রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫
বিবিসিকে সাক্ষাৎকার

বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে আমি অস্বীকার করছি না: শেখ হাসিনা

বৈশাখী ডেস্ক
প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:১৮ পিএম
আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:২০ পিএম

‘অপ্রয়োজনে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে আমি অস্বীকার করছি না’, এমন বক্তব্য দিয়েছেন গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সম্প্রতি বিবিসির প্রশ্নের জবাবে ইমেইলের মাধ্যমে স্বপক্ষ তুলে ধরে এসব কথা বলেন তিনি।

যখন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে চলমান মামলার রায় ঘোষণার কথা, এমন সময়ে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জুলাই আন্দোলনে প্রাণঘাতী দমন-পীড়নের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ অস্বীকার করেন শেখ হাসিনা।

আগামী সোমবার (১৭ নভেম্বর) শেখ হাসিনাসহ ৩ আসামীর রায় ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে আদালত। দোষী সাব্যস্ত হলে তার জন্য মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

যখন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে চলমান মামলার রায় ঘোষণার কথা, এমন সময়ে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জুলাই আন্দোলনে প্রাণঘাতী দমন-পীড়নের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ অস্বীকার করেন শেখ হাসিনা।

গোপন কারাগার ‘আয়নাঘর’ যেখানে বহু বছর ধরে কোনো আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই বন্দিদের আটকে রাখা হয়েছিল, এর প্রসঙ্গে দায় কার ওপর বর্তায় জিজ্ঞেস করা হলে হাসিনা জানান তিনি এসব সম্পর্কে "জানতেন না"।

তার অনুপস্থিতিতে চলা বিচারকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নিয়ন্ত্রিত "ক্যাঙ্গারু কোর্টের" সাজানো এক "প্রহসন" বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বিচার প্রসঙ্গে হাসিনা বলেন, তিনি নিজের দিক তুলে ধরার সুযোগ পাননি বা নিজের আইনজীবী নিয়োগ করতে পারেননি।

হাসিনার দাবি, এই বিচার শুরু থেকেই "পূর্বনির্ধারিত দোষী সাব্যস্ত রায়ের" দিকে এগোচ্ছিল। ভারত থেকে দেশে ফিরে বিচার প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত এই প্রধানমন্ত্রী।

বিবিসির পক্ষ থেকে হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত আরও গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়েও জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, যা বিশেষ ট্রাইব্যুনালের আরেক মামলায় বিচারাধীন রয়েছে। সেই মামলাতেও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হাসিনা।

তিনি বলেন, “আমি অস্বীকার করছি না যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল, কিংবা অপ্রয়োজনে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। কিন্তু নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি চালানোর কোনো নির্দেশ আমি কখনও দিইনি।"

তিনি আরও দাবি করেন, “রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে ‘চূড়ান্তভাবে নিশ্চিহ্ন’ করতে তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে।”

নেতৃত্বে থাকাকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের জন্য তার দায়ী থাকার বিষয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগও অস্বীকার করেছেন তিনি।

এই বছরের শুরুতে টেলিফোন আলাপের ফাঁস হওয়া একটি অডিও যাচাই করে বিবিসি আই, যেখানে শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের জুলাইয়ে "প্রাণঘাতী অস্ত্র" ব্যবহারের অনুমোদন দেয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আদালতে সেই অডিওটি বাজানো হয়।

এ রায় বাংলাদেশের জন্য যেমন তাৎপর্যপূর্ণ তেমনি হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা ছাত্রনেতৃত্বের আন্দোলনে নিহতদের স্বজনদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। অভিযোগ রয়েছে যে তার স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভের সময় শতাধিক হত্যাকাণ্ডের প্রধান পরিকল্পনাকারী ছিলেন তিনি।

জাতিসংঘের মানবাধিকার তদন্তকারীরা বলেছেন, ক্ষমতা ধরে রাখার ব্যর্থ প্রচেষ্টায় হাসিনা ও তার সরকারের পরিকল্পিত ও প্রাণঘাতী সহিংসতায় এক হাজার ৪০০ জন পর্যন্ত মানুষ নিহত হন।

তার পক্ষে থাকা আইনজীবীরা এক বিবৃতিতে জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ন্যায়বিচার ও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ জানিয়ে তারা জাতিসংঘে জরুরি আপিল দাখিল করেছেন।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
নির্বাচন ও গণভোটের প্রস্তুতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে জানালেন সিইসি
নির্বাচন ও গণভোটের প্রস্তুতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে জানালেন সিইসি
নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন স্বাস্থ্যের ডিজির সঙ্গে তর্কে জড়ানো মমেকের সেই চিকিৎসক
নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন স্বাস্থ্যের ডিজির সঙ্গে তর্কে জড়ানো মমেকের সেই চিকিৎসক
জাতীয় স্মৃতিসৌধে সর্বসাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
জাতীয় স্মৃতিসৌধে সর্বসাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
সিনিয়র সাংবাদিক শওকত মাহমুদ গ্রেপ্তার
সিনিয়র সাংবাদিক শওকত মাহমুদ গ্রেপ্তার