
দীর্ঘ বিরতির পর বিটিভিতে আবারও ফিরছে নতুন কুঁড়ি। মঙ্গলবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজস্ব পেজে এই তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)। এই খবর শুনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই স্মৃতিকাতর হয়েছেন—কারও মনে পড়েছে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার স্মৃতি, কারও মনে ভেসে উঠেছে শৈশবের প্রিয় অনুষ্ঠানটির দৃশ্য। ফেসবুকে অনেকে ছবিও শেয়ার করেছেন।
১৯৬৬ সালে পাকিস্তান টেলিভিশনে প্রথম প্রচারিত হয় ‘নতুন কুঁড়ি’। অনুষ্ঠানের নাম রাখা হয়েছিল কবি গোলাম মোস্তফার ‘কিশোর’ কবিতা থেকে। যার প্রথম ১৫ লাইন অনুষ্ঠানের সূচনাসংগীত হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৬ সালে মোস্তফা মনোয়ারের প্রযোজনায় আবার শুরু হয় ‘নতুন কুঁড়ি’। সে সময় বিটিভির অন্যতম আলোচিত এই অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে শিশু-কিশোরদের স্বপ্নের মঞ্চ। নানা প্রান্ত থেকে উঠে আসা তরুণেরা গান, নাচ, অভিনয়, আবৃত্তি, গল্পবলা, কৌতুকসহ বিভিন্ন শাখায় নিজেদের প্রতিভা মেলে ধরার সুযোগ পান। ২০০৫ সাল পর্যন্ত চলে এ অনুষ্ঠান। পরে নানা কারণে অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয় বিটিভি। ২০২০ সালে অনুষ্ঠানটি আবার শুরু করার খবর শোনা গিয়েছিল। কিন্তু পরে বলা হয়, কোভিড মহামারির কারণে সেটা আর সম্ভব হয়নি।
তিন দশকে নতুন অনেক তারকার জন্ম দিয়েছে নতুন কুঁড়ি। অনেকে চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, নাট্যাঙ্গন ও সংগীতজগতে নিজস্ব অবস্থান গড়ে তুলেছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন তারানা হালিম, রুমানা রশিদ ঈশিতা, তারিন জাহান, মেহের আফরোজ শাওন, নুসরাত ইমরোজ তিশাসহ আরও অনেকে। এ তালিকায় আছেন সামিনা চৌধুরীসহ অনেক জনপ্রিয় সংগীতশিল্পীও। বিটিভির জনসংযোগ বিভাগ সূত্রে জানানো হয়েছে, নতুন মৌসুমের প্রতিযোগিতার জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু হবে ১৫ আগস্ট থেকে, চলবে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সারা দেশকে ১৯টি অঞ্চলে ভাগ করে প্রাথমিক বাছাই হবে। এসব অঞ্চল হলো ঢাকা-১ (ঢাকা, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ), ঢাকা-২ (মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী), ঢাকা-৩ (ফরিদপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর), ময়মনসিংহ-১ (ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোনা), ময়মনসিংহ-২ (টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর), সিলেট (সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ), রংপুর-১ (রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা), রংপুর-২ (দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়), রাজশাহী-১ (রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা), রাজশাহী-২ (বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ), খুলনা-১ (খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা), খুলনা-২ (যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল), খুলনা-৩ (কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা), বরিশাল-১ (বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর), বরিশাল-২ (পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা), চট্টগ্রাম-১ (চট্টগ্রাম, কক্সবাজার), চট্টগ্রাম-২ (রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি), চট্টগ্রাম-৩ (কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া), চট্টগ্রাম-৪ (নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী)। প্রতিটি অঞ্চলের শিল্পকলা একাডেমি ভবন প্রাথমিক বাছাইয়ের ভেন্যু হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে।
প্রতিযোগিতা হবে মোট নয়টি বিষয়ে—অভিনয়, আবৃত্তি, গল্প বলা বা কৌতুক, সাধারণ নৃত্য বা উচ্চাঙ্গ নৃত্য, দেশাত্মবোধক গান বা আধুনিক গান, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, লোকসংগীত এবং হামদ-নাত। বয়সসীমা অনুযায়ী থাকবে দুটি শাখা: ‘ক’ শাখা (৬–১১ বছর) এবং ‘খ’ শাখা (১১–১৫ বছর)। বিভাগীয় বাছাই শেষে চূড়ান্ত বাছাই ও ফাইনাল পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ঢাকায়। ফাইনাল প্রতিযোগিতা হবে ২ থেকে ৬ নভেম্বরের মধ্যে।
বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে স্মৃতিচারণা করে নতুন কুঁড়ির সূচনাসংগীত ‘আমরা নতুন, আমরা কুঁড়ি’ শেয়ার করেছেন। অনেকে মন্তব্য করেছেন, নতুন কুঁড়ি বিটিভির ইতিহাসে শুধু একটি অনুষ্ঠান নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অংশ হয়ে আছে। আয়োজনটি অনেকের জন্য কেবল প্রতিযোগিতা নয়, বরং আজীবনের শিল্পযাত্রার প্রথম ধাপ। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রতিভা খুঁজে এনে জাতীয় মঞ্চে তুলে ধরা এবং তাঁদের ক্যারিয়ার শুরু করার সুযোগ করে দেওয়ার কাজটি ধারাবাহিকভাবে করে এসেছে এই আয়োজন।
মন্তব্য করুন