শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫

ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে জার্মান পুলিশ মোতায়েন

বৈশাখী ডেস্ক
প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৩৯ এএম
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৪১ এএম

মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জার্মানি সম্প্রতি ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে নিরস্ত্র পুলিশ কর্মকর্তাদের একটি দল মোতায়েন করেছে, যারা স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও পুনর্গঠনে সহায়তা করবে। এই পদক্ষেপকে ইউরোপীয় কূটনীতির এক “গঠনমূলক” দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বুধবার (১২ নভেম্বর) জার্মান বার্তাসংস্থা ডিপিএ ও আনাদোলু এজেন্সি–এর প্রতিবেদনে জানানো হয়, জার্মানি ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে নিরস্ত্র পুলিশ কর্মকর্তাদের পাঠিয়েছে। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো—ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতপ্রবণ অঞ্চলে নিরাপত্তা কাঠামো পুনর্গঠন করা এবং স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কার্যকরভাবে পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া। জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডব্রিন্ডট বলেছেন, “মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তির জন্য একটি শক্তিশালী ও পেশাদার পুলিশ বাহিনী অপরিহার্য।” তাই জার্মানি তার দীর্ঘদিনের সহযোগিতা কর্মসূচিকে আরও প্রসারিত করছে।

এই মিশনে পাঠানো কর্মকর্তারা জেরুজালেমে অবস্থিত অফিস ফর সিকিউরিটি (ওএসসি)–এর আওতায় কাজ করছেন। এখান থেকেই তারা ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর প্রশিক্ষণ ও সাংগঠনিক সহায়তা প্রদান করবেন। ডব্রিন্ডট জানান, কর্মকর্তারা স্থানীয় বাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবেন, যাতে ফিলিস্তিনি বেসামরিক প্রশাসন নিজস্বভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিচালনায় আরও সক্ষম হয়।

সংবাদ সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, চার সদস্যের জার্মান পুলিশ দলের সদস্যরা প্রায় দুই সপ্তাহ আগে ফিলিস্তিনি এলাকায় পৌঁছেছেন। তারা নিরস্ত্র অবস্থায় কাজ করবেন এবং তাদের প্রধান কাজ হবে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নিরাপত্তা বাহিনীর প্রশিক্ষণ, তদারকি এবং সক্ষমতা উন্নয়ন। এটি জার্মানির বহু বছরের শান্তি–সহায়তা কর্মসূচির অংশ, যা মূলত প্রশাসনিক ও আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক সহায়তার ওপর কেন্দ্রীভূত।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডব্রিন্ডট বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি কেবল কূটনৈতিক চুক্তির মাধ্যমে নয়, বরং স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার মাধ্যমেই সম্ভব।” তিনি আরও জানান, “গত ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে জার্মান পুলিশ ফিলিস্তিনি বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে। এই নতুন মিশন সেই ধারাবাহিক প্রচেষ্টারই অংশ।”

জেরুজালেমভিত্তিক অফিস ফর সিকিউরিটি (ওএসসি) ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা ব্যবস্থার সংস্কারে কাজ করছে। নতুন জার্মান দলটি ওএসসি’র তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালাবে, যাতে ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনী মানবাধিকার, সংকট ব্যবস্থাপনা ও কমিউনিটি পুলিশিং বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারে। এই সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব আরও মজবুত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

জার্মানি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা সংস্কারে অন্যতম সক্রিয় ইউরোপীয় দেশ। ২০০৮ সাল থেকে দেশটি ফিলিস্তিনি পুলিশ প্রশিক্ষণ, সরঞ্জাম সরবরাহ এবং প্রশাসনিক সহায়তা প্রদান করে আসছে। এবারের মিশন সেই দীর্ঘমেয়াদি সহায়তার একটি পরিপূরক ধাপ। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এটি কেবল নিরাপত্তা নয়, বরং সামাজিক আস্থা ও প্রশাসনিক সক্ষমতা বৃদ্ধির একটি প্রকল্প।

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, গাজা ও পশ্চিম তীরে চলমান উত্তেজনার মধ্যে জার্মান পুলিশের এই উপস্থিতি রাজনৈতিক ভারসাম্য আনতে সাহায্য করতে পারে। অনেকেই মনে করেন, ইউরোপীয় দেশগুলোর সরাসরি সম্পৃক্ততা স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে পারে এবং ভবিষ্যতে শান্তি আলোচনা পুনরায় শুরু করার পথ তৈরি করবে।

তবে এই পদক্ষেপ সহজ নয়। ইসরায়েলি নজরদারি, স্থানীয় রাজনৈতিক বিভাজন ও অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা জার্মান দলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তবুও জার্মান কর্তৃপক্ষ আশাবাদী যে তাদের উপস্থিতি ফিলিস্তিনি সমাজে আস্থা বাড়াবে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
মুর্শিদাবাদে আজ 'বাবরি মসজিদের' ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
মুর্শিদাবাদে আজ 'বাবরি মসজিদের' ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলি
পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলি
‘ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পদক্ষেপ জরুরি’
‘ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পদক্ষেপ জরুরি’
পশ্চিম তীরের পাঁচটি ঐতিহাসিক নিদর্শন জব্দ করল ইসরাইল
পশ্চিম তীরের পাঁচটি ঐতিহাসিক নিদর্শন জব্দ করল ইসরাইল