
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনার সম্ভাবনা জোরালো হয়ে ওঠা সত্ত্বেও সংঘর্ষ চলছেই। আজ রোববার চতুর্থ দিনের মতো পাল্টাপাল্টি গোলা হামলার ঘটনা ঘটেছে।এএফপির সংবাদকর্মী ও কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ তথ্য দিয়েছে। কম্বোডিয়ার সামরাং শহরে থাকা এএফপির সাংবাদিকেরা ভোর থেকে নিয়মিত গোলার আওয়াজ শুনেছেন।
সংঘর্ষস্থল থেকে শহরটির অবস্থান প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে। কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্রও বলেছেন, ভোর ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে দুটি বিরোধপূর্ণ মন্দিরের কাছে সংঘর্ষ শুরু হয়। গতকাল শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের নেতারা তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছেন।
এর আগে গতকাল শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের নেতারা তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছেন।ট্রাম্পের এ প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে আজ কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত বলেছেন, থাইল্যান্ডের সঙ্গে চলমান সীমান্ত সংঘাত থামাতে তাঁর দেশ যুদ্ধবিরতির আলোচনায় আগ্রহী। হুন মানেত আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে তাঁর দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কথা বলবেন এবং থাই সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করবেন। তবে তিনি সতর্ক করে দেন, ব্যাংকক যেন কোনো চুক্তি ভঙ্গ না করে।
গতকাল শনিবার নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প বলেন, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে চলমান সংঘাত থামাতে দেশ দুটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। এদিন স্কটল্যান্ড সফরে ছিলেন ট্রাম্প। ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লেখেন, ‘থাইল্যান্ডের সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে এই মাত্র কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বললাম।’ পরে আরেকটি পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লেখেন, ‘এই মাত্র থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হলো। এটি খুবই ভালো একটি আলাপচারিতা ছিল। কম্বোডিয়ার মতো থাইল্যান্ডও দ্রুত যুদ্ধবিরতি চায়।
সীমান্ত নিয়ে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার বিরোধ শত বছরের বেশি পুরোনো। গত মে মাসে এ নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার পাল্টাপাল্টি হামলা শুরু করে দুই দেশ। শনিবার পর্যন্ত চলমান সংঘাতে দুই দেশের অন্তত ৩২ জন নিহত হয়েছেন। সীমান্ত এলাকা থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন দুই দেশের ১ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ।
ওই পোস্টে ট্রাম্প আরও লেখেন, ‘আমি (থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর) এই বার্তা আবার কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি। দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলার পর যুদ্ধবিরতি, শান্তি ও সমৃদ্ধি স্বাভাবিক বলেই মনে হচ্ছে। শিগগিরই তা আমরা দেখতে পাব।’ লড়াই না থামলে দুই দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তির অগ্রগতি হবে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচাইয়াচাই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে তিনি বলেন, থাইল্যান্ড ‘নীতিগতভাবে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত। তবে তারা ‘কম্বোডিয়ার পক্ষ থেকে আন্তরিক মনোভাব দেখতে চায়’।
সীমান্ত নিয়ে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার বিরোধ শত বছরের বেশি পুরোনো। গত মে মাসে এ নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার পাল্টাপাল্টি হামলা শুরু করে দুই দেশ। শনিবার পর্যন্ত চলমান সংঘাতে দুই দেশের অন্তত ৩২ জন নিহত হয়েছেন। সীমান্ত এলাকা থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন দুই দেশের ১ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ। থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া সংঘাত নিয়ে শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। সেখানে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান জাতিসংঘে কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূত চেয়া কেও।
এদিকে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে মধ্যস্ততা করায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া। রোববার এক প্রতিবেদনে একথা জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি। দুই দেশই চলমান সংঘর্ষ ও প্রাণহানি নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উদ্বেগ এবং প্রচেষ্টার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। কম্বোডিয়া যুদ্ধবিরতির জন্য তার অনুরোধ এরইমধ্যে গ্রহণ করেছে। অন্যদিকে থাইল্যান্ড দুই দেশের মধ্যে সংলাপের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের আহ্বানের পরও গত রাতভর সীমান্তে গোলাগুলি অব্যাহত ছিল।
ট্রাম্প শনিবার তার সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে বলেন, তিনি স্কটল্যান্ড সফরের সময়ই দুই নেতার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং সাফ জানিয়ে দেন, সীমান্ত সংঘর্ষ না থামলে যুক্তরাষ্ট্র কোনো বাণিজ্যচুক্তিতে যাবে না।ট্রাম্পের সাথে ফোনালাপে থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীদের প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক। তারপরও তাদের কেউই এখন পর্যন্ত তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেনি। কম্বোডিয়া এরমধ্যেই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিল। তাদের সামরিক বাহিনী থাইল্যান্ডের তুলনায় দুর্বল।
ফোনালাপের পর কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত বলেন ‘আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে স্পষ্ট করে দিয়েছি যে কম্বোডিয়া দুই সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে তাৎক্ষণিক এবং নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে একমত। তিনি আরো বলেন, ‘ট্রাম্পের মধ্যস্থতা অনেক সেনা এবং বেসামরিক নাগরিকের জীবন রক্ষায় সত্যিই সাহায্য করবে।
অন্যদিকে, থাইল্যান্ড বলেছে যে তারা যুদ্ধবিরতি বিবেচনা করতে ইচ্ছুক। থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে তার উদ্বেগের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন থাইল্যান্ড নীতিগতভাবে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত। তবে, থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার পক্ষ থেকে আন্তরিকতা দেখতে চায়।
শনিবার সকালেও সংঘর্ষ হয়েছে থাইল্যান্ডের ত্রাট ও কম্বোডিয়ার পুরসাত প্রদেশে, যা আগের সংঘর্ষস্থল থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে। নতুন করে সীমান্তে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগ বাড়ছে। উভয় দেশই একে অপরকে আগ্রাসনের জন্য দায়ী করছে। থাইল্যান্ড বলছে, মে মাসে এক কম্বোডিয়ান সৈন্য নিহত হওয়ার পর থেকেই উত্তেজনা বেড়েছে। থাই সেনাবাহিনীর দাবি, সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত তাদের সাত সেনা ও ১৩ বেসামরিক নিহত হয়েছে। কম্বোডিয়া বলছে, তাদের প্রাণহানির সংখ্যা ১৩, যার মধ্যে পাঁচজন সেনা।
মন্তব্য করুন