
এশিয়ার দেশগুলোতে যেন বিক্ষোভ আর আন্দোলনের হাওয়া লেগেছে। সম্প্রতি তরুণদের বিক্ষোভে নেপাল থেকে শুরু করে ইন্দোনেশিয়াসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সরকারে ভিত নড়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবার বিক্ষোভে উত্তাল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র পূর্ব তিমুর।
দেশটির ৬৫ জন সংসদ সদস্যের প্রত্যেকের জন্য টয়োটা প্রাডো এসইউভি কেনার পরিকল্পনার বিরোধিতা করে জাতীয় সংসদের কাছের সড়কে দুই হাজারের বেশি বিক্ষোভকারী জড়ো হয়। বিক্ষোভকারীদের বেশির ভাগই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানায় পূর্ব তিমুরে সংসদ সদস্যদের বিনামূল্যে দেওয়ার জন্য সরকারের গাড়ি কেনার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আজ মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে।
রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছে আন্দোলনকারীরা। তারা সংসদ ভবনের কাছে একটি সরকারি গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করেছে।
এদিকে তীব্র বিক্ষোভের মুখে পূর্ব তিমুরের সরকার এমপিদের বিনামূল্যে গাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় তারা সরকারি একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে। এই বিক্ষোভের কয়েক ঘণ্টা পর দেশটির সরকার এমপিদের জন্য গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে।
সরকার গাড়ি কেনার পরিকল্পনা বাতিল করার পরও বুধবার দেশটির রাজধানী দিলিতে অনেকে বিক্ষোভ করেছে। বিবিসিকে এক বিক্ষোভকারী বলেছেন, বুধবার প্রায় ২ হাজার মানুষ রাজধানী দিলির রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন। প্রাথমিকভাবে এমপিদের জন্য সরকারের গাড়ি কেনার পরিকল্পনা ঘিরে আন্দোলন শুরু হলেও পরে বিক্ষোভকারীরা আরও বিভিন্ন ধরনের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন। তাদের এই বিক্ষোভ বর্তমানে দেশটির সাবেক এমপিদের আজীবন পেনশনের সুবিধা বাতিলের দাবিতে রূপ নিয়েছে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বিবিসিকে বলেছেন, তিনি তার বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কাঁদানে গ্যাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, জনগণ কষ্টে আছে অথচ এমপিরা বিলাসবহুল গাড়ি কিনতে চান।
ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, পূর্ব তিমুরের এমপিদের বার্ষিক মূল বেতন ৩৬ হাজার মার্কিন ডলার; যা দেশটির গড় আয়ের (প্রায় ৩ হাজার ডলার) চেয়ে ১০ গুণ বেশি।
তবে দেশটিতে এমপিদের জন্য গাড়ি কেনার পরিকল্পনাটি নতুন নয়। গত কয়েক বছর ধরে দেশটিতে এমপিদের জন্য সরকারি গাড়ি কেনার পরিকল্পনার বিষয়ে নিয়মিত বিক্ষোভ করছেন লোকজন। ২০০৮ সালে দেশটির এমপিদের জন্য ১০ লাখ ডলার ব্যয়ে গাড়ি কেনার এক পরিকল্পনার প্রতিবাদ করায় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।
বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া সিজারিও সিজার বলেন, ‘‘মানুষ অনেক সমস্যার মধ্যে আছেন। শিক্ষা, পানি, স্যানিটেশন-কোনও কিছুতেই যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা নেই। অথচ এমপিরা নিজেদের স্বার্থে আইন বানাচ্ছে। আমরা এটাকে অন্যায্য মনে করি।তিনি বলেন, এমপিদের কাছে বর্তমানে সরকারের দেওয়া গাড়ি রয়েছে এবং সেগুলো এখনও ভালো অবস্থায় আছে। তারপরও তাদের নতুন টয়োটা প্রাডো এসইউভি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, পূর্ব তিমুরের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশেরও বেশির বয়স ৩৫ বছরের নিচে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম দরিদ্র রাষ্ট্র হলেও পূর্ব তিমুরকে তুলনামূলকভাবে গণতন্ত্রের উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।দেশটির সাবেক মন্ত্রী ও ইনস্টিটিউট অব পলিটিকস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের প্রেসিডেন্ট ফিদেলিস লেইটে মাগালহায়েস বিবিসিকে বলেন, এখানে মানুষ জানে যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে বিক্ষোভ করাটা স্বাভাবিক। দিলিতে সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই চলছে।
মন্তব্য করুন