
বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সালমান শাহ এক কিংবদন্তী নাম, যার অকালমৃত্যু আজও এক রহস্যের আবছা জালে ঢাকা। সম্প্রতি, প্রায় ২৯ বছর পর আদালতের নির্দেশে তাঁর মৃত্যুর ঘটনা আবারো আলোচনায়। এই স্পর্শকাতর সময়ে, বর্তমান প্রজন্মের একজন পরিচিত মুখ কায়েস আরজু-কে নিয়ে আলোচনা প্রাসঙ্গিক, কারণ সালমান শাহকে দেখেই চলচ্চিত্রের প্রতি মোহগ্রস্থ হয়েছিলেন তিনি, এসেছিলেন চলচ্চিত্রে, এখনো সালমান শাহ ভক্ত হিসেবে ইন্ড্রাস্ট্রীতে তার আলাদা পরিচিতি আছে, যিনি ২০০৭ সালে ‘তুমি আছো হৃদয়ে’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে রূপালী পর্দায় পা রাখেন। চট্টগ্রামের এই অভিনেতা তাঁর কাজের মাধ্যমে চলচ্চিত্রের জগতে নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন। আমরা আজ কায়েস আরজুর সাথে কথা বলেছি।
বৈশাখী বিনোদন: চলচ্চিত্রে কিভাবে এলেন? আপনার সময়ে বাংলা চলচ্চিত্রে কোন তারকা আপনাকে অভিনয়ে আসতে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেছিল?
কায়েস আরজু: আমি গ্রুপ থিয়েটারে কাজ করতাম। চট্টগ্রামের গ্রুপ থিয়েটারে কাজ করেছি এবং ঢাকায় গ্রুপ থিয়েটারে যখন ভর্তি হই এরপরে বিভিন্ন ফিল্মের অফিস, এফডিসি এরকম টুকটাক যাওয়া আসা ছিল। তো এভাবেই ফিল্মের অফার পেয়েছি। এফডিসিতে প্রথম যেদিন যাই সেদিনও কয়েকজন অফার করে। পরবর্তীতে এটিএন বাংলায় নাসির ভাই নামে একজন ভদ্রলোকের সাথে আমি এটিএন বাংলায় একটা কাজে গিয়েছিলাম, ওখানেই হাসিবুল ইসলাম মিজান সাহেবের সাথে আমার দেখা হয়। উনি আমাকে অফার করেন। অনেক যদি কিন্তুর পর কাজ শুরু করি, বলতে পারেন ওনার কারণেই তখন শুরু হয়। আর সালমান শাহকে ফলো করতাম, ভাবতাম ওনার মতো যদি হতে পারতাম। এভাবেই আসলে পথচলা শুরু, তারপর তো চলছেই।
বৈশাখী বিনোদন: আপনি সালমান ভক্ত, সালমান শাহ আপনার জীবনকে কতটুকু প্রভাবিত করেছেন?
কায়েস আরজু: সালমান শাহ আমাদের মহানায়ক। সালমান ভাইয়ের প্রত্যেকটা ছবি সিনেমা হলে দেখার ট্রাই করেছি এবং আমাকে ছোট সালমান ডাকতো বন্ধুবান্ধবরা। তো ওনার মতো করে চলতাম। চলা, ক্যাপ পড়া সবকিছু মিলিয়ে একটা অদ্ভূত, অদেখা উৎসাহ আমি পেয়েছি। মানে আমার চলচ্চিত্রে কাজ করতে সেটা আমাকে দারুণভাবে প্রভাবিত করেছিলো।
বৈশাখী বিনোদন: সালমান শাহকে হারিয়ে ইন্ড্রাস্ট্রী কতটুকু ক্ষতির সম্মূখীন হয়েছে?
কায়েস আরজু: আমার মতে ছিয়ানব্বই সালে সালমান ভাই মারা যাওয়ার পর ইন্ডাস্ট্রি অর্ধেক নাই হয়ে গিয়েছিল। তারপর আটানব্বই নিরানব্বই সালের দিকে অশ্লীলতা আসে। সেটা দুই হাজার ছয় সাল পর্যন্ত চলচ্চিত্রকে গ্রাস করে। তারপর যা ছিল এগুলো হচ্ছে ‘নাই এর ভিতর থাকা’। আর এখন তো হলের সংকট, আস্তে আস্তে হল কমে যাচ্ছে, ছবি হচ্ছেও কম। তো আপনি নিজেই বোঝেন যে এখন চলচ্চিত্রের কি অবস্থা? এটার উত্তরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে এই চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিটাকে যদি সরকার আমাদের কালচারের মেরুদন্ড ভাবে, তবেই বাঁচিয়ে রাখতে পারবে, না হলে হবে না। এটা সদিচ্ছা লাগবে চলচ্চিত্রকে বাঁচাতে।
বৈশাখী বিনোদন: কোন ধরনের চলচ্চিত্রে বেশি কাজ করতে চান?
কায়েস আরজু: এক কথায় বলব সালমান ভাই যে টাইপের চরিত্রগুলোতে কাজ করেছে ওগুলো আমাকে খুব টানে। প্রত্যেকটা ছবিতে তার অসাধারণ অভিনয় এবং চরিত্রগুলোর গভীরতা আমাকে ভাবায়, কি সুন্দর সাবলীল। এই যে উনি নেই তারপরও মানুষ কি গভীরভাবে তাকে স্মরণ করে, এমন ভাগ্য কজন নায়ক পায় বলেন, এটা তো যে কারো জন্যই ড্রীম। আমি এমন কাজই করতে চাই যে কাজের জন্য মানুষ আমাকে মনে রাখবে, ভালোবাসবে। দর্শকদের ভালোবাসাই একজন অভিনেতার সবচেয়ে কাঙ্খিত অর্জন, এ অর্জন তো টাকা দিয়ে কেনা যায় না। আমি শুধু দর্শকদের ভালোবাসা চাই।
বৈশাখী বিনোদন: সম্প্রতি সালমান শাহের হত্যা মামলা আবারো আলোচনায় এসেছে আপনার ব্যক্তিগত মতামত কী?
কায়েস আরজু: এ বিষয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই, যেটা সত্য সেটারই জয় হোক। তবে সালমান ভাই অকালে চলে যাওয়াতে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গিয়েছে, উনি থাকলে আমাদের ইন্ড্রাস্ট্রি আরো অনেক দূর এগিয়ে যেতো বলে আমার বিশ্বাস। উনি সবসময় হৃদয়ে আছেন, থাকবেন।
বৈশাখী বিনোদন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, বৈশাখী বিনোদনকে সময় দেয়ার জন্য।
কায়েস আরজু: বৈশাখী বিনোদনকেও ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন