
		তেহরানে ইসরায়েলি হামলার পর পাল্টা জবাব দিয়েছে ইরান। পারমানবিক কর্মসুচী বন্ধের অজুহাতে ইসরায়েলি ওই হামলার তীব্র সমালোচনা করছে বিশ্ব। বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোর বাসিন্দারা এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। বিভিন্ন দেশে হচ্ছে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, সমাবেশ। ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে আনুষ্ঠানিকভাবে নিন্দা জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র মিসরসহ ২১টি মুসলিম দেশ।
নিন্দা জানানোর পাশাপাশি উত্তেজনা হ্রাস এবং পরমাণু প্রকল্প বন্ধেরও আহ্বান জানিয়েছে দেশগুলো। সোমবার এক খোলা চিঠিতে এই নিন্দা এবং উত্তেজনা হ্রাসের আহ্বান জানানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো হলো মিসর, আলজেলিয়া, বাহরাইন, ব্রুনেই, শাদ, কোমরোস, জিবুতি, গাম্বিয়া, ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, লিবিয়া, মৌরিতানিয়া, ওমান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, সুদান, সোমালিয়া, তুরস্ক এবং সংযুক্ত আরব আমিরা।
খোলা চিঠিতে বলা হয়েছে, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যে সংঘাত শুরু হয়েছে তা পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে এবং এখন জরুরিভিত্তিতে যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন। আরও বলা হয়েছে যে, তারা চান যে মধ্যপ্রাচ্য যেন পরমাণু অস্ত্রমুক্ত থাকে এবং এই অঞ্চলের সব রাষ্ট্র যেন জাতিসংঘের পরমাণু প্রকল্প বিষয়ক চুক্তি নন-প্রোলিফারেশন অব নিউক্লিয়ার উইপন বা এনপিটিতে স্বাক্ষর করে।
গত ১৩ জুন ভোর সাড়ে ৪ টার দিকে ইরানে ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর অভিযানের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় ইরান-ইসরায়েল সংঘাত। এখনও এই সংঘাত চলছে এবং ইতোমধ্যে এতে উভয় দেশের প্রায় ৩০০ মানুষ নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও প্রায় ১ হাজার জন। সংঘাত শুরুর চার দিন পর প্রথমবারের মতো যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে একসঙ্গে বিবৃতি দিলো এতগুলো মুসলিম দেশ।
এদিকে ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান সংঘাত বন্ধে পদক্ষেপ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইরান। তেহরান বলেছে, ইসরায়েলের ওপর যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ প্রয়োগ করাই সংঘাত বন্ধের একমাত্র উপায়। অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তাঁর দেশ এখন ‘বিজয়ের পথে’ রয়েছে।
ইসরায়েলি বাহিনী ইরানের শহরগুলোতে বিমান থেকে বোমা হামলা আরও জোরদার করেছে। পাল্টা জবাবে ইরানও শক্তি প্রদর্শন করেছে। সংঘাতে এখন পর্যন্ত দেশটির সবচেয়ে বেশি সফলতা হলো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ইসরায়েলের শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করা। ১৬ জুন সোমবার এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি লিখেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি সত্যিই কূটনৈতিকভাবে সমাধানে আগ্রহী হন এবং এই যুদ্ধ থামাতে চান, তাহলে তাঁর পরবর্তী পদক্ষেপগুলো সে অনুযায়ী হবে।’
আব্বাস আরাগচি আরও বলেন, ইসরায়েলের অবশ্যই আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে এবং আমাদের বিরুদ্ধে সামরিক হামলা পুরোপুরি বন্ধ না হলে পাল্টা জবাব অব্যাহত থাকবে। ওয়াশিংটন থেকে একটি ফোনকলই নেতানিয়াহুর মতো কাউকে থামাতে পারে। আর সেটা কূটনৈতিক সমাধানের পথ খুলে দিতে পারে।
একাধিক সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, তেহরানের পক্ষ থেকে কাতার, সৌদি আরব ও ওমানকে অনুরোধ করা হয়েছে তারা যেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওপর চাপ সৃষ্টি করে, যাতে তিনি ইসরায়েলের ওপর তাঁর প্রভাব খাটিয়ে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে উদ্যোগী হন। বিনিময়ে ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে সমঝোতা আলোচনায় নমনীয়তা দেখাবে। দুজন ইরানি এবং ওই অঞ্চলের তিনটি কূটনৈতিক সূত্র রয়টার্সকে এ কথাগুলো বলেছে।
ইসরায়েলের একটি বিমানঘাঁটিতে সেনাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস এবং তাদের ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করা এই দুই প্রধান লক্ষ্য অর্জনের পথে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা বিজয়ের পথে আছি। তেহরানের নাগরিকদের বলছি, ‘সরে যান’, আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।
মন্তব্য করুন