
		জুলাই গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হলেও এখন রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন মুখ খুলেছেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। জুলাই আন্দোলন, ২০১৮ সালের নির্বাচনসহ নানা ইস্যুতে চাঞ্চল্যকর ও ভয়ংকর সব তথ্য দিয়েছেন সাবেক এই পুলিশ প্রধান।
২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগের রাতে শেখ হাসিনাকে ৫০ শতাংশ ভোট ব্যালট বাক্সে ভরে ফেলার পরামর্শ দিয়েছিলেন ওই সময়ের পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারী, যার প্রতিফলন ঘটেছিল। ২০২৪-এর আন্দোলন দমনে মারণাস্ত্র ব্যবহার, হেলিকপ্টার থেকে গুলি ও ব্লক রেইডের সিদ্ধান্ত হয় রাজনৈতিকভাবে।
আসামি থেকে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) ক্যামেরা ট্রায়ালে জবানবন্দিতে এসব কথা জানান। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ০১- এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেলে এ সাক্ষ্য বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে শুরু হয়। গত ১০ জুলাই ট্রাইব্যুনালে নিজের দায় স্বীকার করেন শেখ হাসিনার এ মামলায় স্বপ্রণোদিত হয়ে রাজসাক্ষী হতে চান চৌধুরী মামুন।
মামুন জানান, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশে সমন্বয়কদের আটক করে মানসিক নির্যাতন করা হয়। সমন্বয়কদের গ্রেপ্তার করে আন্দোলন প্রত্যাহারের যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিলো তা এসেছিল ডিজিএফআই'র পক্ষ থেকে। এটির বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তখনকার ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদকে। লেথাল উইপেন ব্যবহারের নির্দেশনা এসেছিল শেখ হাসিনার কাছ থেকে। আর মারণাস্ত্র ব্যবহারে বেশি উৎসাহী ছিলেন সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান হাবিব ও ডিবি হারুন। তিনি জানান, রাজনৈতিক ভিন্নমত ও সরকারের জন্য হুমকি হয় এমন মানুষদের ধরে এনে রাখা হতো র্যাব-১ এ টিআইএফ নামে গোপন বন্দিশালায় ও ক্রসফায়ার করা হতো। অন্যান্য র্যাবের ইউনিটেও ছিল এমন বন্দিশালা।
পুলিশে গোপালগঞ্জ সিন্ডিকেট নিয়েও জবানবন্দি দেন জুলাই আন্দোলনের সময়ে পুলিশ প্রধানের দায়িত্বে থাকা চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর পুলিশে রাজনৈতিক প্রভাব আরও বেড়ে যায়। প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন কিছু কিছু কর্মকর্তা। ঊর্ধ্বতন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে তাদের সরাসরি যোগাযোগ ছিল।
তিনি বলেন, এসব কর্মকর্তা প্রায় রাতেই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় বৈঠকে করতেন। গোপন সেসব বৈঠক গভীর রাত পর্যন্ত চলত। বৈঠকে অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা হলেন- সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিবিপ্রধান হারুনুর রশীদ, এসবির মনিরুল ইসলাম, ঢাকার ডিআইজি নুরুল ইসলাম, অ্যাডিশনাল ডিআইজি বিপ্লব কুমার, এএসপি কাফী, ওসি মাজহার, ফোরকান অপূর্বসহ আরো অনেকে। এর মধ্যে কারো কারো সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি যোগাযোগ ছিল।
সাবেক আইজিপি ট্রাইব্যুনালে বলেন, সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের ব্যক্তিদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকায় চেইন অব কমান্ড মানতেন না এসব কর্মকর্তা। তার দাবি, ‘আমি চাইতাম তারা (পুলিশ কর্মকর্তারা) পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করুক। মূলত পুলিশ বাহিনীতে গড়ে তোলা দুটি গ্রুপই এসব কর্মকাণ্ড চালাত। এছাড়া দুই গ্রুপের নেতৃত্বদানকারীরা চাইতেন তাদের নিজস্ব বলয়ের লোকজন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পোস্টিং পাক এবং ঢাকায় থাকুক।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে আসতো এসব নির্দেশনা। কখনো নির্দেশনা দিতেন তারেক সিদ্দিকী। আর আয়নাঘরে আটক ও ক্রসফায়ারে হত্যার মতো কাজগুলো করতেন র্যাবের এডিসি অপারেশন ও গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক। এর আগে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনে আহত, শহীদ পরিবারের সদস্য, চিকিৎসকসহ ৩৫ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ মাসেই এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হওয়ার প্রত্যাশা করছে প্রসিকিউশন।
মন্তব্য করুন