
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকেই নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ উঠতে থাকে। এর মধ্যে একটি গুরুতর অভিযোগ ছিল অরক্ষিতভাবে নীলক্ষেতে অরক্ষিত অবস্থায় ব্যালট পেপার ছাপানোর। প্রার্থীদের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনের তদারকি ছাড়াই নীলক্ষেতের একটি ছাপাখানায় বিপুলসংখ্যক ব্যালট ছাপানো হয়েছে, যা নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
নির্বাচনের আট দিন পর গত ১৭ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে এ অভিযোগ তোলেন স্বতন্ত্র সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী আরাফাত চৌধুরী। তিনি লিখেন, ‘ব্যালট পেপারে কোনো সিরিয়াল নম্বর কিংবা কিউআর কোড ছিল না। যে কেউ চাইলে আগে থেকেই যত খুশি তত ব্যালট পেপার ছাপিয়ে রাখতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট আমরা ভোটার উপস্থিতি তালিকা ও ভোটকেন্দ্রের সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করার জন্য লিখিতভাবে আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।’ পরে ২২ সেপ্টেম্বর ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে নীলক্ষেতের গাউসুল আজম মার্কেটের ‘জালাল প্রিন্টিং প্রেসে’ প্রায় ৯৬ হাজার ব্যালট পেপার ছাপা হওয়ার অভিযোগ তোলাসহ ১১টি অভিযোগ তুলে ধরেন তারা। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। অভিযোগ রয়েছে, এই ব্যালট পেপারগুলো ছিল অরক্ষিত ও কোনো সিরিয়াল নম্বরবিহীন, যা সহজেই জালিয়াতির সুযোগ তৈরি করতে পারে।
অভিযোগের সূত্র ধরে এ বিষয়ে জানতে নীলক্ষেত গাউসুল আজম মার্কেটে অনুসন্ধান করে বেসরকারি চ্যানেল নিউজ টোয়েন্টিফোরের এক অনুসন্ধানী দল। তারা নীলক্ষেতে অরক্ষিতভাবে ব্যালট পেপার ছাপানোর সত্যতা নিশ্চিত করেছে। ওই প্রতিবেদনে জালাল প্রিন্টিং প্রেসের মালিক মো. জালালের ভিডিও সাক্ষাৎকার যুক্ত করা হয়। সেখানে জালালকে বলতে শোনা যায়, ফেরদৌস ওয়াহিদ নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি ব্যালট ছাপানোর কাজ পান। ৯৬ হাজারের মতো ব্যালট ছেপেছেন। তিন দিনে এই কাজ শেষ করেছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, নীলক্ষেতে নয়, সর্বোচ্চ গোপনীয়তায় উন্নত মানের ছাপাখানায় তৈরি হয়েছে ব্যালট। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলেছে, যেভাবে ব্যালট ছাপানো হয়েছে, তা নীলক্ষেতের কোনো দোকানে সম্ভব নয়। কারণ ব্যালট ছাপাতে যে ওএমআর মেশিনের প্রয়োজন, তা শুধু নির্দিষ্ট স্থানে রয়েছে এবং সম্পূর্ণ গোপনীয়তা রক্ষা করে ছাপা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গত ২৪ ও ২৫ সেপ্টেম্বর পৃথক দুটি বিবৃতি দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা। সর্বশেষ বিবৃতিতে জানানো হয়, নির্বাচন কমিশন ব্যালট পেপারসংক্রান্ত অভিযোগ অতীব গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে এবং শিগগিরই এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জিএস এস এম ফরহাদ বলেন, ‘নির্বাচনের সময় প্রতিটি প্যানেলের পোলিং এজেন্ট, শিক্ষক, সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন থাকলে প্রশাসনের উচিত তা অ্যাড্রেস করা। তবে শিক্ষার্থীদের মতামতকে অগ্রাহ্য করা উচিত নয়।’
এদিকে ব্যালট ছাপানোর সংখ্যা নিয়েও ছাপাখানা আর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের তথ্যে গরমিল উঠে আসে অনুসন্ধানে। এ পরিস্থিতিতে ডাকসু নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে গত বৃহস্পতিবার রাতে ক্যাম্পাসে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন একদল শিক্ষার্থী, তাঁদের অনেকেই জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হলেও ফল প্রকাশের পরই নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠে আসে। নির্বাচনে ডাকসুর ২৮টি পদের ২৩টিতে জিতেছে ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’।
মন্তব্য করুন