
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই কাতারে ইসরাইলি হামলাকে অপরাধমূলক, চরম বিপজ্জনক ও আন্তর্জাতিক আইনের নগ্ন লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, এ ধরনের হামলা কাতারের সার্বভৌমত্বের পাশাপাশি জাতিসংঘ সনদেরও সরাসরি লঙ্ঘন।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় টেলিভিশনে দেয়া বক্তব্যে বাঘাই বলেন, এই চরম বিপজ্জনক ও অপরাধমূলক পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সকল নিয়ম-কানুনের নগ্ন লঙ্ঘন। এটি কাতারের জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতারও মারাত্মক লঙ্ঘন। তিনি আরও সতর্ক করেন, ফিলিস্তিন ও পশ্চিম এশিয়ায় জায়নিস্ট শাসনের অপরাধের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিষ্ক্রিয়তা পুরো অঞ্চলসহ বিশ্বকে হুমকির মুখে ফেলছে।অন্যদিকে, ইসরাইল দাবি করেছে, তাদের যুদ্ধবিমান দোহায় হামাস নেতৃত্বকে লক্ষ্য করে ‘বিমান হামলা’ চালিয়েছে। ইসরাইলি গণমাধ্যম ‘কান’ জানিয়েছে, দোহায় এ অভিযান পরিচালনায় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্য সহযোগিতা ছিল।
এদিকে, এক সিনিয়র কাতারি কর্মকর্তা তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, হামাসের নেতাদের ওপর কাতারের মাটিতে চালানো ইসরাইলি হামলা এমন সময় ঘটল, যখন দোহা যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের মধ্যস্থতায় তৈরি বন্দি বিনিময় চুক্তির খসড়া অগ্রসর করছিল।
ইসরাইলি হামলা আন্তর্জাতিক নীতির নগ্ন লঙ্ঘন: কাতার , কাতারের ওপর ইসরাইলি আক্রমণের পর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো এককভাবে এবং সমন্বিতভাবে নিন্দা প্রকাশ করেছে। কাতার এটিকে ‘কপট’ হামলা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে, আর সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান ও সৌদি আরবও কাতারের প্রতি সম্পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করেছে।
কাতার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারী বলেন, ‘হামলা কয়েকজন হামাস রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্যদের বসবাসের ভবনকে লক্ষ্য করেছে’। তিনি এটিকে ‘সমস্ত আন্তর্জাতিক আইন ও নীতির নগ্ন লঙ্ঘন এবং কাতারি নাগরিক ও দোহায় বসবাসকারীদের নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
আনসারী আরও জানান, কাতার এই অবিবেচক ইসরাইলি আচরণ, চলমান আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিঘ্ন এবং তার সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তাকে লক্ষ্য করে যে কোনো পদক্ষেপ সহ্য করবে না।’
সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ বিন জায়েদ হামলার পর ক্ষুদ্র মন্তব্যে টুইট করেছেন, ‘প্রিয় কাতারের সঙ্গে সম্পূর্ণ সংহতি।’জর্ডানীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আইমান সাফাদি হামলাকে তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, এটি আন্তর্জাতিক আইনের নগ্ন লঙ্ঘন, কাতারি জনগণ ও দোহায় বসবাসকারীদের নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলা বর্বর ইসরাইলি আগ্রাসনের অংশ।সাফাদি বলেন, ‘যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষত নিরাপত্তা পরিষদ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয়, ইসরাইল তার আগ্রাসন, বর্বর যুদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের পথে অব্যাহত থাকবে, যা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
সৌদি আরবের কার্যত শাসক, ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান কাতারের আমির শেখ তামিম আল থানিকে ফোন করে ইসরাইলের হামলা নিন্দা করেছেন। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ক্রাউন প্রিন্স কাতারের ‘পূর্ণ সমর্থন’ এবং ‘কাতার রাষ্ট্রের ওপর নগ্ন ইসরাইলি হামলার তীব্র নিন্দা’ প্রকাশ করেছেন। সৌদি আরব বলেছে, তারা ‘কাতারের নিরাপত্তা রক্ষা এবং সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণের জন্য নেওয়া পদক্ষেপগুলোতে সমর্থন দিতে সব সক্ষমতা মোতায়েন করছে।’
মন্তব্য করুন