
নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনকুবের ইলন মাস্ক। তার দলের নাম ‘আমেরিকা পার্টি’। তবে মাস্কের নতুন এই দল গঠনের পদক্ষেপকে ‘হাস্যকর’ বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ৭ জুলাই সোমবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সাবেক ঘনিষ্ঠ মিত্র ইলন মাস্কের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগকে ‘উদ্ধত’ এবং ‘বোকামি’ বলে মন্তব্য করেছেন।
রোববার ‘এয়ার ফোর্স ওয়ানে’ ওঠার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘তৃতীয় কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করাটা একেবারেই হাস্যকর। আমেরিকায় দুই-দলের যে রাজনৈতিক কাঠামো, তা বহু বছর ধরেই আছে। তৃতীয় দল আনার চেষ্টা শুধু বিভ্রান্তি তৈরি করবে।
সম্প্রতি মাস্ক ঘোষণা দেন, তিনি ‘আমেরিকা পার্টি’ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করছেন, যার লক্ষ্য হবে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট, এই দুই প্রথাগত দলের বাইরে বিকল্প রাজনীতি গড়ে তোলা।
একসময় ট্রাম্প ও মাস্ক ছিলেন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মিত্র। ট্রাম্প প্রশাসনে মাস্ককে ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি’ (ডিওজিই)-এর প্রধান করা হয়েছিল, যার কাজ ছিল সরকারি ব্যয় কমানো। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহে তাদের সম্পর্কে ভাঙন ধরে এবং মাস্ক ট্রাম্পের বাজেট পরিকল্পনা ও নীতির প্রকাশ্য সমালোচনা করেন।
রোববার ট্রাম্প তার নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ লেখেন, ‘দুঃখজনকভাবে ইলন মাস্ক এখন যেন রেললাইনের বাইরে চলে যাওয়া একটি ট্রেন দুর্ঘটনার মতো, পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছেন। ‘
ট্রাম্প মাস্কের প্রস্তাবিত ‘ইলেকট্রিক ভেহিকল (ইভি) বাধ্যতামূলক নীতি’ নিয়েও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, এই পরিকল্পনা অনুযায়ী সকলকে খুব অল্প সময়ের মধ্যে বৈদ্যুতিক গাড়ি কিনতে বাধ্য করা হতো। ট্রাম্প সম্প্রতি একটি নতুন কর ও ব্যয় পরিকল্পনায় সই করেছেন, যেখানে ইলেকট্রিক গাড়ির ওপর কর-ছাড় বাতিল করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “আমি প্রথম থেকেই মাস্কের এই বৈদ্যুতিক গাড়ি বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাবের বিরোধিতা করে এসেছি। নতুন আইনে মানুষ এখন নিজের পছন্দমতো গ্যাসচালিত, হাইব্রিড বা ভবিষ্যতের প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমন গাড়ি কিনতে পারবেন, ইভি বাধ্যতামূলক নয়।
এদিকে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দেয়ার একদিন পর ইলন মাস্ককে রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে বলেছেন মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট। তিনি বলেন, মাস্কের বরং নিজের কোম্পানিগুলো পরিচালনায় মনোযোগ দেওয়া উচিত। রোববার সিএনএনের ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ অনুষ্ঠানে স্কট বেসেন্ট বলেন, মাস্কের কোম্পানিগুলোর (টেসলা ও স্পেসএক্স) পরিচালনা পর্ষদ সম্ভবত চাইবে, তিনি যেন রাজনীতি থেকে দূরে থাকেন।
বেসেন্ট আরও বলেন, ‘আমার ধারণা, পরিচালনা পর্ষদগুলো মাস্কের (রাজনৈতিক দল গঠনের) ওই ঘোষণা পছন্দ করেনি। রাজনীতি নয়, বরং ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে মনোযোগ দিতে পর্ষদ মাস্ককে উৎসাহিত করবে।’বেসেন্ট বলেন, মাস্কের নেতৃত্বে থাকা সরকারি দক্ষতা বিভাগ (ডিওজিই) ভোটারদের কাছে জনপ্রিয়তা পেলেও মাস্ক নিজে ততটা জনপ্রিয় নন।
বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আজোরিয়া পার্টনার্স মাস্কের বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি টেসলার সঙ্গে নতুন একটি যৌথ তহবিল চালু করার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু মাস্কের রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণার পর তারা এ উদ্যোগ স্থগিত করেছে। কারণ, নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা টেসলার সিইও হিসেবে মাস্কের পূর্ণকালীন দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে।
আজোরিয়ার সিইও জেমস ফিশব্যাক বলেছেন, মাস্কের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং কোম্পানির পরিচালনায় তার দায়িত্বের মধ্যে সামঞ্জস্য আছে কি না তা পরিচালনা পর্ষদকে দ্রুত যাচাই করতে হবে।
মাস্কের ভাষ্য, যুক্তরাষ্ট্রে যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, সেটাকে চ্যালেঞ্জ করতেই নতুন দল গঠন করেছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দল গঠনের ঘোষণা দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘যখন অপচয় ও দুর্নীতির মাধ্যমে আমাদের দেশকে দেউলিয়া করার কথা আসে, তখন আমরা গণতন্ত্র নয়, বরং একদলীয় ব্যবস্থার মধ্যে বাস করছি। আপনাদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আজ আমেরিকা পার্টি গঠন করা হলো।’
দল ঘোষণার এক দিন আগে শুক্রবার এক্সে একটি জরিপ চালিয়েছিলেন ইলন মাস্ক। দিনটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস। ওই জরিপে মাস্ক অনুসারীদের কাছে জানতে চান, দুই দলের (কেউ কেউ বলবেন ইউনিপার্টি) ব্যবস্থা থেকে তাঁরা স্বাধীনতা চান কি না? দুই দল বলতে রিপাবলিকান পার্টি ও ডেমোক্রেটিক পার্টিকে বুঝিয়েছেন তিনি। প্রায় দুই শতাব্দী ধরে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে আধিপত্য ধরে রেখেছে দল দুটি।
এখন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিদলীয় এই ব্যবস্থার বিরোধিতা করলেও ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছিলেন মাস্ক। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে বিপুল অর্থ দিয়েছিলেন তিনি। নির্বাচিত হওয়ার পর মাস্ককে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দক্ষতা বিভাগের (ডিওজিই) দায়িত্ব দেন ট্রাম্প। পরে সেই দায়িত্ব থেকে সরে যান তিনি। এর পর থেকে ক্রমেই দুজনের সম্পর্ক তিক্ত হয়েছে।
মন্তব্য করুন