
‘শূন্যতা বাজে শোনো রুপালি গীটারে
কে আছো বাজাও আজ বাজাও আমারে
পাজরটা খুলে দেখ বাজে অন্তর
সেখানেতে আছে এক স্বপ্ন শহর
শহরে নতুন তাই চিনি নি তো তারে
প্রবর্তক মোড় সাজে রূপালি গীটারে’
আজ ব্যান্ড সংগীত শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর জন্মদিন।
চট্টগ্রামের প্রবর্তক মোড়ে ১৮ ফুট উচ্চতার যে রূপালি গীটারটা আছে,বাংলার অগনিত সংগীতপ্রেমীর হৃদয়ে সেই গীটারের উচ্চতা আরও অনেক অনেক বেশি। বীর চট্টলার মানুষেরা রূপালি গীটারের ভাস্কর্য তৈরি করে শুধু আইয়ুব বাচ্চুকেই সম্মানিত করেন নি, আধুনিক বাংলা ফর্মের গানকেও স্থায়ী করেছেন নিজেদের বুকে। বাউলের একতারার পরে (যদিও এই ভাষ্কর্য স্থায়ী হয় নি) রূপালি গীটারই ‘সঙ্গীত ভালোবাসার আরেক ভাষ্কর্য’ যা নিয়ে গানপ্রেমীরা গর্ব করতে পারেন।
মগবাজারের কাজী অফিস গলির যে বাসাটায় আইয়ুব বাচ্চু গান চর্চা করতেন,গীটারে সুর তুলতেন কিংবা গানে সুর করতেন,ব্যান্ডের প্রাকটিস বা শুভানুধ্যায়ী ভক্তদের সাথে আড্ডা দিতেন সেই বিখ্যাত ‘এবি কিচেন’ আর নেই। বাসাটাও ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আইয়ুব বাচ্চু নেই.এবি কিচেন কিংবা এলআরবিও থাকবেনা এটাই হয়তো বাস্তবতা। তিনি নিজেই এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন-চোখ খুললে জীবন। চোখ বুজলেই মৃত্যু। জীবনের রঙটাই এমন!’ তিনি নেই তবু তার রূপালি গীচার আছে!
আইয়ুব বাচ্চু বলেছিলেন-‘জীবনের কিছু দুঃখ বেদনা কিংবা আনন্দের ঘটনা বলে যাবার দরকার নেই। বলেছিলেন আগের মতো আর আবেগতাড়িত হই না।অনেক কিছুই আর অনুপ্রানিত করে না। বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে তাদের জন্য যারা আমার গান শোনার জন্য রাত জাগে। রোদে পোড়ে কিংবা বৃষ্টিতে ভেজে! নতুন করে এখন আর কোন স্বপ্ন দেখি না!’ স্বপ্ন ফুরিয়ে যায় না কখনো। আইয়ুব বাচ্চু তার এমন ভক্ত-শুভানুধ্যায়ীদের মাঝেই বেঁচে থাকবেন অনাদিকাল।
এলআরবি নিয়ে তাঁর স্বপ্নটা ছিল এমন-‘এলআরবি শুধু ব্যান্ডদল নয়। এটা পরিবার। আমি না থাকলেও আমার বা আমাদের উত্তারাধিকাররাই এলআরবিকে সামনের দিকে এগিয়ে নেবে’। অগনিত শ্রোতার হৃদয় থেকে হারিয়ে যাবেন না আইয়ুব বাচ্চু।
‘ব্যান্ড সঙ্গীতের সেই উত্তাল দিনগুলোতে ক্যাপ পরা গীটার হাতে স্মার্টলী তাঁর গীটার বাজানো স্মৃতি থেকে কখনো যাবে না। না পাওয়ার বেদনা,স্বজন হারানোর কষ্ট,বাবা মার মৃত্যু,পরাজয়ের বেদনা সইতে নতুন যে ছেলেটা গীটার হাতে নিয়ে বসবে, তার আজম খান কিংবা লাকি আখান্দ এর মত আপনার কথাও মনে পড়বে। কেউ হয়তো একাত্তর সালে ‘সাবিত্রী রায়’ কেন দেশত্যাগ করেছিল সেটা ভাববে। তারা ভরা রাতে কেউ ময়নাকে বোঝানোর চেষ্টা করবে। দরোজার ওপাশে নিজ ভুবনে চিরদুঃখী মানুষটার কষ্ট বোঝার চেষ্টা করবে। কেউ এক আকাশ তারা গোনার জন্য তার প্রিয়তমাকে আহবান জানাবে। কেউ ‘হাসতে দেখ গাইতে দেখ’র আড়ালে হাসি শেষের নীরবতাটা অনুভব করার চেষ্টা করবে। কেউ ‘শেষ কবে বৃষ্টিতে করেছিলে স্নান-মনে আছে নাকি নাই’এর হিসেব কষবে।আইয়ুব বাচ্চুর রূপালি গীটার ছড়িয়ে যাবে সারা বাংলাদেশে’!
আইয়ুব বাচ্চুর জন্ম শহর চট্টগামের প্রবর্তকমোড়ে যে রূপালি গীটার,তার জন্ম আর মৃত্যুদিনে এখানে সমবেত হতে পারবেন তার ভক্তরা। যারা আইয়ুব বাচ্চুর কোন গান গেয়ে তাকে স্মরণ করতে চান তারা প্রবর্তক মোড়ের রূপালি গীটারের সামনে যেয়ে সেই গান গাইতে পারবেন।
ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে গীটার হাতে এই প্রজন্মের কেউ মিনতি জানাতে পারবেন-আমার অপরাধ ছিল যতোটুকু তোমার কাছে-তুমি ক্ষমা করে দিও আমায়! আশি আর নব্বই দশকের ব্যান্ড সঙ্গীতের সেই উত্তাল দিনগুলোর জোয়ার ফিরিয়ে আনতে কেউ কেউ হতে চাইবেন আইয়ুব বাচ্চুর মতো। প্রবর্তক মোড়ের রূপালি গীটার চত্তর ক্রমশঃ হয়ে উঠতে পারে ব্যান্ড সঙ্গীতের প্রাণকেন্দ্র।
চিরকালীন সঙ্গীতের সুর ঝংকার নিয়ে আইয়ুব বাচ্চুর রূপালি গীটার ছড়িয়ে পড়ুক সারা বাংলাদেশে।
মন্তব্য করুন