মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫

মৃত্যুর পর ফের আলোচনায় এই অভিনেত্রী

বৈশাখী ডেস্ক
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:০৭ পিএম
আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:০৩ পিএম

মৃত্যুর পর ফের আলোচনায় নব্বই দশকের জনপ্রিয় নায়িকা সাহিনা শিকদার বনশ্রী। জীবনের শেষদিকে এসে একাকিত্ব ও মানবেতর জীবন যাপন করেছেন তিনি। শেষে অনেকটা কষ্ট নিয়েই মারা যান তিনি। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর তাকে নিয়ে নতুন করে শুরু হয়েছে আলোচনা।

জানা যায় বনশ্রী জীবনের শেষ দিনগুলো মাদারীপুরের শিবচরে কাটিয়েছেন। নিঃসঙ্গ জীবনের করুণ পরিণতিতে কাউকে পাশে পাননি এ অভিনেত্রী। একসময় লাখো দর্শকের প্রিয় এই অভিনেত্রীর জীবনের শেষ অধ্যায় কেটেছে একাকিত্ব ও মানবেতর কষ্টে। চলচ্চিত্র অঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্রের এমন পরিণতি শুধু সিনেমাপ্রেমীদের নয়, সমগ্র সংস্কৃতি অঙ্গনের জন্যই এক বেদনাদায়ক অধ্যায়।

জীবনের শেষ সময়ে শিবচর থানার পাঁচ্চর এলাকায় বস্তির একটি ছোট্ট ঘরই ছিল তার শেষ আশ্রয়। রান্না করতে না পারায় প্রায়ই প্রতিবেশীদের কাছে খাবার চাইতেন। অভিযোগ রয়েছে, ঢাকায় থাকা একমাত্র ছেলে মায়ের খোঁজখবর নিতেন না। তাই শেষের দিনগুলোয় বাস্তব জীবনের পর্দায় দুঃখ-কষ্টই ছিল বনশ্রীর স্থায়ী সঙ্গী। রোগশোকে জর্জরিত, তিনি হাসপাতালের এক কোণে বিদায় নিলেন নিঃশব্দে। পাশে ছিলেন না কোনো প্রযোজক, পরিচালক বা সহশিল্পী-ছিল কেবল একমাত্র ছেলে মেহেদী হাসান, ছোট ভাই হারুন শিকদারসহ আত্মীয়স্বজনের চোখের পানি। সন্ধ্যার পর নিঃশব্দে তাঁকে সমাহিত করা হয় নানাবাড়ির কবরস্থানে। আলো, ক্যামেরা, করতালির সেই সব দিন যেন ইতিহাস হয়ে রইল। আলো ঝলমলে জীবনের পর্দা নামে এক নিঃসঙ্গ, করুণ পরিসমাপ্তিতে।

বনশ্রীর ছোট ভাই পেশায় ইলেকট্রিশিয়ান। ঢাকার মোহাম্মদপুরে থাকেন। বোনও প্রায় ভাইয়ের বাসায় থাকতেন। মাস দুয়েক তিনি ঢাকা ছাড়েন। বোন ঢাকা ছেড়ে শিবচর গেলেও ১৪ বছর বয়সী ছেলে মেহেদী হাসান মামার সঙ্গে মোহাম্মদপুরে বিজল্লী মহল্লার বাসায় থাকত। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বনশ্রীর মৃত্যুর খবর শুনে ভাগনে মেহেদীকে নিয়ে ঢাকা থেকে শিবচরে ছুটে যান হারুন। ভাই যাওয়ার আগপর্যন্ত বনশ্রীর মরদেহ পড়ে ছিল শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এরপর বনশ্রীর মরদেহ নেওয়া হয় তাঁর নানাবাড়ি কুমিরপাড়ে। সেখানেই সমাহিত করা হয় তাঁকে।

হারুন জানান, বেশ কয়েক মাস ধরে তাঁর বোন বনশ্রী কিডনি, মস্তিস্ক, হার্টেরসহ নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। ঢাকার একাধিক হাসপাতালে কয়েক মাস ধরে চলে তাঁর চিকিৎসাসেবা। মাস দুয়েক আগে তিনি শিবচর যান। পাঁচ দিন আগে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিজে গিয়ে ভর্তি হন। কয়েক দিন ধরে চলে তাঁর চিকিৎসা। মঙ্গলবার সকালে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

১৯৭২ সালে শিবচরের মাদবরের চর ইউনিয়নের শিকদারকান্দি গ্রামে জন্ম বনশ্রীর। বাবা মজিবুর রহমান মজনু শিকদার ও মা সবুরজান রীনা বেগমের দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে বনশ্রী বড়। সাত বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে রাজধানী ঢাকায় গিয়ে বসবাস শুরু করেন তিনি।

১৯৯৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘সোহরাব-রুস্তম’ সিনেমার মাধ্যমে বনশ্রীর রুপালি পর্দায় আত্মপ্রকাশ। নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের বিপরীতে অভিনীত সিনেমাটি বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়। রাতারাতি পরিচিত হয়ে ওঠেন বনশ্রী। এরপর শুরু হয় তাঁর ব্যস্ত সময়। একে একে তিনি অভিনয় করেন ৮ থেকে ১০টি সিনেমায়। নায়ক মান্না, রুবেল ও আমিন খানের সঙ্গে পর্দা মাতান তিনি। দর্শকেরা তাঁকে গ্রহণ করে নতুন প্রজন্মের নায়িকা হিসেবে। শুটিং সেট, গান, নাচ, ক্যামেরার ঝলকানি-সব মিলিয়ে তখন তাঁর জীবন রঙিন সিনেমার মতোই।

তবে এক সময় সিনেমায় অভিনয় ছেড়ে দেন বনশ্রী। তারপর শুরু জীবনের নতুন অধ্যায়, যে অধ্যায়ে এসে তিনি পড়েন অর্থকষ্টে। জীবনের এই কঠিন লড়াইয়ে একটা সময় সংসার চালাতে কষ্ট হয়। মাথা গোঁজার ঠাঁইও হারান।

২০১৪ সালে এক সাক্ষাৎকারে বনশ্রী জানিয়েছিলেন, একসময় শাহবাগে ফুল বিক্রির ব্যবসাও শুরু করেন। কিন্তু তা দিয়েও পুরোপুরি চলত না সংসার। শেষ পর্যন্ত তাঁকে নামতে হয় বাসে বাসে হকারির মতো কাজেও। সেই জীবনের গল্প এভাবেই বলেছিলেন বনশ্রী, চলচ্চিত্র ছেড়ে দেওয়ার পরই আর্থিক অনটনে পড়ি। শাহবাগে ফুলের ব্যবসা করেছি। বাসে বাসে হকারিও করতে হয়েছে তিন বেলা খাবার জোগাড় করতে।

শহুরে জীবনের চড়াই-উতরাই শেষে বনশ্রী ফিরে যান নিজ জেলা মাদারীপুরের শিবচরে। আশ্রয় মেলে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ছোট ঘরে। সরকারি অনুদান হিসেবে পাওয়া ২০ লাখ টাকার সুদই ছিল তাঁর একমাত্র ভরসা ছিল। একসময়ের নায়িকা তখন গ্রামে একা, খুব সাধারণ এক জীবন যাপন করতেন। খ্যাতি, করতালি, ক্যামেরার ঝলক সব যেন অতীতের গল্প। প্রতিবেশীদের কাছে তিনি ছিলেন একসময়ের চলচ্চিত্রের নায়িকা বনশ্রী, কিন্তু তাঁর জীবনের কষ্টে কোনো আলোর রেশ দেখা যেত না।

গতকাল ১৬ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বনশ্রী। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৫ বছর। দীর্ঘদিন ধরে নানা জটিল রোগে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
পদাতিক নাট্য সংসদ এর নতুন নাটক আলিবাবা এবং চল্লিশ চোর
পদাতিক নাট্য সংসদ এর নতুন নাটক আলিবাবা এবং চল্লিশ চোর
বিস্ফোরক যে মন্তব্য করে আলোচনায় পরেশ রাওয়াল
বিস্ফোরক যে মন্তব্য করে আলোচনায় পরেশ রাওয়াল
‘বোম্বে ভেলভেট’এ রণবীর সিং এর পরিবর্তে রণবীর কাপুর
‘বোম্বে ভেলভেট’এ রণবীর সিং এর পরিবর্তে রণবীর কাপুর
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ, যে সিনেমা মুক্তি স্থগিত চেয়ে রিট
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ, যে সিনেমা মুক্তি স্থগিত চেয়ে রিট