সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫

গবিতে ধর্ষণ-র‍্যাগিংকাণ্ডের উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই শিক্ষার্থীকে মারধর

বৈশাখী ডেস্ক
প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:১৬ পিএম

সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে (গবি) র‌্যাগিং ও ধর্ষণকাণ্ডকে কেন্দ্র করে চলমান উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে মো. নাসিম (২২) নামে এক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। গুরুতর আহত ওই শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

রবিবার (৭ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার নলাম এলাকায় গণ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নাসিম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ১৬ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং গকসু নির্বাচনে ভিপি প্রার্থী ছিলেন।

হামলায় জড়িতরা হলেন- ফলিত গণিত বিভাগের রাজিব হোসেন, সমাজবিজ্ঞান ও সমাজকর্ম বিভাগের আবির হোসেন, বিবিএ বিভাগের তামিম ইকবাল।

মূলত ‘সন্ত্রাসী’ মন্তব্য ও ধর্ষণকাণ্ডে অবহেলার অভিযোগে শিক্ষকের পদত্যাগ চাওয়াকে কেন্দ্র করে আজকের এই মারধরের ঘটনাটি ঘটেছে বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানান, “ধর্ষণের ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর ভুক্তভোগী অভিযোগ দেওয়া সত্ত্বেও প্রক্টরিয়াল বডির সভাপতিসহ যেসকল শিক্ষক বিষয়টিকে আমলে নেননি, তাদের পদত্যাগ দাবি করে গত কয়েকদিন যাবত বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন চলছিল, যার সাথে আমরাও যুক্ত ছিলাম। আজও আমাদের কর্মসূচি ছিল।”

নাসিম জানান, “আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পর রাজিবসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী আমাকে ডাক দিয়ে আন্দোলন চলাকালে ‘সন্ত্রাসী’ বলে করা আমার একটি মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চায়। তারা জিজ্ঞাসা করে যে আমি সন্ত্রাসী কেন বলেছি। আমি তাদের যে আমি তাদের সন্ত্রাসী বলিনি, আমি যারা রেপিস্ট, যারা এ ধরনের কাজ করেছে তাদের সন্ত্রাসী বলেছি।”

“এসব কথার এক পর্যায়ে তারা আমার উপর হামলা চালায়। এছাড়াও, এসময় কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিলুফার সুলতানার ছাত্র আবিরও আমাকে মারধর করে।”

এদিকে আজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যম্পাসে হামলার পর নাসিমকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে আশুলিয়ার গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানকার জরুরী বিভাগ থেকে বাহিরে ডেকে নিয়ে অজ্ঞাতনামা ৪-৫ জন আবারও নাসিমের উপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেছেন নাসিম।

এ-সংক্রান্ত একটি ভিডিও-ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে করা এক মন্তব্যের বিষয়ে রাজিব হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী নাসিমকে বিভিন্ন প্রশ্ন করছেন। কথা বলার এক পর্যায়ে নাসিমকে মারধর শুরু করেন তিনি। এসময় তার সাথে সেখানে উপস্থিত অন্যান্যরাও নাসিমকে মারধর শুরু করে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা জানান, সম্প্রতি ধর্ষণকাণ্ডে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে তিন শিক্ষকের পদত্যাগ চাওয়া হয়। তাদের মধ্যে একজন হলেন কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিলুফার সুলতানা। এরমধ্যে আজ কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিলুফার সুলতানার পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিলও বের করেন কিছু শিক্ষার্থী।

তবে শিক্ষার্থীদের এই মিছিলের ব্যাপারে কিছূ জানেন না দাবি করে কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিলুফার সুলতানা বলেন, “কে বা কারা মিছিল করেছে এসবের কিছুই আমি জানিনা। আমরা সেসময় মিটিংংয়ে ছিলাম। এসময় বাহিরে কিছু শিক্ষার্থী স্লোগান দিচ্ছিল। পরে আমি বেরিয়ে তাদের এসব করতে বারণ করি।”

তিনি বলেন, “আমি তাদের বলি যে লোকে ভাববে যে আমি তোমাদেরকে দিয়ে এটা করাচ্ছি। আমার পদত্যাগ তো কেউ চায়নি। এখানে আমরা মিটিং করছি। আমরা শিক্ষকরা মিটিং করছি। মানে যে সমস্ত অন্যায় ঘটেছে এই কয়দিন ধরে বা যে সমস্ত ঘটনা ঘটেছে সেটা নিয়ে আমরা মিটিং করছি। এর মধ্যে আমার পদত্যাগের প্রশ্ন আসলো কেন? এসব বোলো না তো তোমরা। পরে ওরা শান্ত হয়ে চলে গেছে।”

অন্যদিকে নাসিমকে মারধর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এই ঘটনায় অনুতপ্ত দাবি করে ফলিত গণিত বিভাগের অভিযুক্ত শিক্ষার্থী রাজিব হোসেন বলেন, “আমরা একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলন করেছি। শিক্ষার্থীদের সব যৌক্তিক আন্দোলনের পক্ষে আমি ছিলাম একেবারে শুরু থেকেই। ম্যামের পদত্যাগ চাওয়ার জন্য আজকের ঘটনা না, আজকের ঘটনা মূলত সে (নাসিম) বিভিন্ন সময় আমাকে নিয়ে ট্যাগিং করে। উল্টাপাল্টা কথা বলে, সন্ত্রাসী ট্যাগ দেয়। মূলত এটা নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সে আমাকে ধাক্কা দিলে এর পরিপ্রেক্ষিতে হাতাহাতি হয়।”

এসময় রাজিব নিজেও কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিলুফার সুলতানার পদত্যাগ চান বলে দাবি করেন।

অন্যদিকে অভিযুক্ত সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অপর শিক্ষার্থী সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ৩১ ব্যাচের শিক্ষার্থী আবির হোসেন বলেন, “কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সম্মানিত ডিন মহোদয়কে মিথ্যা অপবাদ ও অশোভন আচরণের অভিযোগে সাধারণ শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে যায়। কিন্তু সেখানে নাসিম ‘সন্ত্রাসীদের ধর’ বলে মন্তব্য করেন। একটি শান্তিপূর্ণ মিছিলে অংশ নেওয়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের 'সন্ত্রাসী' আখ্যা দেওয়ায় সবাই উত্তেজিত হয়ে পড়ে। আমরা চাই না কোনো নির্দোষ শিক্ষককে অসম্মান করা হোক। নাসিমের কথাবার্তা এবং দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনের নামে শিক্ষকদের অপমান, এসবের কারণেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।”

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আবুল হোসেন বলেন, “শিক্ষার্থীরা নিচে আন্দোলনের সময়ে তালা দিয়ে রাখে ফলে নিচে যাওয়ার উপায় ছিলো না। নিচে ঘটে যাওয়া পরিস্থিতি নিন্দনীয়। প্রশাসনিক ভাবে অভিযোগ প্রদান করলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

প্রসঙ্গত, গেল কয়েক সপ্তাহ ধরেই উত্তপ্ত গণ বিশ্ববিদ্যালয়। গত ২৪ নভেম্বর শের আলী নামে এক শিক্ষার্থীকে র‍্যাগিংয়ের ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কারসহ ১৭ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এছাড়া এক শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণের ঘটনায় মামলার জেরে গ্রেপ্তারের পর চারজনকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়।

গত ৩০ ডিসেম্বর মেহেদী হাসান নামে এক শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসে মারধরের ঘটনা ঘটে। সবশেষ আজ নাসিম নামে আরেক শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসে মারধরের ঘটনা ঘটে। এসব বিভিন্ন ঘটনায় প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ রয়েছে শিক্ষার্থীদের।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
পেশাগত উৎকর্ষতায় দক্ষ জনশক্তি ও প্রশিক্ষণের তাগিদ ঢাবি ভিসির
পেশাগত উৎকর্ষতায় দক্ষ জনশক্তি ও প্রশিক্ষণের তাগিদ ঢাবি ভিসির
৫ সরকারি কলেজের মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের শাহবাগ অবরোধ
৫ সরকারি কলেজের মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের শাহবাগ অবরোধ
রবিবার থেকে বার্ষিক পরীক্ষা নেবেন  প্রাথমিকের শিক্ষকরা
রবিবার থেকে বার্ষিক পরীক্ষা নেবেন প্রাথমিকের শিক্ষকরা
ঢাবির ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা শুরু
ঢাবির ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা শুরু