
		ইউক্রেন যুদ্ধের ‘দ্রুত ও শান্তিপূর্ণ’ সমাপ্তির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ভারত। ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনালাপের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ তথ্য জানিয়েছেন। আগামী শুক্রবার আলাস্কায় হতে যাওয়া রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের মধ্যে একটি সম্মেলনের প্রেক্ষাপটে এই আলোচনাটি উঠে এসেছে, যেখানে তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধের সমাধানের চেষ্টা করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ ছাড়া গত সপ্তাহে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও কথা বলেন মোদি। সেখানেও তিনি সংঘাতের ‘শান্তিপূর্ণ সমাধান’ চাইছেন। মস্কোর সঙ্গে নয়াদিল্লির দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে, যা ওয়াশিংটন ও অন্যান্য পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা অংশীদারির আগ্রহের মধ্যেও টিকে আছে। এই সমন্বয় কৌশলের ফলে নয়াদিল্লি রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধের নিন্দা এড়িয়ে চলেছে এবং নিজেকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে প্রস্তাব করেছে।
জেলেনস্কির সঙ্গে আলাপের পর মোদি বলেন, আমি ভারতের অবিচল অবস্থান ব্যক্ত করেছি, সংঘাতের দ্রুত ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রয়োজন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি আরো লিখেছেন, এই বিষয়ে সর্বাত্মক অবদান রাখার পাশাপাশি ইউক্রেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো মজবুত করার জন্য ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণ আক্রমণ শুরু করার পর থেকে লাখ লাখ মানুষ নিহত হয়েছে এবং কোটি কোটি মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে। এই বছর রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে তিন দফা আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি এবং আলাস্কায় সম্মেলন যুদ্ধের সমাধান কতটা এগিয়ে আনবে তা এখনো অজানা। পুতিন এই পর্যায়ে জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনা করার সম্ভাবনাও খারিজ করে দিয়েছেন। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের মতে, এমন একটি বৈঠক চুক্তির জন্য অপরিহার্য।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যুদ্ধ থামাতে ইউক্রেন ও রাশিয়াকে একে অপরের কাছে কিছু ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে হবে। ১১ আগষ্ট সোমবার হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প এ কথা জানান। তিনি বলেন, আগামী শুক্রবার আলাস্কায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়েই মূলত আলোচনা হবে। বৈঠকের লক্ষ্য হবে একটি সম্ভাব্য চুক্তির দিকে অগ্রসর হওয়া।
ট্রাম্প বলেন, আমি পুতিনকে বলব-এই যুদ্ধ শেষ করতেই হবে। আপনাকে এটি করতেই হবে। তিনি দাবি করেন, মাত্র দুই মিনিটের আলোচনাতেই বুঝে ফেলতে পারবেন পুতিন কোনো চুক্তিতে আগ্রহী কিনা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও জানান, ভবিষ্যতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হতে পারে। পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গেও কথা বলবেন, যার উদ্দেশ্য রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ দ্রুত থামানো।
ট্রাম্প এর আগেও যুদ্ধবিরতির জন্য ভূখণ্ড বিনিময়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যা রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়েই প্রত্যাখ্যান করেছে। ইউরোপীয় দেশগুলোর আশঙ্কা, রাশিয়াকে বড় ধরনের ছাড় দিলে ভবিষ্যতে পশ্চিমা বিশ্বের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া ইউক্রেন যুদ্ধ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী ইউরোপের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘাত। বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড দখল করে রেখেছে, অন্যদিকে ইউক্রেনের দখলে রুশ ভূখণ্ড নেই বললেই চলে। ট্রাম্প বলেন, কিছু ভূমি অদলবদল হবে। রাশিয়া গুরুত্বপূর্ণ কিছু অঞ্চল দখল করে রেখেছে, আমরা চেষ্টা করব এর কিছু অংশ ফেরত আনতে।
মন্তব্য করুন