
খুলনার পাইকগাছার কপিলমুনিতে সড়ক সরলীকরণের নামে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ পরিশোধ না করেই ডিগ্রি মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলার অভিযোগ উঠেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) ডিগ্রি মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলার ঘটনা ঘটে।
সওজ সূত্রে জানা যায়, ‘বেতগ্রাম–তালা–পাইকগাছা–কয়রা সড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৬০ কিলোমিটার সড়ককে দুই লেনে প্রশস্তকরণ, বাঁক সরলীকরণ ও সংস্কারের কাজ চলছে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল ঝুঁকিপূর্ণ ৩৪টি বাঁক সরলীকরণ। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অধিকাংশ বাঁক সোজা না করে খণ্ডিত খনন ও ধীরগতির কাজেই দীর্ঘ সময় ব্যয় করেছে। সরকার পরিবর্তনের পর ২০২৪ সালের আগস্টে ঠিকাদার মালামাল সরিয়ে সাইট ত্যাগ করলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। পরে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর সওজ সক্রিয় হয়।
প্রকল্পটি ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি একনেকে অনুমোদনের পর একই বছরের ২৯ ডিসেম্বর ৩৩৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকার চুক্তি পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ। দুই বছরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন জটিলতায় প্রকল্পের মেয়াদ তিন দফা বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়। ব্যয়ও বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩৭৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
সম্প্রতি বাঁক সরলীকরণের জন্য জমির মালিকদের নোটিশ দেওয়া হলেও অভিযোগ রয়েছে, ক্ষতিপূরণ না দিয়েই বিভিন্ন স্থাপনায় বুলডোজার চালানো হচ্ছে। এতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ স্থানীয়ভাবে তীব্র প্রতিবাদের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির জামাইয়ের কপিলমুনি বাজারের একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রক্ষায় প্রভাবশালী মহলের সুবিধাভোগ ও নকশা পরিবর্তনের অভিযোগ ওঠেছে। এতে সরকারকে অতিরিক্ত কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা।
কপিলমুনি মৌজার জমির মালিক অ্যাড. দীপঙ্কর সাহা বলেন, “বাঁক সরলীকরণের নামে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎয়ের সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বাঁচাতে নকশা পরিবর্তন করায় মাদ্রাসা, মাজার, বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জমি এখন অধিগ্রহণ করা হচ্ছে, যার ফলে ব্যয় বেড়ে গেছে।”
কপিলমুনি জাফর আউলিয়া মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এম এম জামিরুল ইসলাম বলেন, “মাদ্রাসার ভবন ও প্রাচীর ভাঙা হচ্ছে। এখনো আমরা কোনো ক্ষতিপূরণ পাইনি।”
খুলনা সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন বলেন, “জমি অধিগ্রহণ করে ডিসি অফিস। অধিগ্রহণ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর আমরা নির্ধারিত টাকা ডিসি অফিসে পাঠিয়ে দিই। ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ডিসি অফিস থেকেই দেওয়া হবে।”
পাইকগাছা অফিসার ইনচার্জ (ওসি)-এর নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান আমাদের কাছে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, যদি কেউ অভিযোগ দেয় তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয়রা জানান, ভুল নকশা, সরলীকরণের নামে অতিরিক্ত ব্যয় ও ক্ষতিপূরণহীন উচ্ছেদ—এসব অভিযোগে সঠিক তদন্ত ও অনিয়মের বিচার দাবি জানান এলাকাবাসী।
মন্তব্য করুন