
		বহুল আলোচিত চূড়ান্ত জুলাই সনদ বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হতে পারে। এতে এমন তিনটি 'বিতর্কিত' প্রতিশ্রুতিতে সংশোধন আনা হয়েছে। যেগুলো নিয়ে কয়েকটি দল, বিশেষত বিএনপি আপত্তি তুলেছিল। তবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এতে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না।
কমিশনের সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের পর আজ ৩ সেপ্টেম্বর বুধবার সনদ চূড়ান্তকরণ নিয়ে অধ্যাপক রীয়াজ আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সঙ্গে বৈঠক করে। দলগুলো যে বাস্তবায়ন প্রস্তাব দিয়েছে তা উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়েছে। কয়েকটি দল বাস্তবায়নের জন্য গণসমাবেশ, গণভোট, সাংবিধানিক সংস্কার অধিবেশন কিংবা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির মতো প্রক্রিয়া প্রস্তাব করেছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় কমিশন আবার বসবে এবং সনদ চূড়ান্ত করার পর তা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে। এরপর একটি জনসভায় রাজনৈতিক দলগুলো সনদে স্বাক্ষর করবে। অধ্যাপক রীয়াজ জানান, একটি জনসভায় করে রাজনৈতিক দলগুলোর সনদে স্বাক্ষর করবে।
গত ১৬ আগস্ট কমিশন জুলাই গণ-আন্দোলনের চেতনা অগ্রাধিকার দিয়ে জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ আট দফা প্রতিশ্রুতির প্রস্তাব দেয়। তারমধ্যে থেকে তিনটি বিষয়ে আপত্তি ওঠে- সনদ ও সংবিধান বা বিদ্যমান আইনের মধ্যে দ্বন্দ্ব হলে সনদের প্রাধান্য দেওয়া, সনদের ধারা বা সুপারিশের ব্যাখ্যার ক্ষমতা কেবল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের হাতে থাকা এবং সনদের বৈধতা আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না।
কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তির কারণে এসব প্রতিশ্রুতিতে সংশোধন আনা হয়েছে। তিনি বলেন, আইন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে এমন প্রস্তাব রাখা হচ্ছে যা আইনি দিক থেকে গ্রহণযোগ্য এবং রাজনৈতিকভাবে টেকসই হবে। চূড়ান্ত সনদটি দুই খণ্ডে সাজানো হবে। প্রথম খণ্ডে থাকবে তাৎক্ষণিকভাবে প্রশাসনিক আদেশ বা অধ্যাদেশের মাধ্যমে কার্যকরযোগ্য বিষয়গুলো আর দ্বিতীয় খণ্ডে থাকবে দীর্ঘমেয়াদি বাস্তবায়ন প্রয়োজনীয় সংস্কার। তবে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সনদের সঙ্গে যুক্ত হবে না।
অধ্যাপক রীয়াজ জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও আইন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ পাওয়ার পর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত সুপারিশ সরকারকে আলাদাভাবে জমা দেওয়া হবে। কমিশনের মেয়াদ ১৫ সেপ্টেম্বরের পর আর বাড়ানো হবে না বলেও নিশ্চিত করেন আলী রিয়াজ।
প্রসঙ্গত, জুলাই সনদ চূড়ান্ত করতে কমিশন ইতোমধ্যে ২৮টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছে এর মধ্যে ২৬টি দলের মতামত পাওয়া গেছে। গত বছর আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে পরবর্তীতে সেগুলোর প্রধানদের নিয়ে গঠিত হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এই কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে করে সমঝোতার ভিত্তিতে জুলাই সনদ প্রণয়ন করতে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যৎ শাসন কাঠামোর নীলনকশা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
চলতি বছরের মার্চে কমিশন প্রথম দফায় ৩২টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে ১৬৬টি প্রস্তাব নিয়ে বৈঠক করে, যেখানে ৬২টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়। দ্বিতীয় দফায় আরও ২০টি বিষয়ে সমঝোতা হয়। তবে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ও কয়েকটি দল ৯টি বিষয়ে ভিন্নমত দেয়। ৮৪টি প্রস্তাবে সম্মতির ভিত্তিতে প্রস্তুত করা প্রাথমিক খসড়া জুলাই ২৮ তারিখে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়। সেই খসড়ায় আট দফা প্রতিশ্রুতি চাওয়া হয়েছিল।
কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এবার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে চূড়ান্ত সনদ পাঠানো হবে। এরপর আর কোনো মতামত নেওয়া হবে না।
মন্তব্য করুন