
		যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনার সিদ্ধান্ত ইরান নেয়নি। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি এ কথা বলেন। ২৬ জুন বৃহস্পতিবার খবর বার্তা সংস্থা আনাদোলু এ তথ্য জানায়। ওই সাক্ষাৎকারে আরাগচি উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্র যখন ইরানে ইসরাইলি হামলাকে সমর্থন করে, আবার পরে পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর সরাসারি বোমা হামলা চালায় তখনো ওয়াশিংটন তেহরানের সঙ্গে আলোচনায় যুক্ত ছিল।
আরাগচি বলেন, ‘সাম্প্রতিক আলোচনায় তারা আমাদের জাতির অধিকার ত্যাগ করার জন্য প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করেছিল। যখন কিছু নির্দিষ্ট ঘটনা ঘটে, তখন তারা যুদ্ধ চাপিয়ে দেয় এবং অপরাধী ইহুদিবাদী (ইসরাইল) শাসনব্যবস্থাকে আক্রমণ চালানোর জন্য ছেড়ে দেয়। ’
ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আলোচনার সময় যুক্তরাষ্ট্র কূটনীতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এই অভিজ্ঞতা পরমাণু আলোচনার বিষয়ে ইরানকে ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে। ’ তিনি আরও বলেন, ‘তবুও কূটনীতি অব্যাহত রয়েছে এবং আমি বেশ কয়েকজন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করছি। ’
আগামী সপ্তাহে ইরানের সঙ্গে পরিকল্পিত বৈঠকের মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি নাকচ করে দিয়ে আরাগচি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনার কোনো সুযোগ নেই। তাদের বক্তব্য পরস্পরবিরোধী। ’
এদিকে ইরান তাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের প্রবেশে বাধা দিলে একটি নতুন সংকট তৈরি হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘ পরিচালিত আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি। সম্প্রতি ফ্রান্সের একটি রেডিও নেটওয়ার্ককে দেয়া সাক্ষাৎকারে গ্রোসি বলেন, ‘ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে অত্যন্ত বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে।’
ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম কি ধ্বংস হয়ে গেছে- এমন তথ্য তার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমি বলব না এটি ধ্বংস হয়ে গেছে, তবে এটা যে বিশাল ক্ষতির শিকার হয়েছে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।’
সাম্প্রতিক সময়ে আইএইএ-এর সঙ্গে ইরানের সহযোগিতা স্থগিতের বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রোসি বলেন, বিষয়টির ব্যাপ্তি এবং প্রকৃতি পর্যালোচনা করতে হবে। তবে তিনি স্পষ্ট করে দেন, ‘ইরানে আইএইএ-এর উপস্থিতি কোনো অনুগ্রহ নয়; বরং এটি একটি আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা।’
গ্রোসি জানান, ইরান যেহেতু পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির (এনপিটি) সদস্য, তাই আন্তর্জাতিক পরিদর্শন ব্যবস্থার আওতায় তাদের অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক। তিনি বলেন, ‘যদি ইরান একতরফাভাবে সহযোগিতা স্থগিত করে এবং আমাদের পরিদর্শকদের প্রবেশে বাধা দেয়, তাহলে তা আমাদের এক নতুন সংকটের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে।’তিনি আরও হুঁশিয়ারি দেন, ‘এই ধরনের পদক্ষেপ ইরানকে আন্তর্জাতিক আইনের বাইরে নিয়ে যাবে।’
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ নতুন করে বাড়ছে, যা ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
গত ১৩ জুন ইরানের সামরিক, পারমাণবিক ও বেসামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরাইল। যা পরবর্তীতে তেহরান ও তেল আবিবের মধ্যে ১২ দিনের সংঘর্ষে রুপ নেয়। এতে ইরানের কমপক্ষে ৬১০ জন নিহত এবং ৫ হাজার ৩৩২ জন আহত হন বলে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তেহরান ইসরাইলের ওপর প্রতিশোধমূলক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। যার ফলে কমপক্ষে ২৯ জন নিহত এবং ৩ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গত ২৪ জুন থেকে এই সংঘাত থেমে যায়।
মন্তব্য করুন