
দৈনিক ভোরের কাগজের অনলাইন এডিটর এবং অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের সেক্রেটারি মিজানুর রহমান সোহেলকে বুধবার (১৯ নভেম্বর) মধ্যরাতে ডিবি পরিচয়ে তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
এদিন রাত ১২টার পর রাজধানীর উত্তর বাড্ডার বাসা থেকে তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই 'ডিবি প্রধান কথা বলবেন'—এমন অজুহাতে তাকে তুলে নেওয়ায় সাংবাদিক সমাজ ও সাধারণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রাত ১২টার পর ৫-৬ জন ব্যক্তি ডিবি পরিচয়ে মিজানুর রহমানের বাসায় প্রবেশ করেন। অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন আশরাফুল নামের একজন ডিবি সদস্য। মিজানুর রহমানের স্ত্রী সুমাইয়া সিমা জানান, পুলিশ সদস্যরা কোনো পরোয়ানা দেখাতে পারেননি। তারা জানান, ডিবি প্রধান (অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম) তার সঙ্গে কথা বলতে চান। কথা শেষ হলেই তাকে বাসায় পৌঁছে দেয়া হবে। তবে পরবর্তীতে আশরাফুল নামের ওই পুলিশ সদস্যকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এদিকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করতে অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের ডিবি প্রধানের সঙ্গে এই বিষয়ে জানতে চান— কেন একজন সাংবাদিককে মধ্যেরাতে তুলে এনে আপনার কথা বলতে হবে?
ডিবি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি স্বীকার করেন যে, মিজানুর রহমান সোহেলকে ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়েছে। মধ্যরাতে বাসা থেকে তুলে আনার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, "সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে। তবে সেই 'সুনির্দিষ্ট তথ্য' কী, সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।
মিজানুর রহমানকে আটক করার পেছনে বিশেষ একটি মহলের ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, নেদারল্যান্ডসের নাগরিক এবং বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়ব সাধারণ স্মার্টফোন বিক্রেতাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই এনইআইআর (NEIR) পদ্ধতি বা মোবাইল হ্যান্ডসেট নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু করতে যাচ্ছিলেন। এর ফলে সাধারণ ব্যবসায়ীরা ব্যবসা হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন।
ব্যবসায়ীদের দাবিদাওয়া তুলে ধরতে এবং জনমত গঠনে আজ বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। মিজানুর রহমান সোহেল একজন গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে এই আয়োজনে ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দিচ্ছিলেন।
অভিযোগ উঠেছে, ফয়েজ আহমদ তৈয়বের ইশারায় এই সংবাদ সম্মেলন বানচাল করতে এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করতেই পুলিশকে ব্যবহার করে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
বিনা পরোয়ানায় এবং মধ্যরাতে একজন সাংবাদিককে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্স। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, "ডিবি প্রধান যদি কথা বলতেই চাইতেন, তবে তাকে দিনের বেলা ডাকা যেত অথবা নোটিশ দেওয়া যেত। তিনি নিজেই হাজির হতেন। রাত ১২টার পর বাসা থেকে তুলে নেওয়া মানে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, যা বর্তমান বাংলাদেশে কাম্য নয়।"
সাংবাদিক নেতারা এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং যদি ফয়েজ আহমদ তৈয়বের ইন্ধনে এই ঘটনা ঘটে থাকে, তবে সকল গণমাধ্যমকর্মীকে তার সংবাদ বর্জনের আহ্বান জানানোর বিষয়টিও বিবেচনায় রাখার কথা বলা হয়েছে।
মন্তব্য করুন