
		আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইতিহাসের ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর লস অ্যাঞ্জেলেস। চারদিনের এই দাবানলে পুড়ে ছাই হয়েছে ৩৮ হাজার একর এলাকা। পুড়েছে শত শত ঘরবাড়ি, প্রাণ গেছে অন্তত ১১ জনের।
ভয়াবহ এই দুর্যোগ মোকাবিলায় বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে লস অ্যাঞ্জেলেস কর্তৃপক্ষ। প্রতিবেশী কাউন্টিগুলো থেকেও আনা হচ্ছে আগুন নেভানোর সরঞ্জাম ও কর্মী বাহিনী। দেখা দিয়েছে পানি সংকট। মার্কিন পরিবেশ বিশ্লেষকদের মতে, আকাশ কিংবা স্থল থেকে পানি মেরে আগুন নিয়ন্ত্রণ করার যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়েছে। তবে এমন ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা পৃথিবীর কোন পানি ব্যবস্থাই নেই।
লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির কর্মকর্তারা এই দাবানলের আগুনকে একটি “নিখুঁত ঝড়” হিসাবে চিহ্নিত করেছেন যেখানে প্রায় একশ’ মাইল বেগে হারিকেনের মতো ঝে ড়ো হাওয়া বয়ে গিয়েছে। এমন বিরূপ আবহাওয়ায় দাবানলে বিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে পানি ঢেলে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব।
লস অ্যাঞ্জেলসে পানি সরবরাহকারী বিভাগ জানিয়েছে এই ধরণের আগুনের সঙ্গে মোকাবিলা তারা আগে করেননি। শহরের পানি সরবরাহ ব্যবস্থা সেভাবে তৈরি হয়নি যেখান থেকে তারা এই ধরণের একটি ভয়াবহ বিপর্যয়কে মোকাবিলা করবে।
মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস বলছে, দীর্ঘ সময় বৃষ্টি না হওয়ায় ফলে খরা আর প্রবল বাতাসের কারণে দাবানলটি এত দ্রুত ছড়াচ্ছে। তবে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে লিখেছে, দাবানল এমন ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনকেও কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। যদিও ঠিক কোন কোন বিষয়গুলো এর জন্য দায়ী, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়।
যদিও এখনকার দাবানলের শিখা ছড়িয়ে পড়ার কারণ হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়ার ‘‘সান্তা আনা বাতাসের’’ কথা বলা হচ্ছে। মরুভূমির পরিবেশ বা শুষ্ক অঞ্চল থেকে ঘণ্টায় ৯৭ কিলোমিটার গতিতে এই বাতাস বয়ে যায় উপকূলের দিকে। এ বাতাসকে দাবানল ছড়িয়ে পড়ার বড় কারণ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
সিবিএস এক প্রতিবেদনে লিখেছে, শুষ্ক আর উষ্ণ পর্যায়ের সান্তা আনা বাতাস বেশ শক্তিশালী। আমেরিকার নেভাডা, উটাহ ও ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের শুকনো এলাকা থেকে এটি উড়ে আসে।
এছাড়া খরা ও প্রবল বাতাস দাবানল আরও উসকে দিলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনও এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের বড় একটি কারণ। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি গবেষণায় দেখা গেছে, দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে বড় দাবানলের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের সম্পর্ক রয়েছে। বিবিসির তথ্য মতে, ২০২৪ সালে এল নিনোর সাথে যুক্ত ভারী বৃষ্টিপাতের সময়কাল এই শীতকালে আগুনের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি করেছে বলে মনে করা হয়। এই কারণেই লস অ্যাঞ্জেলেসে আগুন এত ভয়াবহ।
মন্তব্য করুন