
গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি এখন এক সংকটাপন্ন মুহূর্তে রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান বিন জসিম আল থানি।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) দোহা ফোরামে তিনি বলেন, বাস্তবে যা চলছে তা আসলে যুদ্ধবিরতির পরিবর্তে একটি বিরতি মাত্র।
কাতার প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তি সঙ্কটাপন্ন, কারণ ইসরাইলের পূর্ণ প্রত্যাহার ও ফিলিস্তিনের চলাচলের স্বাধীনতা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি; তুরস্কও জানিয়েছে, মার্কিন হস্তক্ষেপ ছাড়া শান্তি প্রক্রিয়া স্থবির হতে পারে।
তিরি সতর্ক করে বলেন, স্থায়ী শান্তি চুক্তির দিকে দ্রুত অগ্রসর না হলে এ প্রক্রিয়া ভেঙে যেতে পারে।
ফোরামে তুরস্কের শীর্ষ কূটনীতিক হাকান ফিদানও একই বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, সময়মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ ছাড়া শান্তি প্রক্রিয়া পুরোপুরি স্থবির হয়ে যেতে পারে।
ফিদান বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সময়মতো হস্তক্ষেপ করা প্রয়োজন যাতে আমরা দ্বিতীয় পর্যায়ে যেতে পারি, অন্যথায় আমরা গতি হারাতে পারি।
তিনি আরো বলেন, হামাস বন্দী বিনিময়ের বেশিভাগ শর্তগুলো পূরণ করেছে।
যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) মোতায়েন, টেকনোক্র্যাট ফিলিস্তিনি সরকার, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ এবং ইসরাইলের পূর্ণ প্রত্যাহারের কথা রয়েছে। এগুলো এখনো শুরু হয়নি।
এই সতর্কবার্তাগুলো এসেছে এমন সময়ে, যখন গাজায় ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত রয়েছে। গত সাত সপ্তাহে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা প্রায় ৬০০ বার ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শনিবার উত্তরাঞ্চলের বেইত লাহিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় আরও তিন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গাজা কর্তৃপক্ষের হিসাবে, ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকেই ইসরায়েল অন্তত ৩৬০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যাদের মধ্যে ৭০ জনেরও বেশি শিশু রয়েছে। ইউনিসেফ বলেছে, যুদ্ধবিরতি শিশুদের নিরাপত্তায় পরিণত হতে হবে, নয়তো আরও প্রাণহানি ঘটবে।
ফিদান জানান, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ অনুমোদিত প্রস্তাবিত আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনীতে (আইএসএফ) তুরস্ককে যুক্ত করতে কয়েকটি মুসলিম প্রধান দেশ আগ্রহী। তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তা চান না। তিনি তা প্রকাশ্যেই বলেন।
নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্ট আইডে আরও জরুরি সুরে বলেন, আন্তর্জাতিক বাহিনী ও শান্তি পরিষদ এই মাসেই গঠন করতে হবে। তার দাবি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনায় কিছু অনিশ্চয়তা রয়েছে, যা সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে দায়িত্ব পালনে বিলম্বের সুযোগ দিচ্ছে।
মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাত্তি প্রস্তাব করেছেন, যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক বাহিনীকে দ্রুত গাজার ইয়েলো লাইন-এ মোতায়েন করা উচিত। তিনি বলেন, ইসরায়েল প্রতিদিন যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে এবং এর দায় অন্য পক্ষের ওপর চাপাচ্ছে। শীত ঘনিয়ে আসায় আশ্রয়হীন ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা আরও বাড়ছে। ইসরায়েলের পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞের কারণে পরিস্থিতি ভয়াবহ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে মিসর ও কাতারসহ আটটি মুসলিম দেশ এক যৌথ বিবৃতিতে ইসরায়েলের রাফাহ ক্রসিং শুধু ফিলিস্তিনিদের বের হওয়ার জন্য খুলে দেওয়ার পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে। তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় শান্তি পরিকল্পনার বিরোধী এই একমুখী ব্যবস্থা ফিলিস্তিনিদের স্থায়ী বাস্তুচ্যুতি ঘটাতে পারে। কারণ এতে কেবল বের হওয়ার অনুমতি মিলবে। কিন্তু ফিরে আসা ও মানবিক সহায়তার প্রবেশ বন্ধ থাকবে।
সৌদি আরবের প্রতিনিধি মানাল রাদওয়ান বলেন, গাজার সংকটকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখলে ভুল হবে। ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের বৃহত্তর সংগ্রামের সঙ্গে এটি গভীরভাবে যুক্ত। তিনি সতর্ক করে বলেন, সংঘাতের মূল কারণ নিরসন না হলে সহিংসতার পুনরাবৃত্তি ও রাজনৈতিক অবসাদ তৈরি হবে।
যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায় আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী মোতায়েন, টেকনোক্র্যাট ফিলিস্তিনি সরকার, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ এবং ইসরায়েলের পূর্ণ প্রত্যাহারের কথা রয়েছে। এগুলো এখনও শুরু হয়নি। গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৭০ হাজার ১২৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
মন্তব্য করুন