
বাংলাদেশি স্ট্যান্ড-আপ কমেডির অন্যতম জনপ্রিয় মুখ আবু হেনা রনি। মঞ্চে তাঁর স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি, সাধারণ জীবনযাত্রা থেকে তুলে আনা হাস্যরসাত্মক গল্প এবং সমাজ-সচেতনতামূলক কৌতুক তাঁকে দিয়েছে এক বিশেষ পরিচিতি। কমেডিয়ান, অভিনেতা, উপস্থাপক এবং সম্প্রতি ‘স্কুল অব কমেডি’র প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তাঁর বহুমাত্রিক কর্মতৎপরতা দেশের বিনোদন জগতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। যেখানে মানুষ ক্রমশ হাসতে ভুলে যাচ্ছে, সেখানে রনির এই নতুন উদ্যোগ ‘স্কুল অব কমেডি’ (যার শ্লোগান ‘এখানে উচিত শিক্ষা দেওয়া হয়’) কমেডিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে হাসির কারিগর হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। আমরা আবু হেনা রনির বর্তমান ব্যস্ততা, কমেডি নিয়ে নতুন ভাবনা এবং দেশের স্ট্যান্ড-আপ কমেডির ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি জানার চেষ্টা করেছি।
বৈশাখী অনলাইন: সম্প্রতি ‘স্কুল অব কমেডি’ চালু করলেন। এমন একটি প্রতিষ্ঠান তৈরির মূল প্রেরণা কী ছিল?
আবু হেনা রনি: আসলে আমি সব সময় ভেবেছি, আমরা গান শেখার স্কুল পাই, নাচ শেখার স্কুল পাই, কিন্তু মানুষকে হাসানোর স্কুল কোথায়? কমেডিও তো একটা আর্ট! অনেকে প্রতিভাবান, কিন্তু দিকনির্দেশনা না পেয়ে হারিয়ে যায়। তাই ভাবলাম, একটা জায়গা থাকুক যেখানে হাসির শিল্পটাকে পেশাদারভাবে শেখানো হবে, সম্মান দেওয়া হবে।
বৈশাখী অনলাইন: ‘স্কুল অব কমেডি’ এর শ্লোগান ‘এখানে উচিত শিক্ষা দেওয়া হয়’ এর মাধ্যমে আপনি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
আবু হেনা রনি: এই শ্লোগানটা একটু কৌতুকের ছোঁয়ায় বলা কিন্তু এর ভেতরে গভীর অর্থ আছে। এখানে আমরা শিখাই কেবল ‘কীভাবে মানুষকে হাসাতে হয়’ না, বরং ‘কখন, কোথায়, কাকে, কীভাবে বলা উচিত’ সেই উচিত শিক্ষা। কারণ হাসির মাঝেও দায়িত্ব আছে, সংবেদনশীলতা আছে।
বৈশাখী অনলাইন: ‘স্কুল অব কমেডি’-তে কমেডিতে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা কী কী শিখতে পারবে? এর পাঠ্যসূচি কেমন?
আবু হেনা রনি: আমরা এখানে শেখাই স্ট্যান্ড-আপ কমেডি, স্ক্রিপ্ট রাইটিং, ইম্প্রোভাইজেশন, মঞ্চ উপস্থাপনা, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এমনকি টাইমিং আর অডিয়েন্স রিডিং পর্যন্ত। পাঠ্যসূচি এমনভাবে সাজানো শিক্ষার্থীরা শুধু কমেডি শিখবে না, আত্মবিশ্বাস, প্রকাশভঙ্গি আর মঞ্চে টিকে থাকার মানসিকতাও তৈরি হবে।
বৈশাখী অনলাইন: ‘স্কুল অব কমেডি’র পাশাপাশি বর্তমানে আর কী কী কাজ করছেন?
আবু হেনা রনি: বর্তমানে বিভিন্ন টেলিভিশন শো, লাইভ ইভেন্ট, ব্র্যান্ড ক্যাম্পেইন এবং ইউটিউব প্রজেক্ট নিয়ে ব্যস্ত আছি। পাশাপাশি কিছু নতুন মুখ নিয়ে একটা স্যাটায়ার শো পরিকল্পনা করছি যেখানে সমাজের নানা ঘটনা হাসির মোড়কে তুলে ধরা হবে।
বৈশাখী অনলাইন: নিয়মিতভাবে টেলিভিশনে প্রচারিত কমেডি শো এবং মঞ্চের লাইভ কমেডি এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য বা চ্যালেঞ্জগুলো কেমন?
আবু হেনা রনি: টেলিভিশনে অনেক সীমাবদ্ধতা থাকে, কথা মেপে বলতে হয়, কাটা-ছেঁড়া হয়। কিন্তু লাইভ মঞ্চে দর্শকের হাসি, প্রতিক্রিয়া, চোখের ভাষা সবকিছু রিয়েল টাইমে পাওয়া যায়। তাই লাইভ কমেডি অনেক চ্যালেঞ্জিং, আবার তৃপ্তিও বেশি। কারণ ওখানে ফেক হাসি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
বৈশাখী অনলাইন: নতুন কুঁড়ির বিচারক হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল, সেখানে কৌতুককে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
আবু হেনা রনি: অভিজ্ঞতাটা দুর্দান্ত! আমরা ছোটবেলায় নতুন কুঁড়ি অনুষ্ঠান দেখার জন্য অপেক্ষা করেছি, তাই সেই মঞ্চে কাজের সুযোগ পাওয়া অত্যন্ত গর্বের। ছোটদের পারফরম্যান্স দেখে আমি যেন নিজের অতীতে ফিরে গিয়েছি। নতুন প্রজন্মকে কৌতুক করতে দেখে বুঝেছি বাংলাদেশে ট্যালেন্টের অভাব নেই, শুধু সুযোগ আর দিকনির্দেশনা দরকার। কৌতুকের মতো একটি বিভাগ অন্তর্ভুক্ত হওয়া মানে এই শিল্পটাকে অবশেষে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
বৈশাখী অনলাইন: কমেডির বাইরে অভিনয় ও উপস্থাপনার ক্ষেত্রে আপনি কোন ধরনের কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছ্যন্দ বোধ করেন?
আবু হেনা রনি: আমি আসলে যে কোনো কাজেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি যেখানে একটু হাসি, একটু মানবিকতা আছে। সিরিয়াস চরিত্রেও আমি হাসির একটা হালকা রং দিতে ভালোবাসি। উপস্থাপনার ক্ষেত্রে, লাইভ শো বা দর্শকের সঙ্গে ইন্টারঅ্যাকশন যেখানে থাকে সেখানেই আমি সবচেয়ে প্রাণবন্ত থাকি।
বৈশাখী অনলাইন: কমেডির মাধ্যমে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করা বা বার্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে আপনি কতটা সফল বলে মনে করেন?
আবু হেনা রনি: আমি চেষ্টা করি যেন হাসির আড়ালে একটা ভাবনার খোরাক থাকে। মানুষ হাসতে হাসতে যদি একটু ভাবতে শেখে সেটাই আমার সাফল্য। অনেকে এসে বলে, ‘আপনার কথা শুনে মনটা ভালো হয়ে গেছে’ এই কথাটাই সবচেয়ে বড় পুরস্কার।
বৈশাখী অনলাইন: সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়বস্তু নিয়ে কৌতুক পরিবেশনের ক্ষেত্রে আপনি কি কোনো ধরনের চাপ অনুভব করেন?
আবু হেনা রনি: চাপ তো অবশ্যই থাকে, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি হাসি যদি সম্মানজনক হয়, তাতে কারও ক্ষতি হয় না। আমি সবসময় ব্যালান্স রাখার চেষ্টা করি কাউকে আঘাত না দিয়ে সত্যটা বলা যায়, হাসিয়েও বলা যায়।
বৈশাখী অনলাইন: একজন শিল্পী হিসেবে ‘হাসতে ভুলে যাওয়া মানুষ’- এই উক্তিটি আপনার কাছে কতটা গুরুত্ব বহন করে?
আবু হেনা রনি: এই উক্তিটা আমার জন্য খুব ব্যক্তিগত। কারণ আমরা সবাই ব্যস্ততা, দুঃশ্চিন্তায় এতটা ডুবে যাই যে হাসিটা ভুলে যাই। আমি চাই, মানুষ আবার হাসতে শিখুক নিজেকে নিয়ে, জীবনের ভুল নিয়ে, বাস্তবতা নিয়েও। হাসিটা ফিরিয়ে আনা এটাই আমার কাজ, আমার দায়িত্ব।
বৈশাখী অনলাইন: আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আবু হেনা রনি: বৈশাখী অনলাইনকেও ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন