
		বাংলাদেশের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। মত প্রকাশের স্বাধীনতার স্বপক্ষের অগ্রগামী পথপ্রদর্শক। সংস্কৃতির প্রায় সব ক্ষেত্রে বৈচিত্র্যময় দক্ষতায় তিনি সৃজনশীল শিল্পের নিজেকে অনন্য ও অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। শিশুদের সত্য ও সুন্দরের প্রতি সজাগ রাখতে 'নতুন কুড়ি' ও 'পাপেট শো'র প্রবর্তন করেন মুস্তাফা মনোয়ার। দেশের খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী, পরিচালক, টিভি অনুষ্ঠান প্রযোজক এবং চিত্রনাট্যকার মুস্তাফা মনোয়ারের জন্মদিন আজ।
মুস্তাফা মনোয়ার ১৯৩৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর মাগুরা জেলার নাকোল গ্রামে নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলার মনোহরপুর গ্রামে। তার বাবা প্রয়াত কবি গোলাম মোস্তফা এবং মায়ের নাম জমিলা খাতুন।
১৯৫৯ সালে কলকাতা চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয় থেকে ফাইন আর্টসে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন তিনি। কলকাতা থেকে দেশে আসার পর শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের পরামর্শে আর্ট কলেজে পড়ানোর দায়িত্ব নিলেও শেষ পর্যন্ত সেটা ছেড়ে তিনি যোগ দেন বর্তমান বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি)। পাকিস্তানিদের প্রতি ক্ষোভ থেকেই টেলিভিশনে যোগ দেন।
শৈশব থেকেই মুস্তাফা মনোয়ার বিশ্বাস করতেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর জন্য উপযুক্ত হাতিয়ার হলো শিল্প। এ বিশ্বাস তার কাজেও প্রতিফলিত হতো। ১৯৫২ সালে নারায়ণগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় ভাষা আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আঁকা কার্টুনের জের ধরে তাকে সাময়িকভাবে কারারুদ্ধ করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাপেটশিল্পী হিসেবে অবদান রাখেন। পশ্চিম বাংলার শরণার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নেওয়া মানুষের মনোবল বাড়ানোর জন্য তিনি তার দক্ষতার পূর্ণ ব্যবহার করেন। আয়োজন করেন পাপেট প্রদর্শনীর। 'আগাছা', 'রাক্ষস' ও 'একজন সাহসী কৃষক'সহ তার বিখ্যাত পাপেট শোগুলো দর্শকদের গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল এবং অনেক শক্তিশালী বার্তা দিয়েছিল।
মুস্তাফা মনোয়ার প্রভাষক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি সদ্য চালু হওয়া পাকিস্তান টেলিভিশনে অনুষ্ঠান প্রযোজনার কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে বিটিভির কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই শিশু-কিশোরদের জন্য নির্মিত অনুষ্ঠানের ওপর বিশেষ নজর দেয়া হয় এবং এসব জনপ্রিয় অনুষ্ঠান প্রযোজনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৭৬ সালে বিটিভির জাতীয় টেলিভিশন প্রতিযোগিতা 'নতুন কুঁড়ি' শুরুর পেছনেও তার অবদান অনস্বীকার্য।
মুস্তফা মনোয়ার পাপেট শিল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য লোককাহিনী সংরক্ষণ ও শিশুদের গল্পগুলো পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। তিনিই জনপ্রিয় ও কালজয়ী পাপেট চরিত্র পারুল, বাঘা ও মিনি'র নেপথ্যের সৃজনশীল শক্তি। এ চরিত্রগুলো প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে শিশুদের আনন্দ দিয়ে যাচ্ছে।
বিটিভির জন্য তিনি 'রক্তকরবী' এবং 'মুখরা রমণী বশীকরণ' এর চিত্রনাট্য তৈরি এবং প্রযোজনা করেন। নাটকগুলো ব্যাপক সমাদৃত এবং যুক্তরাজ্যের গ্রানাডা টিভি'র 'টিভি নাটকের বৈশ্বিক ইতিহাস' অনুষ্ঠানে অন্তর্ভুক্তির জন্য মনোনীত হয়েছে।
মুস্তাফা মনোয়ারের ৯০তম জন্মদিনে তার প্রতি শ্রদ্ধা।
মন্তব্য করুন