
বেসরকারি রেডিওর সোনালি সময় থেকে শুরু করে টেলিভিশনের রঙিন পর্দা এখন ইন্টারনেটের অফুরন্ত দুনিয়া, এই প্রতিটি মাধ্যমেই যিনি তার কণ্ঠ আর মেধা দিয়ে জয় করেছেন লাখো মানুষের মন তিনি আরজে নিরব। একাধারে সফল আরজে, জনপ্রিয় টেলিভিশন উপস্থাপক এবং সাম্প্রতিক সময়ে একজন প্রভাবশালী ডিজিটাল ক্রিয়েটর। তার এই ব্যতিক্রমী যাত্রা অনেকের কাছেই কৌতূহলের বিষয়। কীভাবে তিনি নিজেকে সময়ের সাথে মানিয়ে নিলেন, কোন ভাবনাগুলো তার প্রতিটি কনটেন্টকে করেছে স্বতন্ত্র আর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে তার সাফল্যের রহস্যই বা কী? এসব জানতে এবং তার বর্ণিল জীবনের অজানা গল্প শুনবে বৈশাখী অনলাইন।
বৈশাখী অনলাইন: রেডিও, টেলিভিশন এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এই তিনটি ভিন্ন মাধ্যমে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন? কোন মাধ্যমে কাজ করতে সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন?
আরজে নিরব: এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম কাজ করি, এখানে স্বাধীনতা, কাজ করার জায়গা অনেক বেশি। তবে রেডিওটা সবচেয়ে বেশি মিস করি। আমার শুরু, মানুষের ভালোবাসা পাওয়া সব তো ওখান থেকেই, সেই সময়ের স্মৃতি ও অভিজ্ঞতা ভুলবার নয়।
বৈশাখী অনলাইন: আরজে হিসেবে আপনার ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল, সেই অভিজ্ঞতা কি এখনকার ডিজিটাল ক্রিয়েটর হিসেবে আপনার কাজকে কোনোভাবে প্রভাবিত করে?
আরজে নিরব: অবশ্যই। রেডিওটাকে ডিজিটাইলজ করে আমরা সেগুলোকে অনলাইনে প্লার্টফর্মে প্রকাশ করছি। বলা যায় রেডিওর সংস্করণ হচ্ছে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। শুধু আগে আমরা ভিডিও আকারে দেখতে পেতাম না আর এখন সেটা পাচ্ছি। সহজ ভাবে দেখতে গেলে রেডিওর প্লাটফর্মটা বড় হয়েছে।
বৈশাখী অনলাইন: আপনার কনটেন্টগুলোতে আমরা প্রায়ই সমাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা দেখতে পাই। এই ধরনের বিষয়বস্তু বেছে নেওয়ার অনুপ্রেরণা কোথা থেকে আসে?
আরজে নিরব: দেখেন মানুষের জীবন, তার অনুভূতি, তার সংগ্রাম, বড় হবার প্রেরণা খোঁজা এটা রেডিও থেকেই শুরু করেছিলাম। আমি যখন অনুষ্ঠান করতাম ‘রাত ভোর গান’ তখন থেকেই আমি মানুষের জীবন গল্প বা হতাশার কথা শুনতাম। বুঝতে পারতাম মানুষ খুব একা, তাদের জন্য কিছু করতে ইচ্ছা করতো, মনে হতো যদি তাদের উঠিয়ে আনতে পারি, কষ্ট দূর করতে পারি! সেই ক্ষুধা থেকেই আসলে আমার কাজ এর এই জায়গা নির্বাচন করা। আমি যদি এক জন মানুষের জীবন সুন্দর করতে সাহায্য করতে পারি, সেটাই আমার কাছে অনেক।
বৈশাখী অনলাইন: একজন ডিজিটাল ক্রিয়েটর হিসেবে আপনার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কোনটি? কীভাবে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেন?
আরজে নিরব: সত্যি বলি? আমরা খুব খারাপ জিনিস দেখতে পছন্দ করি, আর অনলাইন এ কাজ করার অসুবিধা হইলো এইটা, যেইটা মানুষ দেখবে ঐটাই বানাতে হবে, উপায় নাই, নইলে অফিস ভাড়া দিতে পারবো না! দর্শক হিসেবে আমরা এমন সব কনটেন্ট দেখি, শেয়ার করি যেখানে মূল্যবোধের অনেক ঘাটতি, শেখার কিছু নাই, কেবল রগরগে বিনোদন! এইটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। না পারি চাপড়ি বানাতে, না না বানিয়ে উপায় থাকে! সারা দিন চেষ্টা করতে থাকি চিনির প্রলেপ দেয়া মানুষকে সত্যের তেতো ট্যাবলেট খাওয়াতে।
বৈশাখী অনলাইন: সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক সময় নেতিবাচক মন্তব্য বা ট্রলের শিকার হতে হয়। আপনি এই ধরনের পরিস্থিতি কীভাবে সামলান? আরজে নিরব: আমি নিজে কোনো দিন গীবত করি নাই, আল্লাহ যেন আমাকে মরার আগে পর্যন্ত এমনই রাখে। যারা এসব করেন তাদের নিয়ে কিছু বলতে চাই না, সবাই কোনো না কোনোভাবে নিজের অবস্থান সম্পর্কে সচেতন না।
বৈশাখী অনলাইন: একজন সফল কনটেন্ট ক্রিয়েটর হতে গেলে কোন গুণগুলো থাকা জরুরি বলে মনে করেন?
আরজে নিরব: প্রচুর ধৈর্য্য থাকতে হবে, অনেক কাজ করতে হবে, অনেক মানে অনেক, নিয়মিত কাজ করতে হবে, হতাশ হওয়া যাবে না। কারণ সফলতা একদিনে বা রাতারাতি অর্জন করা সম্ভব নয়।
বৈশাখী অনলাইন: আপনার এই যাত্রায় এমন কোনো স্মরণীয় ঘটনা আছে যা আপনার মনকে সবচেয়ে বেশি নাড়া দিয়েছে?
আরজে নিরব: আমি প্রতিদিন ৩ টা করে সেশন নিই, এর বেশি না। মানুষকে তার ভালোবাসা, সংসার, স্বামী-স্ত্রীর সমস্যা, ট্রমা থেকে বের করতে সাহায্য করি, এই কাজ টা করার সময় আমি উনাদের সাথে হাসি, কাঁদি, অনুভব করি তাদের ভেতরের কষ্ট! মনে হয় প্রতিদিন নতুন করে জন্মগ্রহণ করি! দোয়া করবেন, যেন আল্লাহর রহমত পাই, আর সবাইকে সুন্দরের পথে ডাকতে পারি।
বৈশাখী অনলাইন: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নতুন কোন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে কাজ করার কথা ভাবছেন?
আরজে নিরব: সবাই আগে বাণিজ্যিক চিন্তা করে, তবে আমি বাণিজ্যের পাশাপাশি মানুষের জন্য কিছু কাজ করতে চাই। আমি মানুষকে সচেতন করতে চাই, তাই আমার এনকে এন্টারটেইনমেন্ট চ্যানেল কমেডি নাটক দিয়ে মানুষ কে মানবিকতা শেখানোর চেষ্টা করছি। আসলে সব ভাবে সব দিক দিয়ে মানুষকে একটু ইতিবাচক বানানোর চেষ্টা করছি, বাকিটা আল্লাহ ভরসা।
বৈশাখী অনলাইন: আপনাকে ধন্যবাদ। আরজে নিরব: বৈশাখী অনলাইনকেও ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন