
		অবশেষে নির্বাচনের সময় ঘোষণা করেছে সরকার। আগামী বছর রমজানের আগে ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন আয়োজন করা হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন। নির্বাচনের সময় ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এ তথ্য জানান।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে দোদুল্যমানতার কথা অনেকে জানিয়েছিলেন। প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে তাদের মধ্যে সেই দোদুল্যমানতা আর রইল না। সারা জাতি এখন নির্বাচনমুখী পরিবেশের মধ্য দিয়ে যাবে। নির্বাচনের আবহ তৈরি হবে। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অবাধ এবং বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে প্রশংসিত হবে বলে আমরা আশা করি। সেই লক্ষ্যে পুরো জাতি ও জনগণকে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে আহ্বান জানাচ্ছি।
এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের সময় ঘোষণায় সন্তোষ প্রকাশ করা হলেও সন্তুষ্ট হতে পারেনি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দৃশ্যমান সংস্কার এবং জুলাই সদনদের বাস্তবায়ন ছাড়া একতরফা জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা জুলাই আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থি।
নির্বাচনের সময় ঘোষণার বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আগামী নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য যে পরিবেশ সৃষ্টিতে প্রধান উপদেষ্টা যেসব পরামর্শ দিয়েছেন, সেটা অবশ্যই প্রতিপালনযোগ্য। তিনি ঘোষণা করেছেন নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি পাঠাবেন ২০২৬ সালের রমজানের আগে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য। নির্বাচন কমিশন যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। অবশ্যই নির্বাচন কমিশন যথাসময়ে তফশিল ঘোষণা করবে ।তিনি আরও বলেন, ‘এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আরও প্রতিষ্ঠিত হবে। সবকিছুই সচল হবে, গতিশীল হবে-এটা আমরা আশা করি।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। একটি জুলাই ঘোষণাপত্র। আরেকটি জাতির উদ্দেশে ভাষণের মধ্য দিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা। আমরা দুটোকেই স্বাগত জানাই। জুলাই ঘোষণাপত্রের যেসব ঘোষণা তাকে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যথাযথ জায়গায় সংবিধানে সেটা স্থাপন করা হবে। জুলাই যোদ্ধাদের; ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের জাতীয় বীরের মর্যাদা দেওয়াটা সমুচিত হয়েছে। সেটা আমাদের প্রাণের দাবি। যারা আহত হয়েছেন, যারা বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের আইনি সুরক্ষা, সহযোগিতা এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) যেমন দিয়েছেন, আমরাও দিচ্ছি।
যা বলছে এনিসিপি: প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত নির্বাচনের সময়সীমার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এনসিপির নেতারা। তারা বলেছেন, দৃশ্যমান সংস্কার এবং জুলাই সনদের বাস্তবায়ন ছাড়াই একতরফাভাবে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা জুলাই আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থি। ফ্যাসিবাদ হটিয়ে দেশে একটি অবাধ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার যে স্বপ্ন তরুণরা দেখেছিল, এর মাধ্যমে তা বাধাগ্রস্ত হবে। বর্তমানে জাতীয় নির্বচানের আগে দরকার জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, মৌলিক সংস্কারের ভিত্তিতে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন এবং এর আইনি ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। কিন্তু সরকার জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচনের দিকে না হেঁটে বিএনপির চাহিদামতো আগের কাঠামো অনুযায়ী নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বিপরীতমুখী অবস্থান। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পরই এনসিপির নেতারা প্রতিক্রিয়া জানান। তবে এ বিষয়ে আজ বুধবার দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হতে পারে।
মন্তব্য করুন