
		দুই প্রতিপক্ষ পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং— দুইজনেরই মুখোমুখি বৈঠক আসন্ন দক্ষিণ কোরিয়ায়। এই বৈঠকের আগে দিয়ে সিউলে শুরু হয়েছে 'নো ট্রাম্প!', 'নো চায়না' বিক্ষোভ।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে নিয়ে আলোচনায় বসবেন তিন দেশের নেতারা।
দক্ষিণ কোরিয়ার গিয়ংজু শহরে বুধবারেই পৌঁছেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সেখানে তাকে সর্বোচ্চ সম্মাননা দিয়ে স্বাগত জানানো হলেও ট্রাম্পের আগমন ঘিরে ছিল ক্ষুব্ধ নাগরিকদের প্রতিবাদ।
ট্রাম্প দেশটিতে পৌঁছানোর আগেও গত শনিবার রাজধানী সিউলের কেন্দ্রস্থলে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের কাছে 'নো ট্রাম্প!' স্লোগানে এগিয়ে যায় শত শত মানুষের বিক্ষোভ মিছিল। তারা যতই দূতাবাসের প্রবেশপথের কাছাকাছি আসছিল, ততই চড়া হচ্ছিল আওয়াজ।
পুলিশের বাস দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করে বিক্ষোভকারীদের ফটকে পৌঁছানো ঠেকানো হলেও, মাইকের কারণে তাদের আওয়াজ গোয়াংওয়ামুন স্কয়ার ছাপিয়ে ট্রাম্পের প্রতিনিধিদের কানে পৌঁছে যায় ঠিকই।
চীন বিরোধী আরেকটি বিক্ষোভও এদিন হয়েছে। শোনা গেছে স্লোগান: “নো চায়না, 'সিসিপি (চায়নিজ কমিউনিস্ট পার্টি) দূর হও!” সেটিও ছিল কয়েকশ মানুষের বিক্ষোভ।
প্রতিবাদগুলো দেখাচ্ছে যে, জনগণের একটি অংশ দক্ষিণ কোরিয়ায় ট্রাম্পের অর্থনৈতিক চাওয়া-পাওয়া ও চীনের প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন। তবে, এই দুই পরাশক্তির মধ্যে কোন পথে হাঁটবেন প্রেসিডেন্ট লি, তা নির্ধারণ করবে দক্ষিণ কোরিয়ার ভবিষ্যৎ।
দক্ষিণ চীন সাগর ও অন্যান্য আঞ্চলিক-আন্তর্জাতিক বিষয়ে ওয়াশিংটন ও বেইজিং যখন অনেকটাই মুখোমুখি তখন এই দুই প্রভাবশালী নেতার বৈঠক নিঃসন্দেহে আশা জাগানিয়া। কিন্তু
দক্ষিণ কোরিয়া দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। বিশেষ করে ১৯৫০-৫৩ সালে কোরিয়ান যুদ্ধে মার্কিন সাহায্যের কারণে। এমনকি এখনও দক্ষিণ কোরিয়ার নিরাপত্তা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল। একই সঙ্গে চীন দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার ও রপ্তানি বাজার হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ।
ক্ষমতায় আসার পর থেকে লি জে-মিয়ং ট্রাম্পের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়াতে ব্যস্ত। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে এরই মধ্যে জানিয়েছেন, তার দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে ও ১০০ বিলিয়ন ডলারের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কিনবে। বিনিময়ে ট্রাম্প শুল্ক ১০ শতাংশ কমিয়ে ১৫ শতাংশে আনতে রাজি হয়েছেন।
তবে এতকিছুর পরও কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ায় হুন্দাই কারখানায় ৩০০-র বেশি অভিবাসী দক্ষিণ কোরিয়ানকে আটক করা হয়। তার ওপর হোয়াইট হাউস এখন আরও নগদ বিনিয়োগ চাচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার অনেকে যুক্তরাষ্ট্রের এসব দাবি-দাওয়াকে ভালোভাবে নিতে পারছে না। প্রেসিডেন্ট লি জে-মিয়ং চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করারও পক্ষে। তিনি ভিসানীতি শিথিল করেছেন এবং শি জিনপিংয়ের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করবেন। এটি গত ১১ বছরে শি'র প্রথম দক্ষিণ কোরিয়া সফর। লি বৈষম্যমূলক সমাবেশ নিষিদ্ধের আইন এনেছেন ও স্পষ্ট করেছেন যে তার লক্ষ্য চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা।
বৈঠকের পর শি জিনপিং এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কোঅপারেশন (এপেক) সম্মেলনে অংশ নেবেন। তিনি ট্রাম্পের তুলনায় বেশি সময় দক্ষিণ কোরিয়ায় কাটাবেন। এটি চীনকে স্থিতিশীল বাণিজ্যিক অংশীদার ও বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে দেখানোর সুযোগ দেবে। লিয়ের চীন-বান্ধব নীতি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে ভবিষ্যতে আলোচনার পথও খুলতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
মন্তব্য করুন