন অসচ্ছল প্রতিবন্ধীদের মাসিক ভাতা দেওয়া হয় ৮৫০ টাকা। তবে এই ভাতা তাদের জন্য যথেষ্ট নয়। প্রতিবন্ধী ভাতা বাড়িয়ে ৫ হাজার টাকা করার জন্য তারা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে উত্তরাধিকার সম্পত্তির অধিকার দান, গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধী সম্পর্কে নেতিবাচক শব্দ ব্যবহার না করা, প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকলে প্রতিবন্ধী সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ দেওয়া, গণপরিবহণে মোট আসনের পাঁচ ভাগ আসন প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত করাসহ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সামন সুযোগ ও অধিকার নিয়ে ২০১৩ সালের ৩ অক্টোবর জাতীয় সংসদে ‘প্রতিবন্ধী অধিকার ও সুরক্ষা বিল-২০১৩’ পাস হয়েছে। এই বিল অনুযায়ী প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চাকরি, সামাজিক সুরক্ষা, ন্যায়বিচার, তথ্যের অধিকার, পারিবারিক ও রাজনৈতিক জীবনে সুবিধাসহ মোট ২০টি ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিল পাস হলেও প্রতিবন্ধীদের অধিকার সুরক্ষার জন্য রাষ্ট্র প্রস্তুত নয়। দেশে সকলের জন্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক হলেও প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার সুযোগ সীমিত। বিলে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ্যতা থাকলে প্রতিবন্ধী শিশু ভর্তি হতে পারবে উল্লেখ থাকলেও সব স্কুলে তারা ভর্তি হতে পারছে না।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, রাষ্ট্র প্রতিবন্ধীদের দায়িত্ব নিতে বদ্ধপরিকর। তবে সর্বক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের অধিকার সুরক্ষা করার জন্য প্রস্তুত হতে রাষ্ট্রের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন সময় সাপেক্ষ বিষয়। সংগঠিত হওয়া ছাড়া অধিকার আদায় সম্ভব নয়। প্রতিটি জনগোষ্ঠী তাদের নিজেদের এবং সমাজের উন্নয়নে সংগঠিত হয়েছে। তাই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রেও ঐক্যবদ্ধ হওয়া বাঞ্ছনীয়।
মন্তব্য করুন