শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫

রাজধানীতে আইএলও কনভেনশন অনুস্বাক্ষর সম্পর্কিত মতবিনিময় সভা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:২০ পিএম

আইএলও কনভেনশন অনুস্বাক্ষর বাস্তবায়ন সম্পর্কিত পরবর্তী করণীয় খুঁজে বের করতে এক মতবিনিময় সভা আজ মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) সকাল দশটায় রাজধানীর বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। গণসাক্ষরতা অভিযানের আয়োজনে ওই সভায় সহযোগিতা করে অক্সফাম ইন বাংলাদেশ। সভায় সভাপতিত্ব করেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। এ সময় তিনি বলেন আগামী ২০ নভেম্বর আইএলও এর সাধারণ সভায় এটি উপস্থাপন করবো এবং আমাদের উদ্যোগ যেন শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারে ভূমিকা রাখতে পারে এমন জোরালো ভূমিকাই রাখার চেষ্টা করবো। ভাল হোক মন্দ হোক আমরা একটা শ্রম আইন করে যেতে পারলাম যেটা দীর্ঘদিন ধরে দাবি ছিল। শুধু আইন করলেই হবেনা সেটা মানতেও হবে। যেসব গার্মেন্টস বন্ধ হয়েছে এগুলো কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপী হয়েছে এগুলো বন্ধ হওয়ারই কথা ছিল। বেক্সিমকো এক ব্যাংক থেকেই ২৭ হাজার কোটি টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। নাসা গ্রুপকে শুধু শ্রমিকদের জন্য বাঁচাতে হয়েছে। অনেক মালিকদের আমরা থানায় নিয়ে গেছি, মেশিন বিক্রি করা হয়েছে, জমি এমনকি গাড়িও বিক্রি করা হয়েছে শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য। এখানে মালিক এবং শ্রমিক উভয়ই দায়িত্ব ছিল এটিকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য। বন্ধ হলে মালিকদের পাশাপাশি শ্রমিকদের ক্ষতিই বেশি হয়। শুধুমাত্র সরকার সব করবে সেটা হবেনা মালিক, শ্রমিক এমনকি নাগরিক সমাজেরও অনেক দায়িত্ব আছে। এনজিওগুলো শ্রমিক এবং শ্রমিক নেতাদেরও প্রশিক্ষণ পারেন। কেননা রাতারাতি অনেকেই শ্রমিক নেতা হয়ে যায় এবং নানা ধরনের অসুবিধা তৈরি করে। অন্যদিকে এমন অনেক প্রতিষ্ঠানও আছে যাঁরা শ্রমিকবান্ধব হওয়ায় ভালভাবে প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন এবং উন্নতি করছেন। সভায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও ক্যাবের চেয়ারপার্সন এএইচএম সফিকুজ্জামান, শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান ও বিলস এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ, নারী সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক, আইএলও এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার নিরান রামজুথান, অক্সফাম ইন বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর আশিষ দামলে, প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাহমুদা সুলতানা, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তাসলিমা আখতার। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন গণসাক্ষরতা অভিযানের উপ-পরিচালক তপন কুমার দাশ।

সভায় আলোচনাপত্র উপস্থাপন করেন অক্সফাম ইন বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর তারেক আজিজ। উপাস্থাপনায় তিনি বলেন, বাংলাদেশ শ্রম অধিকার সুরক্ষায় দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে। ২০২৫ সালে সরকার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কনভেনশন- C155 (Occupational Safety and Health), C187 (Promotional Framework for OSH) & C190 (Violence and Harassment)-অনুমোদন করেছে এবং সেইসঙ্গে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এর সংশোধনী অধ্যাদেশ জারি করেছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে এ তিনটি কনভেনশন একত্রে অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করল।

তিনি আরো বলেন, নতুন সংশোধনীতে শ্রমিকের নিরাপত্তা, মর্যাদা ও সামাজিক সুরক্ষা জোরদার করা হয়েছে। এর আওতায় গৃহকর্মী ও নাবিকদের “শ্রমিক” হিসেবে স্বীকৃতি, নিয়োগপত্রে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয় অন্তর্ভুক্তি, ৫০ জনের বেশি শ্রমিক থাকলে নিরাপত্তা কমিটি গঠন, দুর্ঘটনা ক্ষতিপূরণ তহবিল, নারী শ্রমিকদের সমান মজুরি ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধ এবং মাতৃত্বকালীন ছুটি ১২০ দিনে সম্প্রসারণসহ গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার আনা হয়েছে। এছাড়া বাধ্যতামূলক প্রভিডেন্ট ফান্ড, সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণের সুযোগ এবং কর্মক্ষেত্রে হয়রানি প্রতিরোধে কমিটি গঠন করা হবে। এই সংস্কারের পরবর্তী ধাপে সরকার শ্রম পরিদর্শক সংখ্যা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, শ্রমিক ও নিয়োগকর্তাদের সচেতনতা বাড়ানো এবং ত্রিপক্ষীয় সংলাপ জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পরামর্শ হিসেবে বলেছেন ‘কাগজে সই করাই শেষ নয়, বরং এখান থেকেই আসল কাজের শুরু। উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা বলেন, আইএলও কনভেনশন (১৫৫, ১৮৭, ১৯০) অনুস্বাক্ষরের জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং বাস্তবায়নের জন্য এটির আইনি ভিত্তি প্রদানের দাবি জানান। এই কনভেশনের সুফল সম্পর্কে অংশীজনদের জানানোর জন্য টেলিভিশন, বেতারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানোর অনুরোধ জানানো হয় যাতে স্বাক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন নন তাঁরা জানতে পারেন। এছাড়াও সুপারিশ হিসেবে ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টার রাখা, গৃহকর্মীদের শ্রম আইনে অন্তুর্ভুক্ত করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ সংক্রান্ত রায়কে আইনে পরিণত করা, গার্মেন্টসসহ সকল ক্ষেত্রে নারীদের প্রতি যে বৈষম্য করা হয় তা হ্রাস করা, মজুরী বৈষম্য দূর করা, প্রজনন স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন করা, কর্মক্ষেত্রে নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য করা, গৃহকর্মীদের ন্যূনতম মজুরী নির্ধারণ করা, গৃহশ্রমিকদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা রাখা, শ্রমিক অধিকার নিশ্চিতে শ্রমিকদের যুক্ত করে মনিটরিং করা, শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র (ডে-কেয়ার সেন্টার) রাখা, জেন্ডার বেইজড সহিংসতা নিরসনে জরুরী উদ্যোগ গ্রহণ করার জোরালো দাবি জানান। সভায় আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন গৃহকর্মী, শ্রমিক সংগঠন, গবেষক, উন্নয়নকর্মী, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, গণমাধ্যমকর্মীসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ও দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অর্ধশতাধিক প্রতিনিধি।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ঢাকায় শুষ্ক থাকবে আবহাওয়া
ঢাকায় শুষ্ক থাকবে আবহাওয়া
এক সপ্তাহে ডেঙ্গুতে প্রাণ গেল ১৭ জনের
এক সপ্তাহে ডেঙ্গুতে প্রাণ গেল ১৭ জনের
১ জানুয়ারি থেকে নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নের দাবি
১ জানুয়ারি থেকে নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নের দাবি
প্রতিশ্রুতি রক্ষায় জার্মানি থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠাচ্ছে কাতারের আমির
প্রতিশ্রুতি রক্ষায় জার্মানি থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠাচ্ছে কাতারের আমির