
		শামীমা ইসলাম : প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে চলছে টানাপোড়েন। বাংলাদেশ থেকে মালদ্বীপ- সর্বত্রই কমেছে দিল্লীর গ্রহণযোগ্যতা। বরফ গলেনি পাকিস্তানের সাথেও। উপরন্তু চীনের সাথে সীমান্ত নিয়ে বিরোধ বেড়েছে। দিল্লীকে পাশ কাটিয়ে বেইজিং ঘেষা হয়েছে নেপাল। অথচ ১৬ বছর আগেই ‘নেইবারহুড ফার্স্ট’ বা ‘প্রতিবেশীই প্রথম’ নীতিতে চলার ঘোষণা দিয়েছে ভারত। তবে বাস্তবে, মোদী সরকারের এই নীতি মুখের কথাতেই সীমাবদ্ধ থেকে গেছে। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে সবকটি প্রতিবেশী দেশ।
প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক এবং অর্থনৈতিক সমন্বয় গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০০৮ সালে ‘নেইবারহুড ফার্স্ট’ বা ‘প্রতিবেশীই প্রথম’ নীতি তৈরি করেছিলো আঞ্চলিক পরাশক্তি ভারত। ক্ষমতায় এসে সে পথেই হাঁটছিলেন নরেন্দ্র মোদির সরকার। তবে দশক পেরুতেই প্রতিবেশি দেশগুলোর মধ্যে বাড়ছে ভারতবিরোধী মনোভাব। পরিসংখ্যান বলছে, বিদায়ী বছরে দেশটির সাথে প্রতিবেশীদের সর্ম্পকের গ্রাফ মুখ থুবড়ে পড়েছে।
২০২৪ সালে ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতিতে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি এসেছে বাংলাদেশ থেকে। গত আগস্টে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে দুই দেশের সম্পর্ক আমূল বদলে গেছে। এরইমধ্যে ভারত সরকার বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা দেয়া সীমিত করে দিয়েছে। ফলে দ্বিপাক্ষিক চিকিৎসা, বিনোদন, পর্যটন ও ব্যবসা-বাণিজ্য অনেকাংশে ব্যাহত হচ্ছে। ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশী উপ-হাইকমিশনে হামলার ঘটনাও ঘটেছে। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ঢাকা।
৭৫০ কিলোমিটারের সীমান্ত ভাগাভাগি করে দীর্ঘদিন থেকেই সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখছিল ভারত ও নেপাল। তবে বর্তমানে নেপালের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ভারত বিরোধী হিসেবে পরিচিত কেপি শর্মা ওলি। চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন চীনের বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভে। এদিকে বহু বছর ধরেই শীতল হয়ে আছে পাক-ভারত সম্পর্ক। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আয়োজন ঘিরে গেলো বছর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চিরবৈরি দুই দেশের জনগণের তিক্ততা বেড়েছে।
ভারতীয় বাহিনীকে দেশ থেকে সরানোর বার্তা দিয়ে মালদ্বীপের ক্ষমতায় এসেছেন চীনপন্থী মোহাম্মদ মইজ্জু। এরইমধ্যে ভারতের সাথে করা হাইড্রোগ্রাফিক চুক্তি নবায়ন না করে চীনের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি সই করেছে মালদ্বীপ। বাধ্য হয়ে দেশটি থেকে সব সেনাও প্রত্যাহার করেছে দিল্লী। আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের সঙ্গেও সম্পর্ক খুব একটা সুবিধাজনক নয় ভারতের। তালেবান সরকারকে এখন পর্যন্ত স্বীকৃতিই দেয়নি দিল্লী।
ক্ষমতার পালাবদলে শ্রীলংকার প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসেছেন চীনের ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েক। ফলে শ্রীলঙ্কায় এখন ভারতের বদলে চীনের প্রভাব বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। বলার অপেক্ষা রাখে না, শ্রীলঙ্কাও ভারতের হাত ফসকে বের হয়ে গেল এই দফায়।
সামরিক, বৈদেশিক ও অর্থনৈতিক থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে ভারতের ওপর নিভর্শীল একটি দেশ ভুটান। এমনকি ২০০৭ সাল পর্যন্ত ভুটানের বিদেশনীতি পর্যন্ত পুরোপুরি দেখভাল করত ভারত। সেই ভুটানও এখন চীনের সাথে সীমান্ত সমস্যার সমাধানে আলোচনা করতে চাচ্ছে।
আর চীনের সাথেও ভারতের দ্বন্দ্ব বহু পুরোনো। মূলত তিব্বত সীমান্ত নিয়েই এই টানাপোড়েন। গত অক্টোবরে লাদাখে দুই দেশের সেনারা মুখোমুখি অবস্থানও নিয়েছিলো। এ ছাড়া তিব্বতের নেতা দালাই লামাকে ভারতে আশ্রয় দেয়া নিয়েও অস্বস্তি রয়েছে চীনের। অন্যদিকে, মিয়ানমারে এখন গৃহযুদ্ধ তুঙ্গে। ভারত সমর্থিত জান্তা সরকারের কাছ থেকে এরইমধ্যে বহু এলাকা দখল করে নিয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো। সহিংসতার কারণে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে অরুণাচল, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম ও মণিপুর রাজ্যের কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ভারত।
মন্তব্য করুন