
দৈনন্দিন জীবনের নানান অনিয়মে ঘরে ঘরে ডায়াবিটিসের প্রকোপ বাড়ছে। মাঝবয়স থেকেই এই রোগের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলছে। অনিয়মিত খাওয়াদাওয়া, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, অত্যধিক মানসিক চাপের কারণে বয়স ৩০ -এর কোঠা পেরোতে না পেরোতেই ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। ডায়াবিটিসের সূত্র ধরে শরীরে বাসা বাঁধে কোলেস্টেরল, থাইরয়েড, উচ্চ রক্তচাপের মতো হাজারটা রোগ।
ডায়াবিটিস এমন একটা শারীরিক সমস্যা যেটা নিয়ন্ত্রন সহজ মনে করলে সহজ, আবার কঠিন মনে করলে কঠিন। খাওয়াদাওয়ায় নিয়ম মেনে চলার পাশাপাশি রোজের জীবনে কিছু কিছু নিয়ম মেনে চললেই হলো। সেই সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ তো রয়েছেই। রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়লে খাওয়াদাওয়ায় চলে আসে একাধিক বিধি-নিষেধ। তখন ইচ্ছেমতো খাবার খাওয়ার সুযোগ থাকে না। যে কোনও উপায়েই হোক ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
মেথির বীজের উকারীতা
ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে ভরসা রাখতে পারেন মেথির বীজে। মেথিতে থাকা দ্রবণীয় ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়। এটি সকালে খালি পেটে মেথি ভেজানো পানি পান করে বা মেথি চিবিয়ে খেয়ে সেবন করা যেতে পারে, যা হজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও সাহায্য করে। ডায়াবিটিস রোগীর জন্য মেথি তাই মহৌষধি।
কীভাবে ব্যবহার করবেন?
১) ১০ গ্রাম মেথি রাতে এক গ্লাস গ্লাস ভিজিয়ে রাখুন। সকালে ভাল করে ছেঁকে নিয়ে খালি পেটে খেয়ে নিন। ডায়াবেটিকদের জন্য এই অভ্যাস দারুণ উপকারী।
২) মেথি বেশ তেতো হয়, তাই অনেকেই এই পানি খেতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে মেথি ভিজিয়ে রেখে অঙ্কুর হয়ে গেলে সেটাও স্যালাডের মধ্যে দিয়ে খাওয়া যায়। নুন, লেবু, চাটমশলা দিয়ে খেলে ততটা তেতো লাগে না।
৩) মেথি শুকনো তাওয়ায় ভেজে রেখে দিন। রান্নাতে এই মশলার ব্যবহার করুন বেশি মাত্রায়।
৪) এ ছাড়া মেথি চা-ও খেতে পারেন। কেটলিতে পানি গরম করতে বসান। ফুটে উঠলে তাতে এক চামচ মেথি গুঁড়ো দিন। এর সঙ্গে মেশাতে পারেন মধু এবং তুলসী পাতা। সব উপকরণ একসঙ্গে দিয়ে মিনিট পাঁচেক ফুটিয়ে নিন। ছেঁকে নিয়ে সামান্য ঠান্ডা করে চুমুক দিন মেথি চায়ে। ডায়াবিটিস থাকবে হাতের মুঠোয়।
মেথি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কীভাবে কাজ করে?
ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়: মেথির বীজে থাকা সহজে দ্রবণীয় ফাইবার পরিপাকতন্ত্রে খাবারের চলাচল সহজ করে এবং রক্তে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে দেয়, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়: মেথি রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে বিস্ময়কর শক্তি রাখে।
উপকারী উপাদানে ভরপুর: মেথিতে থায়ামিন, ফোলিক অ্যাসিড, রাইবোফ্ল্যাভিন, নিয়াসিন, পটাশিয়াম ও জিঙ্কের মতো উপকারী উপাদান রয়েছে, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: এতে থাকা জলধারক ফাইবার হজম ক্ষমতা বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয়।
হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো: মেথি হার্টের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।
ওজন নিয়ন্ত্রণ: মেথি বিপাকের হার বাড়িয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
তাই ঔষধ এর উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আমাদের স্বাস্থ্যসুরক্ষায় প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মেথির মতো উপকারি ভেষজ থাকা জরুরি।
মন্তব্য করুন