বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫

নারীর জন্য বাংলাদেশটা সবসময় ভয়ংকর ছিল!

বৈশাখী ডেস্ক
প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২৫, ০৪:৩০ পিএম

গত কোরবানি ঈদে মুক্তি পাওয়া আলোচিত ছবি ‘এশা মার্ডারঃ কর্মফল’,জুলাই অভ্যুত্থান ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে বৈশাখী অনলাইনের মুখোমুখি হয়েছিলেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। কান চলচ্চিত্র উৎসবের বহুল আলোচিত বাংলাদেশি ছবি ‘রেহানা মারিয়াম নুর’সহ আরও কিছু প্রশ্নের খোলামেলা উত্তর দিয়েছেন এই অভিনেত্রী। গতকালের পর আজ প্রকাশিত হচ্ছে বৈশাখী আলাপ’ এর শেষ পর্র্ব।

বৈশাখী অনলাইন -এশা মার্ডার কর্মফল এর পুলিশ কিন্তু অনেকটা বাস্তবের কাছাকাছি। আপনি কী ‘ইনসাফ’ ছবিটা দেখেছেন? সেখানেও কিন্তু নারী পুলিশ আছেন যিনি ছবির নায়িকা।

আজমেরী হক বাঁধন-হ্যা। পর্দার পুলিশকে অনেক সময় খারাপ ভাবে উপস্থাপন করা হয়। বাংলা বা হিন্দী ছবির পুলিশের চরিত্র সাধারনত দুই ধরনের। একজন খারাপ পুলিশ থাকেন তো একজন ভালো পুলিশও থাকেন। এশা মার্ডার এর পুলিশ নিজেই একদা নির্যাতিত। সে এটা ভুলতে পারে না। আবার যে মেয়েটা ধর্ষিতা ও খুন হয়েছে তার খুনিকে সে ধরতে চায়। আছে পুলিশ বিভাগে নারী পুরুষের বৈষম্য যেখানে নারী পারবে না এমন ধারনা জন্মে। নাচ গান বা মারদাঙ্গা ভাব একেবারেই নেই। সানী সানোয়ার ভাই একজন স্বাভাবিক ও ভালো পুলিশের চরিত্র দেখাতে চেয়েছেন। কিন্তু আপনি যে ছবির কথা বললেন সেই ছবির নায়িকা যে পুলিশ তার পদবীরও তো একটা মর্যাদা আছে। ছবিতে উপস্থাপিত সেই নারী পুলিশের চরিত্রে আত্মসম্মান বোধ এর অভাব আছে। একজন আদর্শিক বা কড়া পুলিশ অফিসারকেও দেখানো যায়। কিন্তু একজন নারী পুলিশ অফিসারকে এমন ‘শারীরিক আবেদনময়ী’ বানানোর কোনো মানে নেই। আমার চোখে লেগেছে। আমি এটা পছন্দ করি নাই।

বৈশাখী অনলাইন-ছবির গান এখন কেন আগের মতো জনপ্রিয় হয় না? হৃদয়ে থাকে না?

আজমেরী হক বাঁধন-সময় বদলেছে। আমরা এখন অনেক কিছু নিয়ে অকুপাইড। আগের মতো এক বেতার এক টেলিভিশনের দুনিয়া এখন আর নেই। এখন অ্ন্তর্জালের যুগ। হলিউড বলিউড ঢালিউড এখন এক রিমোটের অধীন। আছে ওাটটি প্লাটফর্ম। তারপরও ‘হাওয়া’ ছবির গান কিন্তু মানুষের মুখে মুখে ফিরেছে যদিও সেটা ভিন্নধর্মী ভালো এক ছবি যেটা বানিজ্যিকভাবে সফল হয়েছে। বানিজ্যিক ভাবে সফলতা লাভের জন্য ছবিতে এখনও নারীদের ছোট করে দেখানো হয়, খারাপভাবে উপস্থাপন করা হয়। এই ধারণা থেকে বের হয়ে আসা জরুরি। কোভিদ পরবর্তী সময়ে বাংলা ছবির অনেক কিছুতে পরিবর্তন এসেছে। এই ঈদেও উৎসব ও এশা মার্ডার আলোচিত হয়েছে। আমি দারুন আশাবাদী।

বৈশাখী অনলাইন-নাটক কী ছেড়ে দিয়েছেন? হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আপনার অনেক স্মৃতি আছে। আজমেরী হক বাঁধন-না। আমার কোনো কোনো ইগো নেই যে সিনেমা ছাড়া নাটক বা সিরিয়াল করবো না। আমি যে ধরনের চরিত্র এখন খুঁজি তার সাথে মিল থাকলে নাটক বা সিরিয়াল অবশ্যই করবো। আমি খানিক অ্যাকটিভিস্টও। অভিনয় করে যদি সমাজ বদলের কোনো না কোনো পর্যায়ে নিজেকে জড়িত করতে পারি তবে সেটা করবো,করেছিও। হুমায়ূন স্যারকে মনে করি আজও। অনেক কিছু শিখেছি তার কাছ থেকে। তার নাটকের শুটিং মানে অন্যরকম আনন্দ আর জনপ্রিয়তার ব্যাপারটাও ছিল। স্যারকে স্যালুট জানাই।

বৈশাখী অনলাইন-ব্যস্ততাা কেমন এখন? নতুন কাজের চাপ? দেশের বাইরের কোনো ছবিতে কাজ করছেন?

আজমেরী হক বাঁধন-আছে। এর মাঝে রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত এর ‘মাস্টার’ ছবিতে কাজ করেছি। একেবারে প্রটাগনিস্ট বা মূল চরিত্র না । সহযোগি চরিত্র হলেও কাজে তৃপ্তি ছিল। আরেকটা কাজের কথা এখনই না বলি। আগে ঘোষণা আসুক তারপর। হয়তো দেশেও সেটা মুক্তি পাবে। আর বাইরের কাজ মানে তো ইন্ডিয়াতেই কাজ করতাম। ওরা এখন আর আমাকে ভিসা দেয় না। একবার বø্যাক লিস্টেড করেছিল। এরপর দিল্লী অফিস থেকে নাম কাটিয়ে এক মাসের ভিসা দিলো। এখন মনে হয় আবারও কালো তালিকায় রেখেছে। কয়েকটা কাজ করতে পারি নি ভিসা জটিলতায়।

বৈশাখী অনলাইন-জুলাই অভ্যুত্থানে আপনি রাজপথে ছিলেন। এক বছর পর কেমন মনে হচ্ছে?

আজমেরী হক বাঁধন-সময়ের প্রয়োজনে আমরা যারা এই অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলাম তারা বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ ছিলেন। দেশটা বদলে দেয়ার,সাম্যের বাংলাদেশ পাবার দারুন আকাঙ্খা ছিল সবার। এখন যারা ক্ষমতায় আছেন তারা যোগ্য ও সৎ মানুষ।অনেককে ব্যক্তিগত ভাবে আমি চিনি, তারা চেষ্টা করেছেন। রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ও অনাচারে ভরা আমলাতান্ত্রিক বাংলাদেশটাকে তারা বদলানোর চেষ্টা করেছেন,পারেন নি। এটা শুধু তাদের ব্যর্থতা না, আমাদের সবার ব্যর্থতা। এই সরকারের আমলে ‘মব কালচার’ আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। বীরশ্রেষ্ঠদের ভাষ্কর্য বা ৩২ নম্বর পোড়ানো ও ভাঙ্গা আমাকে আহত করেছে। নারীর প্রতি সহিংসতা আরও বেড়েছে। মানুষের ভেতর যে পশুত্ব সেটা কোনো কিছু দিয়েই দমন করা যায় নি। আমরা কত নিকৃষ্ট এই সরকারের আমলে সেটা বেশি দেখা গেছে!

বৈশাখী অনলাইন-সারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে! আপনি কেমন ছিলেন এই এক বছর?

আজমেরী হক বাঁধন-নারীর জন্য গত এক বছরের বাংলাদেশটা ভয়ংকর! নারীর জন্য দেশটা সবসময় ভয়ংকর ছিল। নারী সংস্কার কমিশনের প্রধানকে বেশ্যা বলে গালি দেয়া হয়েছে সমাবেশ থেকে। কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয় নি সরকারের পক্ষ থেকে যা ভীষন লজ্জাজনক। আমি স্বাভাবিক জীবনযাপনে এখন পর্যন্ত কোনো বাঁধা পাই নি। কিন্তু আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটাও পোস্ট দিতে পারি না। সামগ্রিক বুলিং ও হ্যারেসমেন্টের শিকার হচ্ছি। কেউ কী আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে? আমার মতো আরও অনেকেই এই হ্যারেসমেন্টের শিকার হচ্ছেন।

বৈশাখী অনলাইন-তবু আশা নিয়ে বাঁচি। কী বলেন? আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

আজমেরী হক বাঁধন-। বৈশাখীর জন্য শুভকামনা।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
নির্মাণ হলো বিশেষ নাটক 'স্বামীর আদর'
নির্মাণ হলো বিশেষ নাটক 'স্বামীর আদর'
বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পুরুষ কে এই জনাথন বেইলি
বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পুরুষ কে এই জনাথন বেইলি
বিএনপির দুঃসময়ের সাথী, স্বৈরাচারের জম রুমিন ফারহানা আপা: হিরো আলম
বিএনপির দুঃসময়ের সাথী, স্বৈরাচারের জম রুমিন ফারহানা আপা: হিরো আলম
যে ধরণের পুরুষ পছন্দ মালাইকার
যে ধরণের পুরুষ পছন্দ মালাইকার