
		এক সময়ের ‘ধনকুবের দ্বীপরাষ্ট্র’ অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের নাউরু আজ বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র রাষ্ট্র। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত ২১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপ ১৯৭০-এর দশকে মাথাপিছু আয়ের হিসাবে ছিল বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী দেশ। অথচ মাত্র কয়েক দশকেই দেশটি পরিণত হয়েছে আন্তর্জাতিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল এক রাষ্ট্রে। কিন্তু কীভাবে ঘটল এমন পতন?
নাউরুর অর্থনৈতিক সাফল্যের মূল চাবিকাঠি ছিল ফসফেট, যা মূলত পাখির বিষ্ঠা জমে জমে তৈরি হওয়া এক ধরনের খনিজ সার। এই ফসফেট এতটাই সমৃদ্ধ ছিল যে, ১৯০০ সালের শুরু থেকেই বিদেশি কোম্পানিগুলো এটাকে খুঁড়তে শুরু করে। ১৯৬৮ সালে স্বাধীনতা পাওয়ার পর দেশটি নিজেই ফসফেটের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর থেকে শুরু হয় অঢেল টাকার জোয়ার।
সরকার নাগরিকদের জন্য আয়কর তুলে দেয়, বিদেশে গিয়ে পড়াশোনার সুযোগ দেয়, চিকিৎসা খরচ পুরো ফ্রি করে দেয়। কেউ কাজ করুক বা না করুক, সরকারের কাছ থেকে টাকা ঠিকই পেত। তবে সুখের স্মৃতি বেশি দিন টেকেনি।
সমস্যাটা শুরু হয় তখনই, যখন পুরো দেশটি শুধু একটা খনিজ সম্পদের ওপর নির্ভর হয়ে পড়ে। সেই সাথে যোগ হয় অপচয়, দুর্নীতি আর ভুল বিনিয়োগ। হোটেল বানানো হয় সিডনিতে, ব্যাঙ্ক খোলা হয় বিদেশে, এমনকি সিনেমা বানানোর পেছনেও টাকা ঢালা হয় অঢেল—কিন্তু লাভের মুখ দেখা যায় না।
এর মধ্যে আবার বিশ্ববাজারে ফসফেটের দাম পড়ে যায়। আর খনন এত বেশি হয় যে, দ্বীপটির প্রায় ৮০ ভাগ জমি একেবারে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে। খাদ্য উৎপাদন প্রায় বন্ধ হয়ে যায়, ফলে আমদানি নির্ভরতা বাড়ে। এর পাশাপাশি উচ্চমাত্রার স্থূলতা, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগে আক্রান্ত হন বেশিরভাগ নাগরিক — বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, নাউরুতে স্থূলতার হার বিশ্বে সর্বোচ্চ।
বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার সহায়তায় পরিচালিত একটি শরণার্থী বন্দিশিবিরই তাদের প্রধান আয়ের উৎস। আন্তর্জাতিক অনুদান ছাড়া দেশটি মূলত অচল।
নাউরুর দৃষ্টান্ত প্রমাণ করে, প্রাকৃতিক সম্পদের উপর অতি নির্ভরতা এবং অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় দীর্ঘমেয়াদি ভাবনার অভাব একটি দেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে। তাদের গল্প শুধু ইতিহাস নয়, ভবিষ্যতের জন্যও একটি সতর্কবার্তা।
মন্তব্য করুন