
গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনীর একের পর এক হামলায় পরিস্থিতি দিন দিন আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। সর্বশেষ চিকিৎসা নিতে আসা শিশুদের ওপর হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে অন্তত ১০ জন শিশুকে হত্যা করেছে দখলদার বাহিনী। বৃহস্পতিবার সকালে মধ্য গাজার দেইর আল-বালায় সংঘটিত এই হামলায় পুরো অঞ্চল শোকস্তব্ধ হয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার সকালে, ফিলিস্তিনের দেইর আল-বালা শহরে একটি মেডিকেল পয়েন্টে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ মানুষ-বিশেষ করে শিশু ও পরিবারগুলো-চিকিৎসা ও পুষ্টি সহায়তার অপেক্ষায় ছিল। ঠিক সেই সময় ইসরাইলি বাহিনী হামলা চালায়। এই হামলায় নিহত হয় অন্তত ১৫ জন, যাদের মধ্যে ১০ জন শিশু। এমন সময় এই ঘটনা ঘটে, যখন আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীরা গাজায় যুদ্ধবিরতির কাছাকাছি পৌঁছানোর কথা বলছিলেন।
মেডিকেল সূত্রে জানা গেছে, দেইর আল-বালার ‘প্রজেক্ট হোপ’ পরিচালিত একটি চিকিৎসাকেন্দ্রের বাইরে লাইনে দাঁড়ানো মানুষ হামলার শিকার হন। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক রাবিহ তোরবে বলেন, এই হামলায় নিরীহ পরিবার ও শিশুদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের চরম লঙ্ঘন। হামলার পর নিরাপত্তার কারণে ক্লিনিকের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ আবু উহদা জানান, হামলার পর আমি দেখতে পাই, এক মা তার সন্তানকে জড়িয়ে রেখেছেন, কিন্তু তারা দুজনেই মৃত অবস্থায় মাটিতে পড়ে ছিলেন। তাঁর চোখের সামনে এই দৃশ্য ঘটেছে বলে জানান তিনি।
ইসরাইলি বাহিনী দাবি করেছে, তারা হামাসের সদস্যদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে, যারা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায় জড়িত ছিল। তারা স্বীকার করে, হামলায় নিরপরাধ ব্যক্তিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং ঘটনাটি তদন্তাধীন ।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি হামলায় গাজা উপত্যকায় ৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার পুরো অঞ্চলে নিহত হয়েছেন মোট ৮২ জন। হামলার একই দিনে হামাস যুদ্ধবিরতির চুক্তির বিষয়ে সম্মতি জানায় এবং ১০ বন্দি মুক্তির প্রস্তাব দেয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একে ‘চুক্তির জন্য ভালো সুযোগ’ বলে মন্তব্য করেন।
তবে মধ্যস্থতাকারী কাতার জানায়, চুক্তিতে এখনও কিছু জটিলতা রয়েছে। ইসরাইল চায় যুদ্ধবিরতির পর আবারও সামরিক অভিযান চালানোর অনুমতি, আর হামাস চায় নিশ্চয়তা-যে যুদ্ধবিরতির পর হামলা আবার শুরু হবে না।
ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানান, যুদ্ধ শেষ করতে হলে হামাসকে অবশ্যই অস্ত্র ত্যাগ করতে হবে। তিনি বলেন, ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হলে স্থায়ী সমাধান নিয়ে আলোচনা সম্ভব। তবে আগের যুদ্ধবিরতিগুলোর মতো এবারও ইসরাইল আগাম হামলা শুরু করলে পরিস্থিতি আবারও অচল হতে পারে।
এদিকে গাজার দক্ষিণে খান ইউনিস শহরের শরণার্থী শিবিরের আশেপাশে ইসরাইলি ট্যাংক ও বুলডোজার মোতায়েন করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, ট্যাংক থেকে গুলি ও টিয়ার গ্যাস ছোড়া হচ্ছে এবং মানুষ পালাতে শুরু করেছে। নাসের হাসপাতালের কর্মকর্তা বলেন, আহতদের ঢলে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। একজন স্বাস্থ্যকর্মী জানান, হাসপাতালের চারপাশে ইসরাইলি সামরিক যান ঘোরাফেরা করছে, যা চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত করছে।
মন্তব্য করুন