
		নিজস্ব সংবাদদাতা: রাতের ভোটে বিজয়ী করার বিনিময়ে পতিত সরকার প্রধান শেখ হাসিনার আনুকুল্যে দুদকের সাবেক তিন কমিশনারসহ সচিব পদমর্যাদার ১২ কর্মকর্তা রাজধানীতে পেতে যাচ্ছেন শত কোটি টাকার ভবন। এক সময়ের ক্ষমতাধর এসব কর্মকর্তার জন্য ধানমন্ডিতে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অর্থায়নে সোনার দামের ১২ কাঠা জমিতে গড়ে উঠছে ১৪ তলার বিশাল অট্রালিকা। তড়িঘড়ি করে ইতোমধ্যে ভবনটির পাঁচ তলার কাজ শেষ করে আনা হয়েছে। শেখ হাসিনার হাজারো বে-আইনি ও অনৈতিক নির্দেশনায় একটি গিভ এন্ড টেক প্রকল্প। ধানমন্ডির এই আলীসান ভবনটি তৈরি হচ্ছে অনৈতিক কাজের পুরষ্কার হিসেবে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে সফলভাবে পার করে আনার পুরষ্কার হিসেব সচিব পদ মর্যাদার ১২জন পাচ্ছেন এই ভবনের ফ্ল্যাট। ১৪ তলা ভবনটির নিচ তলায় গাড়ির পার্কিংসহ থাকছে দুই তলা বেইজমেন্ট। ওপরের ১২টি ফ্লোরে দুটি ডুপ্লেক্সসহ থাকছে ২৩টি ফ্ল্যাট, যার ১২টি পাচ্ছেন দুদকের আলোচিত মোজাম্মেল হক খান ও জহুরুল হকসহ ১২ সচিব পদমর্যদার কর্মকর্তা, যাদের বেশিরভাগ ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে রয়েছেন পলাতক।পূর্ত মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ বিভাগ ও রাজউকের তথ্য বলছে, ধানমন্ডির আবাসিক এলাকার সড়ক নং- ৬/এ, ৬৩ নং বাড়ির ১২ কাঠার খাস জমিটি ছিলো পূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধিনে। দিন-রাতের ভোটে বিজয়ী এবং সরকারে টিকিয়ে রাখার প্রক্রিয়ায় সফল হওয়া ১২ সচিবের জন্য ফ্ল্যাট বানিয়ে দিতে ২০১৮ সালে এই জমিটি পরিত্যাক্ত ঘোষণা করে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের অনুকুলে দেয়ার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। তার কার্যালয়ের নির্দেশেই ২০২৪ এর ২৬ মে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ সরকারি অর্থ ব্যয়ে ভবনটি নির্মাণ কাজ শুরু করে। ইতোমধ্যে পাঁচ তলার নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ভাগ্যবান এই সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের অন্যতম হচ্ছেন- ডক্টর মোজাম্মেল হক খান ও মো. জহুরুল হক। তাদের দুটি ফ্ল্যাটই ডুপ্লেক্স। এছাড়া ভাগ্যবান অন্যরা হচ্ছেন- মো. ইউনুসুর রহমান, এম এ কাদের সরকার, ডক্টর এম আসলাম আলম, আকতারী মমতাজ, মো. সিরাজুল হক খান, মো. মঞ্জুরুল বাছিদ, সৈয়দ আমিনুল ইসলাম, মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, এস এম গোলাম ফারুক ও আনিছুর রহমান। তবে সৌভাগ্যবানদের এই তালিকা থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ফয়েজ আহমদ।এক সময়ের ক্ষমতাধর আলোচিত এই ১২ সচিব অবৈধ অর্থ আয়ে ফুলে-ফেঁপে হয়েছেন বটবৃক্ষ। তাদেরই আবার সরকারী জমিতে সরকারের টাকায় ফ্ল্যাট নির্মাণ করে কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ দেয়ার বিষয়টি নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। আর এ নিয়ে বৈশাখী টেলিভিশনের অনুসন্ধান শুরু পর খোদ প্রশাসনেই শুরু হয়েছে তোলপাড়।সরকারি অর্থ ব্যয়ে ভবনটিতে ফ্ল্যাট নির্মাণের বিষয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. নুরুল বাসির। তবে আইন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, অনিয়মের বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে সরকারের। পতিত সরকারের অনৈতিক ও বে-আইনি নির্দেশনায় রাতের ভোটের কারিগর-দুর্নীতিবাজ সচিবদের ফ্ল্যাট নির্মাণ করে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হাফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, প্রশাসন যন্ত্রের কারসাজিতে বিজয়ী স্বৈরাচারি সরকারকে টিকিয়ে রাখতে দায়িত্ব পালন করেছেন আলোচিত এই সচিবরা। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিশেষ মহলকে পুর®কৃত করার লক্ষ্যে ক্ষমতার অপব্যাবহারে অবৈধ এই প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। পনের বছরের সৈরাচারি সরকারের দুর্নীতি আর লুটপাটের হাজারো প্রকল্প ছিলো দেশজুড়ে। এরই ছোট একটি প্রকল্প এই ধানমন্ডিতে। বিশিষ্টজনদের মত সাধারণ মানুষের দাবি, বারো সচিবের জন্য গিভ এন্ড টেকের এই চুক্তি বাতিল করে সরকারের অধিনে নেয়া হোক ফ্ল্যাটগুলো।
মন্তব্য করুন