শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫

‘বোরকা না পরলে চিকিৎসা নয়’, আবারও বিতর্কিত নির্দেশ আফগানিস্তানে

বৈশাখী ডেস্ক
প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ১২:১৮ পিএম

আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর হেরাতে নারী রোগী, সেবিকা ও কর্মীদের হাসপাতালে প্রবেশের আগে বোরকা পরার নির্দেশ দিয়েছে কট্টর-উগ্রপন্থি গোষ্ঠী তালেবান প্রশাসন।

আন্তর্জাতিক চিকিৎসাসেবা সংস্থা মেদসঁ সঁ ফ্রঁতিয়ের (এমএসএফ) জানিয়েছে, ৫ নভেম্বর থেকে এই নির্দেশ কার্যকর হয়েছে।

সংস্থাটির আফগানিস্তান কর্মসূচির ব্যবস্থাপক সারা শাতো বিবিসিকে বলেন, ‘এই বিধিনিষেধ নারীদের জীবনে আরও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে এবং তাদের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ সীমিত করছে।’ তিনি জানান, এমনকি যেসব নারী জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনেও এসেছেন, তাদেরও প্রভাবিত করা হয়েছে।

তবে তালেবান সরকারের এক মুখপাত্র এমএসএফের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক মহলের সমালোচনার পর কিছু এলাকায় বিধিনিষেধ আংশিক শিথিল করা হয়েছে।

সংস্থাটি জানায়, হেরাত আঞ্চলিক হাসপাতালে তাদের পেডিয়াট্রিক সেবায় নতুন নিয়ম চালুর পর জরুরি রোগী ভর্তি ২৮ শতাংশ কমে গেছে।

সারা শাতো বলেন, তালেবান সদস্যরা হাসপাতালে প্রবেশপথে দাঁড়িয়ে বোরকা না পরা নারীদের ভেতরে যেতে বাধা দিচ্ছেন। বোরকা এক ধরনের পোশাক যা মুখ ও শরীর পুরোপুরি ঢেকে রাখে, শুধু চোখের সামনে জালের মতো পাতলা অংশ থাকে দেখার জন্য।

তালেবানের ‘নৈতিকতা ও পাপ প্রতিরোধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের’ মুখপাত্র সাইফুল ইসলাম খাইবার দাবি করেন, “এ ধরনের খবর পুরোপুরি মিথ্যা। মন্ত্রণালয়ের অবস্থান সাধারণত হিজাব পরিধান নিয়ে, বোরকা নয়।”

তিনি বলেন, আফগানিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে “হিজাবের ব্যাখ্যা ভিন্ন” এবং অনেক ক্ষেত্রেই তা শরিয়া আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

অন্যদিকে মানবাধিকারকর্মীরা অভিযোগ করেছেন, তালেবানের নিরাপত্তাকর্মীরা গত এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে প্রবেশকারী নারীদের বোরকা পরতে বাধ্য করছেন। এমনকি এটা শুধু হাসপাতালেই নয়— স্কুল, সরকারি দপ্তর ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও তারা এই কাজ করছেন।

হেরাতের এক নারী অধিকারকর্মী বিবিসিকে বলেন, “হাসপাতাল, স্কুল কিংবা সরকারি অফিসে যেতে হলে এখন নারীদের বোরকা পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।”

এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এক আফগান কর্মী সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। ওই ভিডিওতে কিছু নারীকে বোরকা পুড়িয়ে প্রতিবাদ করতে দেখা যাচ্ছে। তবে ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি বিবিসি।

১৯৯০-এর দশকে প্রথম দফায় ক্ষমতায় থাকাকালীনও তালেবান নারীদের জন্য বোরকা বাধ্যতামূলক করেছিল। আর ২০২১ সালের আগস্টে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে তারা নারীদের ওপর ধারাবাহিকভাবে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে চলেছে। ২০২২ সালে নারীদের জন্য সম্পূর্ণ মুখঢাকা পোশাক পরিধানের নির্দেশনা জারি করা হয়। যদিও সেসময় সেটিকে ‘পরামর্শ’ হিসেবে বর্ণনা করেছিল তালেবান।

তবে এমএসএফ জানায়, এবারই প্রথম হেরাতে এই নির্দেশ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে। সারা শাতো বলেন, “গত কয়েক দিনে হাসপাতালে বোরকা পরা নারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।”

বর্তমানে নারীদের বেশিরভাগ কর্মক্ষেত্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ করেছে তালেবান। এছাড়া দেশটিতে মেয়েদের মাধ্যমিক শিক্ষাও বন্ধ রয়েছে। জাতিসংঘ এই অবস্থাকে “লিঙ্গভিত্তিক বর্ণবৈষম্য” হিসেবে বর্ণনা করে বারবার এর অবসান দাবি করেছে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
মুর্শিদাবাদে আজ 'বাবরি মসজিদের' ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
মুর্শিদাবাদে আজ 'বাবরি মসজিদের' ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলি
পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলি
‘ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পদক্ষেপ জরুরি’
‘ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পদক্ষেপ জরুরি’
পশ্চিম তীরের পাঁচটি ঐতিহাসিক নিদর্শন জব্দ করল ইসরাইল
পশ্চিম তীরের পাঁচটি ঐতিহাসিক নিদর্শন জব্দ করল ইসরাইল