
ক্যান্টারবেরির নতুন আর্চবিশপ হিসেবে শুক্রবার (৩ অক্টোবর) দায়িত্ব পেয়েছেন সেরাহ মুলালি; চার্চ অব ইংল্যান্ডের এক হাজার ৪০০ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম কোনো নারী এ দায়িত্ব পেলেন। ৬৩ বছর বয়সী মুল্যালি চার্চটির ১০৬তম আর্চবিশপ ও বিশ্বব্যাপী অ্যাংলিকান সম্প্রদায়ের নেতৃত্বে বসতে যাচ্ছেন।
বছরের শুরুর দিকে শিশু নির্যাতন কেলেঙ্কারির দায়ে পদত্যাগ করা জাস্টিন ওয়েলবির উত্তরসূরি নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কমিটি মুল্যালির নাম প্রস্তাব করে। রাজা তৃতীয় চার্লস সেই মনোনয়ন অনুমোদন করেছেন বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার জানিয়েছে। রাজা হিসাবে চার্লসই চার্চ অব ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ গভর্নর; ষোড়শ শতকে ক্যাথলিক চার্চ থেকে আলাদা হওয়ার পর রাজা অষ্টম হেনরি এই পদ সৃষ্টি করেছিলেন।
১১ বছর আগে সূচিত সংস্কারের পথ ধরে আর্চবিশপ পদে নারীদের আনার পথ সুগম হয়েছিল। বিশ্বজুড়ে থাকা অ্যাংলিকান খ্রিষ্টানদের সিংহভাগ এই সিদ্ধান্ত মেনে নেবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ থাকছেই। এ মতের খ্রিষ্টানদের দুই তৃতীয়াংশের বাস নাইজেরিয়া, কেনিয়া ও উগান্ডার মত আফ্রিকার দেশগুলোতে।
বিবিসি লিখেছে, আর্চবিশপ হওয়ায় মুলালি বিশ্বজুড়ে থাকা ৮ কোটি ৫০ লাখের মত অ্যাংলিকান খ্রিষ্টানের অলঙ্কারিক প্রধানও হলেন। তবে একজন নারীকে এ পদে আনায় আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে থাকা রক্ষণশীল চার্চগুলোর সঙ্গে চার্চ অব ইংল্যান্ডের ধর্মতাত্ত্বিক বিভাজন আরও তীব্র হওয়ার শঙ্কা সৃষ্টি হল।
মুলালি একসময় নার্স ছিলেন। ২০০০ এর দশকের শুরুর দিকে তিনি ইংল্যান্ডের প্রধান নার্সিং কর্মকর্তার দায়িত্বও পালন করেছেন। তিনি চার্চগুলোতে একটি উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ সংস্কৃতি তৈরি করার পক্ষে কাজ করছেন, যেখানে ভিন্নমত ও মতভিন্নতার স্থান থাকবে।
“নার্সিং এবং যাজকের কাজের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। সবই মানুষকে ঘিরে, এবং তাদের পাশে বসে থাকা, যখন তারা সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে,” একটি ম্যাগাজিনকে একবার এমনটাই বলেছিলেন মুলালি।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারও প্রথম নারী আর্চবিশপের নিয়োগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘চার্চ অব ইংল্যান্ড আমাদের দেশের জন্য গভীর গুরুত্ব বহন করে। এর গির্জা, ক্যাথেড্রাল, স্কুল ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। নতুন আর্চবিশপ জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।
প্রসঙ্গত, চার্চ অব ইংল্যান্ড বহু বছর দ্বন্দ্ব-সংঘাতের পর ২০১৪ সালে প্রথমবার নারী বিশপের অনুমোদন দেয়। তবে বিশ্বজুড়ে অনেক অ্যাংলিকান চার্চে আগে থেকেই নারী বিশপ অনুমোদিত ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম নারী বিশপ নিয়োগ হয় ১৯৮৯ সালে।
এখন ইংল্যান্ডে ১০৮ জন বিশপের মধ্যে ৪০ জনের বেশি নারী এবং পুরোহিতদের ক্ষেত্রেও অনুপাত প্রায় সমান—নারী ধর্মযাজকদের প্রথম অনুমতি দেওয়া হয়েছিল ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে।
মন্তব্য করুন