
লালন সাঁইজী আর বিতর্ক আজও হাত ধরে হেঁটে যায় সমান্তরাল। নিজেকে চিনতেন তিনি। সক্রেটিসের ‘নো দাইসেল্ফ’ এর মতো নিজের পরিচয় জানতে সচেষ্ট লালন সাঁইজী তাই লিখতে পারেন-‘যার আপন খবর আপনার হয় না/আপনারে চিনলে পরে/যায় অচেনারে চেনা’।
বিতর্ক ছিল এবং আছে তাঁর জন্মস্থান,জন্ম ও মৃত্যুর বছর ও তারিখ নিয়ে! ১৯৪৭ এর আগে লালনের কবর ঘেরা জায়গাটার নাম ছিল লালনের আখড়া, কয়েক বছরের মধ্যেই ইসলামী স্থাপত্য রীতিতে সেসব বাধানো হয় এবং নাম হয়ে যায় ‘লালনের মাজার’!
লালন সাঁইজীকে নিয়ে বিতর্ক আজও আছে। তাঁর সাথে কী রবীন্দ্রনাথের সত্যি দেখা হয়েছিল? ঠাকুর জমিদারির পাইক পেয়াদার হাত থেকে কাঙাল হরিনাথকে বাঁচাতে সত্যি কী লাঠি হাতে ছুটে গিয়েছিলেন লালন? তিনি কী মানুষের অসুখ হলে হোমিও বা ইউনানী মতে প্রেসক্রিপশান লিখে দিতে পারতেন? যা্ই হোক তাঁকে নিয়ে স্বাধীনতার পর তিনটি বাংলা ছবি নির্মিত হয়েছে।
স্বাধীনতা পরবর্তীকালে লালন সাঁইজীকে নিয়ে প্রথম বাংলা ছবির নাম ‘লালন ফকির’। পরিচালনা করেছিলেন বিখ্যাত অভিনেতা ও পরিচালক সৈয়দ হাসান ইমাম। অভিনয় করেছিলেন সুজাতা, আনোয়ার হোসেন,সুমিতা দেবী,শওকত আকবর এবং কবরী ও উজ্জ্বল। ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭২ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর।
এরপরে তানভীর মোকাম্মেল এর পরিচালনায় মুক্তি পেয়েছিল ‘লালন’। ২০০৪ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিতে লালনের প্রথম ও পরের জীবনের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন আজাদ আবুল কালাম পাভেল এবং রাইসুল ইসলাম আসাদ। শমী কায়সারও অভিনয় করেছিলেন এই লালনে।
পরে লালন নিয়ে আরও একটি ছবি হয়েছে যার নাম ‘মনের মানুষ’।
এই ছবিতে লালনের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন প্রসেনজিত আর সিরাজ সাঁই এর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন রাইসুল ইসলাম আসাদ। এছাড়াও পাওলি দাম,চঞ্চল চৌধুরী সহ অনেকেই ছিলেন এই ছবিতে। ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ২০১০ এ এবং সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে এটা পরিচালনা করেছিলেন গৌতম ঘোষ।
চলচ্চিত্রেও লালন সাইঁজিকে নিয়ে কম বিতর্ক হয় নি। জাত-পাত-ভেদ হীন অসাম্প্রদায়িক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে লালন চিরটাকাল আধুনিক। যতদিন এই পৃথিবীতে ‘মানুষ’ থাকবে ততদিন বেঁচে থাকবেন লালন।
মন্তব্য করুন