মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫

পর্ন জগতের বৃষ্টিকে আগেই ত্যাজ্য করেছিলেন বাবা

বৈশাখী ডেস্ক
প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৪৮ পিএম

গত ১৯ অক্টোবর নাদিয়া আক্তার বৃষ্টি নামের ২৮ বছর বয়সী এ নারী আন্তর্জাতিক পর্নোগ্রাফি চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হন বান্দরবান থেকে। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এডাল্ট ওয়েবসাইটগুলোর একটিতে ২০২৫ সালের ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি বিশ্বব্যাপী পারফর্মারদের মধ্যে অষ্টম স্থানে রয়েছেন। এই বৃষ্টিকে তার বাবা এক আগে ত্যাজ্য করেছিলেন বলে জানা গেছে।

বৃষ্টির বাবা, এখন একজন ক্ষুদ্র চা–দোকানি, বলেন, “আমি গরিব মানুষ। মেয়েকে বলেছিলাম, কষ্ট হলেও সংসার কর। কিন্তু সে আমার কথা শোনেনি।”

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, “সে সমাজের বোঝা হয়ে গেছে। আমি তাকে মেয়ে হিসেবে পরিচয় দিই না। বহু আগেই আমি তাকে ত্যাজ্য করেছি।”

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রদর্শিত জীবনযাপন বেশ বিলাসবহুল হলেও বৃষ্টির আগমন দরিদ্র পরিবার থেকে।

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের দুর্গম চর পাটগ্রামের দরিদ্র জেলে পরিবারে জন্ম বৃষ্টির। তিন ভাই–বোনের মধ্যে সে সবার বড়। শৈশবে ছিল হাসিখুশি, পরিশ্রমী ও সরল স্বভাবের। কিন্তু অভাবের সংসারে পড়াশোনা এগোয়নি। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন তিনি।

পরিবারের আর্থিক সংকটে মাত্র বারো–তেরো বছর বয়সে তার বিয়ে দেওয়া হয় একই উপজেলার বয়ড়া ইউনিয়নের খালপাড় গ্রামের কাউসারের সঙ্গে। কৈশোরেই শুরু হয় সংসারজীবন, আর সেখান থেকেই জীবনের ভাঙন।

স্বামী–স্ত্রীর মনোমালিন্য, পরকীয়ার অভিযোগ আর পারিবারিক ঝামেলায় শেষ পর্যন্ত বিচ্ছেদ ঘটে বৃষ্টির দাম্পত্যে।

শ্বশুরবাড়ির লোকজন অভিযোগ করেন, দেনমোহরের টাকাসহ কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি করে চলে যায় সে। এরপর হঠাৎ হারিয়ে যায় বৃষ্টি। পরিবার বা গ্রামের কারও সঙ্গেই আর যোগাযোগ রাখেনি।

বছর দুয়েক আগে হঠাৎ একদিন চরাঞ্চলে নানির বাড়িতে আসলে অনেকে তাকে চিনতেই পারেননি। গ্রামের সহজ–সরল মেয়েটির চেহারা, পোশাক–আচরণে এমন পরিবর্তন দেখে হতবাক হয়ে যান সবাই।

নাদিয়া আক্তার বৃষ্টি নিজেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে “বাংলাদেশের নাম্বার ওয়ান মডেল” হিসেবে পরিচয় দিতেন। কিন্তু বাস্তবে তিনি আন্তর্জাতিক পর্নো ইন্ডাস্ট্রির সক্রিয় সদস্য ছিলেন।

২০২৪ সালের ১৭ মে তিনি প্রথম ভিডিও প্রকাশ করেন। ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিনি একশ বারোটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন, যেগুলো বিশ্বব্যাপী দেখা হয়েছে দুই শত সাতষট্টি মিলিয়নেরও বেশি বার। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ প্রাপ্তবয়স্ক বিনোদন প্ল্যাটফর্মে তিনি পারফর্মারদের মধ্যে নবম স্থানে ছিলেন।

সিআইডির তথ্যানুসারে, বৃষ্টি ও আজিম যৌথভাবে একটি টেলিগ্রাম চ্যানেল পরিচালনা করতেন, যেখানে দুই হাজারেরও বেশি সদস্য রয়েছে। সেখানে নিয়মিত তাদের ভিডিওর লিংক শেয়ার করা হতো।

একাধিক সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্টে তারা নিজেদের বিলাসী জীবনযাপন, অর্থ, দামি মোটরবাইক ও গাড়ির ছবি প্রকাশ করতেন। কিছু পোস্টে তারা নিজেদের ভিডিও থেকে লাখ টাকার আয়ের কথা উল্লেখ করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।

এই পুরো সময়জুড়েই তারা বাংলাদেশে থেকেই এসব ভিডিও ধারণ করেছেন।

কেবল নিজেরা ভিডিও বানানোতেই থেমে থাকেননি তারা।

অনুসন্ধানী প্ল্যাটফর্ম ‘দ্য ডিসেন্ট’-এর অনুসন্ধানে জানা যায়, ৫৫ ডলার “ফ্রি ইনসেনটিভ” দেখিয়ে তারা তরুণ–তরুণীদের টানতেন পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে। একপ্রকার রিক্রুটমেন্ট নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন এই যুগল। এমনকি ২০২৪ সালের মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা প্রায় ১৫ হাজার মার্কিন ডলার আয় করেন বলে দাবি করেছে সূত্রটি।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
মোহাম্মদপুরে যুবককে কুপিয়ে হত্যা, আটক ২
মোহাম্মদপুরে যুবককে কুপিয়ে হত্যা, আটক ২
মোহাম্মদপুরে বাসে তরুণীকে হেনস্তা, কন্ডাক্টর গ্রেপ্তার
মোহাম্মদপুরে বাসে তরুণীকে হেনস্তা, কন্ডাক্টর গ্রেপ্তার
৫ দিনের রিমান্ডে পর্নোগ্রাফির অভিযোগে গ্রেফতার যুগল
৫ দিনের রিমান্ডে পর্নোগ্রাফির অভিযোগে গ্রেফতার যুগল
বাংলাদেশি সেই পর্ন তারকা যুগল গ্রেপ্তার
বাংলাদেশি সেই পর্ন তারকা যুগল গ্রেপ্তার