
আজ সাহিত্যিক,গীতিকার ও কিংবদন্তী পরিচালক আমজাদ হোসেনের জন্মদিন।
যুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে তার পরিচালিত ছবি ‘বাংলার মুখ’ মুক্তি পায় নি কখনো! যুদ্ধ চলাকালীন ও পরবর্তী সময়ে আমজাদ হোসেন লিখেছিলেন ‘বাংলার মুখ’, পরিচালনা করেছিলেনও তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার! শুটিং শেষ ও পোস্টার হবার পরেও এফডিসি থেকে হারিয়ে যায় ‘সাউন্ড ও পিকচার রিল’, ছবিটি আর কখনো মুক্তি পায় নি। বাংলার স্বাধীনতা ও যুদ্ধ ভিত্তিক প্রথম ছবি ছিল এটি। একারণে আমজাদ হোসেন নিজেকে ’দুঃখী রাজকুমার’ মনে করতেন!
অবশ্য বাংলা চলচ্চিত্রের মনে রাখার মতো এক রাজপুত্রের নামও ‘আমজাদ হোসেন’। স্কুল ও কলেজ জীবনের মাঝামাঝি সময়ে বিখ্যাত ‘দেশ’ পত্রিকায় তার কবিতা ছাপা হয়েছিল, চিঠিতে নিমন্ত্রণ পেয়েছিলেন কলকাতায় যাবার। সেখানে যান নি বলেই হয়তো বাংলাদেশ পেয়েছিল সাহিত্যিক,গীতিকার, চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক আমজাদ হোসেনকে।
লেখালেখির পাশাপাশি অভিনয়েও জড়িয়েছিলেন। অসংখ্য চলচ্চিত্র সহ জনপ্রিয় টিভি নাটক ‘জব্বর আলী’ সিরিজে নাম ভূমিকায় তিনি অভিনয় করেছেন। আমজাদ হোসেন প্রথম চিত্রনাট্য লিখেছিলেন জহির রায়হানের ‘বেহুলা’ ছবির। তার কালজয়ী চিত্রনাট্য জহির রায়হান পরিচালিত ‘জীবন থেকে নেয়া’- যা নাড়া দিয়েছিল মুক্তিকামী বাংলার মানুষকে, যে ছবির মুক্তির জন্য রাজপথে নেমেছিল মানুষ।
স্বাধীনতার পরে আলোচিত এক ছবির নাম ‘আবার তোরা মানুষ হ’! এই ছবির চিত্রনাট্য লিখেছিলেন আমজাদ হোসেন। যুদ্ধ ও স্বাধীনতা নির্ভর আরেক আলোচিত ছবি, তৌকির আহমেদ পরিচালিত ‘জয়যাত্রা’ ছবির কাহিনী নেয়া হয়েছিল আমজাদ হোসেনের লেখা ‘অবেলা অসময়’ উপন্যাস থেকে।
স্বাধীনতার পর খান আতাউর রহমান পরিচালিত প্রেম নির্ভর এক দারুন আলোচিত ছবি ‘সুজন সখী’। ব্যবসা সফল এই ছবির চিত্রনাট্যকারও আমজাদ হোসেন। স্বাধীনতার পরে আমজাদ হোসেন পরিচালিত প্রথম ছবির নাম ‘নয়ন মনি’ । এই ছবির চিত্রনাট্যও লিখেছিলেন তিনি, গল্প নিয়েছিলেন তার লেখা উপন্যাস ‘নিরক্ষর স্বর্গে’ থেকে। নিরক্ষর স্বর্গে’ উপন্যাসটি ছাপা হয়েছিল জনপ্রিয় ‘সিনেমা’ পত্রিকায়। ধর্মীয় কূপমন্ডকতা ও শোষণের বিরুদ্ধে দারুন এক ছবি নয়ন মনি। ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭৬ সালের ২৫ জুন। এই ছবিতে ইন্দ্রমোহন রাজবংশীর গাওয়া ‘কোন কিতাবে লেখা আছে বলো হারাম বাজনা গান’ বিতর্কের জন্ম দেয়, ছবি নিষিদ্ধ ও আমজাদ হোসেনের বিচারের দাবী ওঠে। ছবিটি পরে ‘রঙীন নয়ন মনি’ নামে পুনঃ নির্মিত হয়েছে।
‘আগুন নিয়ে খেলা’ ছবি দিয়ে স্বাধীনতার আগেই তিনি পরিচালক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। আমজাদ হোসেনের তুমুল আলোচিত ছবি ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’! এছাড়া ‘সুন্দরী’.দুই পয়সার আলতা’, কসাই’.ভাত দে. ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, সখিনার যুদ্ধ’ ছবিগুলো দর্শক নন্দিত হয়েছিল। তিনি একুশে পদক,জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার,অগ্রণী ও বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন।
আমজাদ হোসেনের জন্ম ১৯৪২ সালে, ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর তিনি মারা যান।
মন্তব্য করুন