
		রীতা নাহার : পেশা হিসেবে পাইলট অত্যন্ত আকর্ষণীয়। তবে পাইলট হওয়ার শর্ত পূরণের জন্য কী করেননি তিনি! জাল সনদ দিয়ে চাকরি নিতে ও তা টিকিয়ে রাখতে নিয়েছেন একের পর এক প্রতারণার আশ্রয়। মানবিক বিভাগে পড়ে নিয়েছেন কারিগরি কলেজের সনদ। অকৃতকার্য ছাত্র রাতারাতি বনে গেছে জিপিএ চার পাওয়া ছাত্রী। মানবিক বিভাগে পড়েও পাইলট হওয়ার অদম্য বাসনা পূরণ করা সাদিয়ার চাঞ্চল্যকর ঘটনা। জিএমজি এয়ারলাইন্সের কেবিন ক্রু হিসেবে ২০০১ সালে সাদিয়া আহমেদের ক্যারিয়ার শুরু। দায়িত্বে অবহেলায় ২০০৫ সালে চাকরিচ্যুত হন। পাইলট হওয়ার জন্য ২০১০ সালে কমার্শিয়াল পাইলটের লাইসেন্স অর্জন করেন। ২০১৩ সালে রিজেন্ট এয়ারওয়েজে যোগ দিয়ে অদক্ষতার কারণে ২০১৬ সালে চাকরিচ্যুত হন। ২০১৭তে ইউএস বাংলায় নিয়োগ পেলেও তা বেশি দিন টেকেনি। ২০১৯ এ স্বামী ক্যাপ্টেন সাজিদ আহমেদের বদৌলতে বিমানের বোয়িং ৭৩৭ এর ফার্স্ট অফিসার হিসেবে যোগ দেন। ২০১৯ সালে সাদিয়া’সহ বিমানের ১৭জন ক্যাপ্টেন ও ফার্স্ট অফিসার নিয়োগ পায়। এর ৯ জনেরই জাল সনদ, লাইসেন্সিং পরীক্ষায় অনুত্তীর্র্ণ, অযোগ্যতা ও উড্ডয়ন ঘাটতি থাকায় প্রশ্নবিদ্ধ হয় নিয়োগ প্রক্রিয়া। মানবিক বিভাগে পড়েও বিজ্ঞান বিভাগের জাল সনদ ব্যবহার করে পাইলটের লাইসেন্স পায় সাদিয়া। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ২০২৩ সালের ২২শে নভেম্বর লাইসেন্স বাতিল করে তার বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা দেয় সিভিল এভিয়েশন। এর আগে একই বছর ৩০শে মার্চ তাকে অব্যাহতি দেয় বিমান। পরবর্তীতে সিভিল এভিয়েশন ও বিমানের এসব সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সিভিল এভিয়েশনে রিভিউ আবেদন করে সে। এর পরিপ্রেক্ষিতে একটি রিভিউ কমিটি গঠন করে সংস্থাটি। ঐ আবেদনে পাইলট লাইসেন্স পেতে ২০০৮ সালে এইচএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষায় পাস করার দাবি সাদিয়ার। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট ও তার সার্টিফিকেটে জয়পাড়া টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে পাস করার তথ্যও পাওয়া গেছে। সে অনুযায়ী এগ্রো মেশিনারিতে জিপিএ চার পেয়ে উত্তীর্ণ সাদিয়া। অবশ্য নবাবগঞ্জ দোহারের এই কলেজ গিয়ে মেলে ভিন্ন তথ্য। ঐ বছরের পরীক্ষার্থী তালিকায় সাদিয়ার নাম নেই। এমনকি ঐ কলেজের ছাত্রীও নয়। ঐ একই রেজিস্ট্রেশন ও রোল নম্বরে প্রকৃত পরীক্ষার্থীর নাম নাসির উদ্দিন। তিনি অনুত্তীর্ণ। এ ঘটনায় বিস্মিত কলেজ কর্তৃপক্ষ। জয়পাড়া সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ এর অধ্যক্ষ নূর উদ্দিন আহমেদ ওবাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এর চেয়ারম্যান মোঃ রাকিব উল্লাহ।এ ধরনের ঘটনা প্রশ্রয় পেলে এয়ারলাইন্সের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়বে বলে মনে করেন বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পাইলট এসোসিয়েশন সাবেক সভাপতি ক্যাপ্টেন এস এম হেলাল। এমন জালিয়াতি ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন-আইকাও এর রেগুলেশনের লংঘন বলে জানিয়েছে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড এন্ড রেগুলেশনস এর সদস্য গ্রুপ ক্যাপ্টেন মুকিত উল আলম মিয়া ও সিভিল এভিয়েশন চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুরুল কবীর ভুইঁয়া। এভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই জাল সনদ দিয়ে কিভাবে লাইসেন্স পেলেন সাদিয়া? আরও কেউ এ ধরনের জালিয়াতি করেছে কী না! কিংবা সিভিল এভিয়েশনের কোনো চক্র এতে জড়িত কিনা তাও খতিয়ে দেখতে হবে।
মন্তব্য করুন