
		পার্থ রহমান : বধির স্কুলের জন্য সরকারের দেয়া সম্পত্তি জোর-দখল করে নিয়ে পেট্রোল পাম্প নির্মাণ, পুরনো ঐতিহ্য ধ্বংস করে বহুতল মার্কেট গড়ে তোলাসহ নানা অপকর্মের হোতা মদিনা গ্র“প। ক্ষমতার জোরে রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের অসংখ্য সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গা দখল করার অসংখ্য অভিযোগ আছে এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
পুরনো ঢাকার প্রাণকেন্দ্র চকবাজারে অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে বাহারি নকশায় তৈরী হয় জাহাজবাড়ি। দোতলা এই বাড়িটি ঢাকার প্রথম বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে বিবেচিত হতো। ২০১৭ সালে নান্দনিক এই জাহাজবাড়িসহ পুরনো ঢাকার ২২০০টি ঐতিহ্যবাহী ভবন ও স্থাপনা ধ্বংস, পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত। কিন্তু সেই আদেশ উপেক্ষা করে ২০১৯ সালের জুন মাসে ঈদের ছুটির রাতে বাড়িটি ভেঙ্গে ফেলে তৎকালীন এম,পি হাজী সেলিম। পুরণো ঐতিহ্য ধ্বংস করে সেখানে গড়ে তুলেছেন নিজের সন্তানের নামে বানিজ্যিক ভবন ‘সোলায়মান সেলিম টাওয়ার’।
অনুসন্ধানে জানা যায়, জাহাজবাড়ি ওয়াকফ সম্পত্তি হিসেবে স্থানীয়দের কাছে পরিচিত। এই ভবনের পজিশন কিনে কিংবা দোকান ভাড়া নিয়ে যারা ব্যবসা করতেন তারা ওয়াকফ প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়মিত ভাড়া দিতেন। কিন্তু হাজী সেলিম সেই সম্পত্তি নিজের কেনা দাবি করে পুরনো ব্যবসায়ীদের বিতাড়িত করে বহুতল ভবন গড়েছেন। স্থানীয় অনেক ব্যবসায়ীকে জায়গা লিখে দিতে হাজী সেলিম বাধ্য করেছেন বলেও অভিযোগ আছে।
জানাগেছে, জাহাজবাড়ি ভেঙ্গে নতুন গড়ে তোলা এই সোলায়মান সেলিম টাওয়ারের প্রতিটি স্কয়ারফুট আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা দরে ছোট ছোট কয়েকশ দোকান ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেছে হাজী সেলিমের প্রতিষ্ঠান।
লালবাগের কামালবাগে বেঁড়িবাধের পাশে মদিনা ফিলিং স্টেশন, গ্যারেজ ও কারখানা গড়ে উঠেছে সরকারি বধির স্কুলের জায়গায়। অনুসন্ধানে জানা যায়, ১ একর আয়তনের সরকারি এই জায়গাটি ২০০৫ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশে তৎকালীন জেলা প্রশাসক ঢাকা বধির স্কুলের জন্য বরাদ্দ দেন। হাজী সেলিমের নজরে পড়া জায়গাটি একাধিকবার বধির স্কুল কর্তৃপক্ষ দখলে নিলেও ক্ষমতার জোরে তা বারবার ছিনিয়ে নেয় হাজী সেলিমের লোকজন।
পুরণো ঢাকায় আরো নানা অপকর্ম আছে হাজী সেলিমের প্রতিষ্ঠান মদিনা গ্র“পের বিরুদ্ধে। জানাগেছে মদিনা গ্র“পের বর্তমান জেনারেল ম্যানেজার নাজিম জোয়ার্দার এসব অপকর্মের হোতা ও ইন্ধনদাতা। এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তার সাড়া মেলেনি।
পুরনো ঢাকায় মদিনাগ্র“পের বিরুদ্ধে আরো অসংখ্য অপকর্মের তথ্য আছে বৈশাখী টেলিভিশনের কাছে। এসব অপকর্মের বিষয়ে জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ, জানান, ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সরকার পরিবর্তনের পর মদিনা গ্র“পের কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব রাজনৈতিকভাবে বদল হয়েছে বলেও জানা গেছে।
মন্তব্য করুন