
		বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়া আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৩ জুলাই বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায় । এর ফলে রাশিয়া বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিলো। খবর এপি, আল-জাজিরা।
মস্কোয় নিযুক্ত আফগানিস্তানের নতুন রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র গ্রহণ করেছে ক্রেমলিন। যা তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেয়ার একটি পদক্ষেপ। গত এপ্রিলেই সংগঠনটির ওপর থেকে সন্ত্রাসী তকমা তুলে নেয় রুশ সুপ্রিম কোর্ট। ধারণা করা হচ্ছে, কৌশলগত ও অর্থনৈতিক কারণের পাশাপাশি আঞ্চলিক প্রভাব বজায় রাখতেই কাবুলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাচ্ছে মস্কো।
২০২১ সালে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসার পর এখন পর্যন্ত তালেবান সরকারকে বৈধতা দেয়নি কোনো পশ্চিমা দেশ। মানবাধিকার লঙ্ঘন, নারী শিক্ষা বন্ধ, মৌলবাদী নীতিসহ একাধিক ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মহলে বিতর্ক রয়েছে তালেবান সরকারের।
রাশিয়ার মন্ত্রণালটি জানিয়েছে, ‘ইসলামিক প্রজাতন্ত্র আফগানিস্তান সরকারের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি আমাদের দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা গড়ে তুলবে।’ এই পদক্ষেপ এমন সময় এলো যখন আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের চার বছর পর তালেবান দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বীকৃতির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকী বৃহস্পতিবার রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি জিরনভের সঙ্গে বৈঠকের একটি ভিডিও পোস্ট করে বলেন, ‘এই সাহসী সিদ্ধান্ত অন্যদের জন্য উদাহরণ হবে। স্বীকৃতির যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তাতে রাশিয়া সবাইকে ছাড়িয়ে যাবে।’
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র তালেবান সরকারের শীর্ষ নেতাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। একই সঙ্গে আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিলিয়ন ডলারের সম্পদ ফ্রিজ করে রেখেছে। যার ফলে আফগান ব্যাংকিং খাত কার্যত আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
২০২১ সালের আগস্টে যখন মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান ত্যাগ করে, তালেবান গোষ্ঠী তখন আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়। রাশিয়া তখন যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রস্থানকে ‘ব্যর্থতা’ বলে অভিহিত করে এবং এরপর থেকেই তালেবান প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেয়। তারা তালেবানকে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক অংশীদার ও সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে মিত্র হিসেবে বিবেচনা করছে।
২০২২ ও ২০২৪ সালে রাশিয়ার অর্থনৈতিক সম্মেলনে তালেবান প্রতিনিধিরা অংশ নেয়, আর ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে তালেবানের শীর্ষ কূটনীতিক মস্কোতে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে বৈঠক করেন।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তালেবানকে ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে মিত্র’ বলে আখ্যায়িত করেন-বিশেষ করে ইসলামিক স্টেট খোরাসান প্রদেশ (আইএসকেপি বা আইএসআইএস-কে)-এর বিরুদ্ধে, যারা আফগানিস্তান ও রাশিয়া-উভয় জায়গায় ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে।
মন্তব্য করুন