
এবার রাশিয়ার হয়ে কাজ করা দুই গুপ্তচরকে হত্যা করেছে ইউক্রেন। গত রোববার এমন দাবি করেছে তারা। এর আগে গত বৃহস্পতিবার বন্দুকধারীদের গুলিতে ইউক্রেনের এক শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা নিহত হন।ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থা এসবিইউর প্রধান ভাসিল মালিউক এক ভিডিও বার্তায় বলেন, রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবির হয়ে কাজ করা দুই গুপ্তচরকে শনাক্ত করার পর গতকাল সকালে তাঁদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করা হয়। তখন তাঁরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তাঁদের হত্যা করা হয়।
বৃহস্পতিবার কিয়েভের একটি পার্কিং লটে ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা কর্নেল ইভান ভোরোনিচকে দিনের আলোয় গুলি করে হত্যার পরপরই দুই রুশ গুপ্তচরকে হত্যার ঘটনা ঘটল। এক অজ্ঞাত হামলাকারী ভোরোনিচকে কয়েকবার কাছ থেকে গুলি করে পালিয়ে যান।
এক বিবৃতিতে ইউক্রেনের পুলিশ বলেছে, নিহত দুই গুপ্তচর ‘একটি ভিন দেশের নাগরিক’। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি। মস্কোর পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
১০ জুলাইয়ের ওই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজের সত্যতা যাচাই করেছে রয়টার্স। ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় সময় সকাল ৯টার কিছুক্ষণ পর কিয়েভের দক্ষিণ হোলোসিভস্কি এলাকার একটি ভবন থেকে এক ব্যক্তি বের হচ্ছেন। ঠিক সেই মুহূর্তে আরেক ব্যক্তি দ্রুতগতিতে তাঁর দিকে দৌড়ে আসেন।
ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থা এসবিইউ গতকাল বলেছে, কর্নেল ইভান ভোরোনিচকে হামলার আগে ওই সন্দেহভাজন গুপ্তচরেরা তাঁর গতিবিধির ওপর নজর রেখেছিলেন।
সংস্থাটি আরও বলেছে, ভোরোনিচকে হত্যার পর অভিযুক্ত ব্যক্তিরা আত্মগোপনের চেষ্টা করেছিলেন। তবে পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে তদন্ত চালিয়ে তাঁদের অবস্থান শনাক্ত করা হয়।
এসবিইউ মূলত অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং অন্য দেশের গুপ্তচরদের তৎপরতা ঠেকানোর কাজ করে। সংস্থাটির কার্যক্রম অনেকটা যুক্তরাজ্যের এমআই৫-এর মতো। তবে ২০২২ সালে মস্কোর পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে সংস্থাটি রাশিয়ার ভেতরে নাশকতা ও গুপ্তহত্যায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থার অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো বিবিসিকে বলেছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে উচ্চপদস্থ রুশ জেনারেল ইগর কিরিলভকে হত্যার পেছনে এসবিইউ দায়ী।
গত এপ্রিলে মস্কোতে একটি গাড়ি বোমা হামলায় জেনারেল ইয়ারোস্লাভ মোস্কালিক নিহত হন। এ হত্যাকাণ্ডের জন্য কিয়েভকে দায়ী করেছে ক্রেমলিন। তবে ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থা কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এসব হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেনি। ইউক্রেনে রাশিয়ার রেকর্ড মাত্রায় হামলার পর এসব প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
গত মঙ্গলবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেন এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় রুশ বিমান হামলার মুখোমুখি হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, ইউক্রেনে জুন মাসে গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক বেসামরিক প্রাণহানি ঘটেছে।
যুদ্ধক্ষেত্রগুলোতে এখনো লড়াই চলছে। রুশ সেনারা পূর্ব ইউক্রেনে ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছেন। ইউক্রেনের বাহিনী গত গ্রীষ্মে হঠাৎ হামলা চালিয়ে কুরস্ক অঞ্চলের যেসব এলাকা দখল করেছিল, সেগুলোর বেশির ভাগই আবার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে মস্কো।
তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলমান যুদ্ধের অবসানে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তবে তাতে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
মন্তব্য করুন