
ঐতিহাসিক ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ মিশনে বাংলাদেশি হিসেবে অংশ নিয়েছেন মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম। তার পাশাপাশি বাংলাদেশের নাম উজ্বল করলেন আরেকজন অধিকারকর্মী। ব্রিটেনের নিউক্যাসলের মানবতাবাদী কর্মী রুহি লরেন আখতার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। এর মধ্য দিয়ে তিনি হলেন প্রথম কোনো বাংলাদেশি বা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বৃটিশ নারী, যার লক্ষ্য গাজায় খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনীয় জিনিসের সংকট তুলে ধরা।
ইংল্যান্ডের নর্থাম্বারল্যান্ডের মোরপেথে তার জন্ম। ২০১৫ সালে এনএইচএস-এ লোয়ার-লিম্ব স্পেশালিস্ট হিসেবে কর্মজীবন শেষ করেন। তিন বছর বয়সী সিরীয় শিশু আয়লান কুরদির সমুদ্রপথে মৃত্যুর মর্মান্তিক ছবি তার জীবন বদলে দেয়। সেখান থেকেই শুরু হয় শরণার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর যাত্রা।
বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর পাশে থাকার অঙ্গীকারের স্বীকৃতিস্বরূপ রুহি ২০২৫ সালের অক্টোবরে নর্থ ইস্ট বাংলাদেশি অ্যাওয়ার্ডে ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ সম্মাননা লাভ করেন।
বুধবার (১ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে রুহি লোরেন লিখেছেন, গাজাবাসীর জন্য ত্রাণ নিয়ে এগিয়ে যাওয়া গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র অন্যান্য নৌযানের ঠিক পেছনে ‘সামারটাইম জং’ নামের একটি জাহাজে তিনি অবস্থান করছেন।
ফ্লোটিলা থেকে তিনি কয়েকটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন যেখানে বলেছেন, একজন বাংলাদেশি হিসেবে আমি গর্বিত যে আমার সহযোদ্ধা বাংলাদেশি শহিদুল আলম। একইসঙ্গে বাংলাদেশের তরুণরাও ফ্লোটিলার সমর্থনে সংহতি সমাবেশ ও বিক্ষোভ করছেন। আমরা সবাই একদিন মুক্ত হবো!
শরণার্থী ও দুস্থদের মাঝে খাদ্য-ত্রাণ বিতরণ থেকে শুরু করে মানবিক সহায়তার কাজ চালাচ্ছেন রুহি। তার সংস্থাটির পূর্ণ নাম ‘রিফিউজি বিরিয়ানি অ্যান্ড ব্যানানাস’ (আরবিবি)। এই যাত্রা নিয়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও পোস্ট করেছেন এবং তাদের অবস্থান ও গাজা নিয়ে কথা বলেছেন।
তার প্রতিষ্ঠিত সংগঠন রিফিউজি বিরিয়ানি অ্যান্ড বানানাস বিগত এক দশকে গ্রীস, লেবানন ও গাজায় হাজারো শরণার্থী পরিবারকে খাদ্য, পোশাক ও জরুরি সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে। সংগঠনটি নারীনেতৃত্বাধীন ও কমিউনিটি-ভিত্তিক, যেখানে অনেক স্বেচ্ছাসেবক নিজেরাও বাস্তুচ্যুত।
রুহির চাচা নিউক্যাসলের সাবেক লর্ড মেয়র ও স্বতন্ত্র কাউন্সিলর হাবিব রহমান বলেন, “আমার ভাতিজিকে নিয়ে আমি গর্বিত। তার সাহসিকতা মানবতা ও ন্যায়ের প্রতি অঙ্গীকারের প্রতিফলন। যদিও তার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে, তবে আমরা তার পাশে আছি। বিশ্বনেতাদের এখনই এগিয়ে আসা উচিত।”
ফ্লোটিলায় যোগ দেওয়ার আগে রুহি বলেন, “অন্যায়ের মুখে নীরব থাকা কোনো বিকল্প নয়। বহুদিন ধরে ফিলিস্তিনিদের খাদ্য, পানি, ভূমি, নিরাপত্তা ও চলাফেরার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এই যাত্রা নীরব প্রতিবাদ নয়, এটি সংহতির ঘোষণা—একটি স্মরণ করিয়ে দেওয়া যে বিশ্ব তাকিয়ে আছে।”
মন্তব্য করুন